শুক্রবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা
বাজেট ২০২২-২৩

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বিশেষ কর্মসূচি

মূল্যস্ফীতির চাপ ৫.৫ শতাংশ রাখার টার্গেট

মানিক মুনতাসির

করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বিশেষ করে সব ধরনের জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দাম ইতিহাসের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। এর ফলে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে হু হু করে। এতে মূল্যস্ফীতির চাপও বাড়তে শুরু করেছে। আসছে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বিশেষ কিছু কর্মসূচি নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে অর্থবিভাগ।

সূত্র জানায়, সারা বছর ধান, চাল, আটা, ময়দা, চিনির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার নানা সহায়ক কর্মসূচি চালু রাখবে। এর মধ্যে চলমান ওএমএস কর্মসূচির আওতা আরও বাড়ানো হবে। ট্রাক সেলের আওতা ইতোমধ্যে বাড়ানো হয়েছে। টিসিবির মাধ্যমে ভর্র্তুকি মূল্যে জরুরি সরবরাহ করা হচ্ছে। এর কর্মসূচি এখন থেকে সারা বছরই চালু রাখা হবে। মৌসুমভেদে ধান, চাল সংগ্রহ অভিযান আরও জোরদার করা হবে। কৃষক যেন ন্যায্য মূল্য পায় তা নিশ্চিত করা হবে। সরকারি চাকুরেদের জন্য রেশনিং কর্মসূটির মতো বেসরকারি খাতের চাকুরেদের জন্যও এমন কর্মসূচি চালু করা হবে পর্যায়ক্রমে। ইতোমধ্যে পাইলট পদ্ধতির মাধ্যমে গার্মেন্ট শ্রমিকদের মধ্যে খাদ্যপণ্য রেশনিং চালু করা হবে যা ভবিষ্যতে আরও বড় আঙ্গিকে চালু করা হবে। অর্থবিভাগের কর্মকর্তারা জানান, আসন্ন বাজেটে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় এসব বিষয়ে বিশদ পরিকল্পনা তুলে ধরা হবে। টানা দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে আসা করোনা মহামারির আঘাতে সারা দেশের মানুষ এখন বেঁচে থাকার উপায় খুঁজছেন। অনেকে খরচ করছেন না প্রয়োজনের বাইরে। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষ এবং চাকরিজীবীদের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক পরিবারই খাবার তালিকা ছোট করে ফেলেছেন। কেউ কেউ বাসা বদলে উঠেছেন কম দামের বাসায়। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে আশঙ্কাজনকভাবে। এ অবস্থায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। রাশিয়া-ইউক্রেন চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে খাদ্য ও জ্বালানি পণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কার মধ্যে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট তৈরির কাজ চলছে। খাদ্যসহ ভোগ্য পণ্যের দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্য দিয়ে ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি ছয় শতাংশের কোটা ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে গত মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। জানা গেছে, দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি এবং ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায় চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষমাত্রা বাড়িয়ে ৫ দশমকি ৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হচ্ছে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের মূল বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। তবে, অর্থমন্ত্রণালয়ের এই প্রক্ষেপণের সঙ্গে একমত হতে পারছেন না অর্থনীতিবিদরা। দেশে-বিদেশে পণ্যের দাম বেড়েছে। তাই মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়াসহ অন্যান্য কারণেও বিদেশি পণ্যের দাম বাড়ছে। সেই সঙ্গে ডলারের দাম বাড়ায় দেশের বাজারে বিদেশি পণ্যের দাম আরও বাড়ছে। অর্থ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, করোনা সংকটের মধ্যে ভোগ্যপণ্যের দাম কমিয়ে আনার কৌশল নেওয়া হচ্ছে নতুন বাজেটে। ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে বাজারে ন্যায্য দাম নিশ্চিত করা হবে। এ ছাড়া স্বল্পআয়ের মানুষের স্বস্তি দিতে কম দামে নিত্যপণ্য সরবরাহের মতো চ্যালেঞ্জ নিচ্ছে সরকার। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে খাদ্যপণ্য আমদানি, উৎপাদনে সহায়ক শুল্ককর ও ভ্যাটনীতি অবলম্বন এবং ভর্তুকি মূল্যে বাজারে চাল, ডাল, ভোজ্যতেল ও পিঁয়াজের মতো পণ্য সরবরাহ অব্যাহত রাখা হবে। আশা করা হচ্ছে- চলমান সংকটের মধ্যেও জিনিসপত্রের দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে থাকবে। এদিকে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার এখনকার তুলনায় নতুন অর্থবছর বেশ কমে আসবে বলে মনে করছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। ফলে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, চলতি অর্থবছর শেষে দেশের মূল্যস্ফীতির হার সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে। মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সরকার বিশেষ গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করছে। অর্থবছরের প্রথমার্ধে সাধারণ মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা গত জুলাই মাসে ছিল ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ ও ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ছিল ৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ। বৈশ্বিক বাজারে খাদ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিজনিত কারণে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। আমরা চেষ্টা করছি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার। এ জন্য আসছে বাজেটে পণ্যমূল্য ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বিশেষ কর্মসূচি থাকবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর