শনিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

দেশি পর্যটনে নতুন মাত্রা

করোনাভীতি কাটিয়ে প্রস্তুত কক্সবাজার, কুয়াকাটা, রাঙামাটি

জিন্নাতুন নূর

দেশি পর্যটনে নতুন মাত্রা

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ভীতি কাটিয়ে ঘর থেকে বের হতে শুরু করেছে মানুষ। ভ্রমণপিপাসুরাও ঘরবন্দি থাকতে নারাজ। ইচ্ছা থাকলেও সময় স্বল্পতার কারণে মানুষ অনেক সময় ঘুরতে যেতে পারেন না। কিন্তু এবার ঈদে ভিন্ন চিত্র। সরকারি চাকরিজীবীরা এবার পাচ্ছেন ঈদের দীর্ঘ ছুটি। এ ছুটিকে কাজে লাগাতে দেশ-বিদেশে ভ্রমণের পরিকল্পনা রয়েছে অনেকের। আবার অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় অনেকে এরই মধ্যে দেশের বাইরে ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েছেন। পর্যটন সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন দেশীয় পর্যটন এ ঈদে নতুন মাত্রা পাবে। সামাজিক বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ায় এবার ঈদ মৌসুমে আবারও পুরনো চেহারার ফিরতে শুরু করেছে দেশের পর্যটন খাত। সব মিলিয়ে এরই মধ্যে জমে উঠেছে বিকাশমান খাতটি। সরকারি হিসাব বলছে, এ ঈদে দেশের বাইরে ঘুরতে যাবেন ৭ থেকে ৮ লাখ মানুষ। এর মধ্যে শুধু ভারতে যাওয়ার ভিসা নিয়েছেন ৫ লাখ মানুষ। ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রের এক কর্মকর্তা জানান, গত মাসের হিসাবে দেখা যায়, আবেদনকারীর ৭৫ শতাংশই পর্যটন ভিসা চেয়েছেন। ভারত ছাড়াও মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালদ্বীপ, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, দুবাই ও তুরস্কে ঈদের ছুটি কাটাতে আরও ৩ লাখ মানুষ ভিসা নিয়েছেন। এর সঙ্গে এবার অভ্যন্তরীণ পর্যটন খাতের অবস্থাও রমরমা। জানা যায়, কক্সবাজারের অধিকাংশ হোটেল-মোটেলের সিট বুকিং হয়ে গেছে। ঈদের পরদিন থেকে টানা তিন দিন পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ পর্যটক হোটেলে আগাম রুম বুকিং দিয়েছেন বলে কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যে জানা যায়। বুকিং ছাড়া আরও কয়েক লাখ পর্যটক এবারের ঈদের ছুটিতে সমুদ্রনগরীতে বেড়াতে যাচ্ছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। কক্সবাজারের পাঁচ তারকা মানের হোটেল ও রিসোর্টগুলোতে এরই মধ্যে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ রুম বুকিং হয়েছে। কক্সবাজার, সিলেটের মতো পর্যটন নগরীতে যাওয়ার জন্য চাপ বেড়েছে এয়ারলাইনসগুলোতেও। বিশেষ করে ঈদের আগে ও পরের দুই দিনের টিকিট বিক্রি শেষ। ইউএস বাংলা ও নভোএয়ারের রুটে ২ মে থেকে ৭ মে পর্যন্ত ৯০ শতাংশ টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসে ঈদে কক্সবাজারের টিকিট প্রায় সব বিক্রি হয়ে গেছে। কক্সবাজার ছাড়াও রাঙ্গামাটি, সিলেট, শ্রীমঙ্গল, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কুয়াকাটায় এবার ঈদে বিপুল পরিমাণ পর্যটকের ঢল নামবে বলে আশা করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। ঈদের ছুটিতে এরই মধ্যে এসব জায়গার হোটেল, মোটেল এবং গেস্ট হাউসে রুম পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সোয়েব-উর-রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশের মানুষের আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষ এখন দেশীয় বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রের পাশাপাশি দেশের বাইরেও ঘুরতে যাচ্ছেন। করোনা সংক্রমণ শুরুর প্রথমদিকে মানুষ দেশে কিংবা দেশের বাইরে কোথাও যেতে পারেনি। মাঝখানে কিছুটা জট খুললে আমরা দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে মানুষের ঢল নামতে দেখি। মানুষ ঘুরতে আগ্রহী কিন্তু পর্যটকরা কী পরিমাণ টাকা খরচ করে কী পরিমাণ সেবা পাচ্ছেন এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একজন যখন দেখেন যে কক্সবাজারে পরিবার নিয়ে ঘুরতে গেলে থাকা-খাওয়াসহ তার প্রায় অর্ধ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে আবার একই অর্থ ব্যয়ে পাশের দেশ ভারতের গ্যাংটক, সিকিমে গিয়ে ঘুরে আসা যায় তখন তিনি দেশের বাইরে যেতেই আগ্রহী হন। আমাদের পর্যটন খাতের সম্ভাবনা অপার কিন্তু এ সম্ভাবনাকে কীভাবে কাজে লাগানো যায় তা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা কাজ করেন না। ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব)-এর সভাপতি রাফিউজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এবার ঈদে আমাদের সদস্যরা ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, মিশর, দুবাই ও নেপালসহ বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের প্রচার চালিয়েছে। তবে ভারতে যে বিপুল সংখ্যক মানুষ যাচ্ছেন তারা সবই পর্যটক নন। এদের কেউ আত্মীয়ের কাছে যাচ্ছেন, আবার কেউ চিকিৎসা করাতে যাচ্ছেন। বর্তমানে আমরা দেশীয় পর্যটন খাতের বিকাশের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি আর দেশের পর্যটন খাতও এখন বেশ ভালো অবস্থায় আছে। দেশের রাজস্ব ধরে রাখতে আমরা দেশীয় পর্যটন খাতের বিকাশের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি।

সর্বশেষ খবর