শনিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

প্রাচীন কৃষ্ণচূড়ায় সেজেছে স্কুল ক্যাম্পাস

নড়াইল প্রতিনিধি

প্রাচীন কৃষ্ণচূড়ায় সেজেছে স্কুল ক্যাম্পাস

নয়নাভিরাম কৃষ্ণচূড়ার রাঙা ফুলের মায়ায় জড়িয়েছে ইতিহাস আর ঐতিহ্যের বিদ্যাপীঠ নড়াইলের কালিয়া উপজেলার চাঁচুড়ী পুরুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়। গ্রীষ্মের আকাশকে আবির রঙে রাঙিয়ে পুরো ক্যাম্পাস যেন কৃষ্ণচূড়ার লাল রঙে রেঙেছে। সূর্যের সবটুকু উত্তাপ যেন কেড়ে নিয়েছে টুকটুকে লাল এ কৃষ্ণচূড়া। দূর থেকে দেখলে মনে হয় গাছগুলোয় আগুন লেগেছে।

বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের হাতে গড়া শতবর্ষী এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রাণকেন্দ্র স্কুলের একাডেমিক ভবনের সামনে দণ্ডায়মান অনিন্দ্য সৌন্দর্যের আধার ডালপালা ছড়ানো আগুনরাঙা কৃষ্ণচূড়া দেখে মনে হয় এটি যেন তাঁরই রংতুলিতে আঁকা এক শৈল্পিক চিত্র। প্রাচীন কৃষ্ণচূড়া গাছটির শাখায় শাখায় রক্তবর্ণ ফুলের সমাহার। এ ছাড়া স্কুলের প্রধান ফটকের দুই পাশে প্রবেশপথে ছড়ানো কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম আভায় সৌন্দর্য বাড়িয়েছে বহুগুণ। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারী, পথচারী বা স্কুলের সম্মুখের সড়ক দিয়ে যাওয়ার পথে যে কোনো দর্শনার্থীরই হৃদয় কাড়ে নয়ন জুড়ানো কৃষ্ণচূড়া। মনের অজান্তেই মুখে অস্ফুট স্বরে বের হয়ে আসে- বাঃ কি মায়াবী জাল বিস্তার করেছে আকাশের পানে। গ্রীষ্মের দাবদাহে পিপাসার্ত ক্লান্ত পথিক কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে থমকে দাঁড়ায়, ভুলে যায় পিপাসা। এ যেন কৃষ্ণচূড়ার ক্যাম্পাস। জীবনের রুক্ষতা আর ভ্যাপসা গরমে ক্যাম্পাসের এ কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসে এক প্রশান্তির নিঃশ্বাস নিতে ছুটে আসেন দর্শনার্থীরা। কিছুক্ষণের জন্য হলেও মন হারিয়ে যায় প্রকৃতির মধ্যে। স্কুলের মূল ভবনের সামনে ও প্রধান ফটকের উভয় পাশে আগুনরাঙা ফুল প্রকৃতির সব রংকে ম্লান করে দিয়েছে। সকালের দিকে ক্যাম্পাসে এবং সড়কে কৃষ্ণচূড়ার ঝরে পড়া রক্তলাল পাপড়ি যেন পুষ্পশয্যা। আবার ক্যাম্পাস লাগোয়া উত্তর সীমানার পেছনের দিকেও গাছে গাছে ফুটেছে রক্তলাল কৃষ্ণচূড়া। এভাবে পুরো ক্যাম্পাস যেন কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্যে শোভা পেয়েছে। বৈশাখের শুরুতে ফুল ফুটতে শুরু করে এখন গাছগুলো জুড়ে লাল ফুলের সমারোহ, লাল রঙের ফুল ঢেকে দিয়েছে গাছের সবুজ পাতাগুলো। সবুজ পাতার মধ্যে লাল- এ যেন জীবন্ত এক নিসর্গ। কৃষ্ণচূড়ার ইংরেজি নাম ‘ফ্লেম ট্রি, বৈজ্ঞানিক নাম ‘ডেলোনিক্স রেজিয়া’। এটি ফ্যাবেসি পরিবারের অন্তর্গত একটি বৃক্ষ, যা গুলমোহর নামেও পরিচিত। কৃষ্ণচূড়া উদ্ভিদ উচ্চতায় ১২-১৪ মিটার হলেও শাখা-পল্লবে এটি বেশি অঞ্চলব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিবারের মতো এবারও রক্তিম কৃষ্ণচূড়ার তলায় বসে নিজেদের হাজারো গল্প বলা। শিক্ষার্থী খাদিজা বললেন, ‘প্রতি বছর ক্যাম্পাস রাঙিয়ে দেয় কৃষ্ণচূড়া। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি।’ দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাতুল ইসলাম বলে, ‘স্কুল ক্যাম্পাসে ঢুকতেই দেখা মেলে কৃষ্ণচূড়া ফুলের। রমজানের ছুটিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় যেতে পারছি না ক্যাম্পাসে। ফেসবুকে ক্যাম্পাসসহ কৃষ্ণচূড়ার ফুলের ছবি দেখে মনটা আনচান করছে।’ বন্ধ ক্যাম্পাসকেও রাঙিয়েছে কৃষ্ণচূড়া। বন্ধ ক্যাম্পাসে নেই জনমানব। ক্যাম্পাসের কৃষ্ণচূড়া চত্বরে বিকাল কিংবা সন্ধ্যা বা রাতে দেখা মেলে নতুন কিংবা পুরনো শিক্ষার্থী বা বন্ধুদের আড্ডা। কেউ একজন গান ধরে, সে গানের সঙ্গে সুর মেলায় অন্যরা। কবিতার আবৃত্তির মধ্যে ক্যাম্পাসের কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। মন মাতানো রঙিন এ সৌন্দর্যে চোখ ধাঁধানো মায়াময় টুকটুকে লাল কৃষ্ণচূড়ার ফুলে ফুলে যেমনি সেজেছে গ্রীষ্মের প্রকৃতি, তেমনি সবার মনেই জাগিয়েছে রক্তিম স্রোত। ছাত্র, শিক্ষক, কর্মচারী ও দর্শনার্থী সবার একটাই প্রত্যাশা- কৃষ্ণচূড়ার এ অপরূপ দৃষ্টিনন্দন দৃশ্যটি অমর হয়ে বেঁচে থাকুক এই চাঁচুড়ী পুরুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যুগের পর যুগ। আপন মায়ার চাদর আকাশে ছড়িয়ে মেলে ধরুক স্বপ্নময় নয়নাভিরাম কৃষ্ণচূড়ার নান্দনিক সৌন্দর্য। বেঁচে থাক এই শতবর্ষী স্কুল তার বুকে রক্তিম কৃষ্ণচূড়া ধারণ করে।

সর্বশেষ খবর