রবিবার, ১ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

দনবাসে অবিরাম গোলাবর্ষণ রুশ বাহিনীর

প্রতিদিন ডেস্ক

দনবাসে অবিরাম গোলাবর্ষণ রুশ বাহিনীর

রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে ইউক্রেনের সৈন্যরা। ইউক্রেন বলছে, দনবাস অঞ্চলে রুশ অগ্রাভিযানের আরও কয়েকটি চেষ্টা তারা ব্যর্থ করে দিয়েছে। সেখানে রণক্ষেত্র বরাবর রুশ বাহিনী তীব্র গোলাবর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে। খবর বিবিসির।

পূর্ব ইউক্রেনের লুহানস্কের গভর্নর বলেছেন, ওই অঞ্চলে কোনো বিরতি ছাড়াই রুশরা তাদের গোলাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে। তবে ইউক্রেনীয় বাহিনীর প্রতিরোধ তারা ভাঙতে পারেনি। গভর্নর সেরহি হাইডাই জানিয়েছেন, লড়াই চলছে যেসব এলাকায়, সেখান থেকে বেসামরিক মানুষদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। পাশের দুটি অঞ্চল দোনেৎস্ক এবং খারকিভেও রুশরা নতুন করে তীব্র আক্রমণ চালাচ্ছে। রাশিয়া দাবি করছে, তারা শত্রুপক্ষের চার শ’র বেশি টার্গেটের ওপর গোলা হামলা চালিয়েছে।

ব্রিটেনের সামরিক গোয়েন্দা সূত্রগুলোর মতে, রুশ বাহিনী এখনো সেখানে তীব্র প্রতিরোধের মুখোমুখি হচ্ছে। রাশিয়া দাবি করছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত ইউক্রেন থেকে ১০ লাখের বেশি মানুষ রাশিয়ায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, এদের মধ্যে এক লাখ ২০ হাজার বিদেশি নাগরিক এবং বিচ্ছিন্ন দুটি প্রজাতন্ত্র দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক থেকে উদ্ধার করে আনা মানুষও রয়েছে।

ইউক্রেন বারবার এরকম অভিযোগ করেছে যে, রাশিয়া জোর করে এসব মানুষকে নিয়ে গেছে এবং তাদের জিম্মি হিসেবে ব্যবহার করছে। ইউক্রেনের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী বিবিসিকে বলেছেন, রাশিয়া এর আগে যুদ্ধবন্দি বিনিময়ের জন্য এ বেসামরিক জিম্মিদের ব্যবহার করেছে।

এদিকে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, এক রাতেই ইউক্রেনের ৩৮৯ স্থান লক্ষ্য করে হামলা চালানোর দাবি করেছে রাশিয়া। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, ইউক্রেনীয় বাহিনী ও সামরিক অবস্থান লক্ষ্য করে দফায় দফায় হামলা চালানো হয়। ইউক্রেনের ৩৩টি কন্ট্রোল পয়েন্টেও হামলার দাবি করেছে মস্কো। ১৫টি অস্ত্র ও গোলাবারুদ ডিপো এবং চারটি সামরিক স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও রাশিয়ার এমন দাবির বিষয়ে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে সত্যতা নিশ্চিত করা হয়নি। ইউক্রেনের ডনবাসের লুহানস্ক, দোনেৎস্কে তীব্র লড়াই চলছে ইউক্রেনীয় ও রুশ যোদ্ধাদের মধ্যে। মারিউপোল ও খারকিভেও একই পরিস্থিতি। উভয়পক্ষের অব্যাহত লড়াইয়ে প্রাণহানি এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।

রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা ভেস্তে যেতে পারে- ইউক্রেন : রাশিয়ার ‘নৃশংসতার’ কারণে মস্কোর সঙ্গে চলমান শান্তি আলোচনা ভেস্তে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছে ইউক্রেন। রাশিয়ার বাহিনীগুলো ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ দখল করতে ব্যর্থ হওয়ার পর দেশটির পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলের দিকে মনোযোগ দিয়েছে। নয় সপ্তাহ ধরে চলা যুদ্ধে ইউক্রেনের বহু শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। কয়েক হাজার লোক নিহত ও ৫০ লাখেরও বেশি মানুষ দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে।

ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খেরসন পুরোপুরি ও পূর্বাঞ্চলীয় বন্দরনগরী মারিউপোলের অধিকাংশই দখল করে নিয়েছে মস্কোর বাহিনীগুলো। তারা মারিউপোলের বিশাল একটি ইস্পাত শিল্প কারখানার নিয়ন্ত্রণ এখনো নিতে পারেনি। সেখানে ইউক্রেনের কয়েক হাজার সামরিক, বেসামরিক ও আহত সেনা আটকা পড়ে আছে। তাদের সরিয়ে নিতে জাতিসংঘের একটি উদ্যোগ এখন বাস্তবায়নের পথে রয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে শান্তি আলোচনা চলমান থাকলেও ২৯ মার্চ থেকে তারা আর মুখোমুখি বসেনি। ভিডিও লিংকের মাধ্যমে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার বাহিনীগুলো কিয়েভের কাছ থেকে সরে যাওয়ার সময় নৃশংসতা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করছে ইউক্রেন। রাশিয়া এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে আর এ নিয়ে আলোচনার পরিবেশ তিক্ত হয়েছে। প্রায় ৩০ লাখ ইউক্রেনীয়কে আশ্রয় দেওয়া প্রতিবেশী পোল্যান্ডে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। রাশিয়ার নৃশংসতা নিয়ে জনগণের মধ্যে দেখা দেওয়া ক্ষোভের কারণে আলোচনা ভেস্তে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, আলোচনার ক্ষেত্রে ইউক্রেন যদি ‘সৎ’ হতো তাহলে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের দেশগুলো থেকে কিয়েভকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়া হতো।

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য, উভয়েই শান্তি আলোচনার বিষয়ে ইউক্রেনকে সমর্থন দেওয়ার কথা জানালেও কিয়েভকে অস্ত্র সরবরাহ করা জরুরি বলেও দাবি করেছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসকে ইউক্রেনের জন্য ৩৩ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা মঞ্জুর করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। এর মধ্যে ২০ বিলিয়নের বেশি হবে অস্ত্র সহায়তা।   

কয়েক লাখ টন খাদ্যশস্য চুরি করেছে রুশ বাহিনী : সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার আরেক খবরে বলা হয়েছে- যুদ্ধের সময়ে রুশ বাহিনী ইউক্রেন থেকে কয়েক লাখ টন খাদ্যশস্য চুরি করেছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ। দেশটির উপকৃষিমন্ত্রী তারাস ভিসোটস্কি বলেছেন, রাশিয়ান বাহিনী ইউক্রেনের দখল করা এলাকা থেকে ‘কয়েক লাখ টন’ শস্য চুরি করেছে। ইউক্রেনের জাতীয় টেলিভিশন চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় তিনি এ দাবি করেন। এ সময় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বপ্রণ, দখল করা অঞ্চলে সঞ্চিত দেড় মিলিয়ন টন খাদ্যশস্যও রাশিয়ান বাহিনী চুরি করতে পারে।

অস্ত্র সরবরাহ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোর প্রতি আহ্বান রাশিয়ার : আল জাজিরার আরেক খবরে বলা হয়- ইউক্রেনকে অস্ত্র না দিতে আবারও আহ্বান জানিয়েছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। তিনি বলেন, তারা যদি ইউক্রেন সংকট সমাধানে সত্যিই আগ্রহী হয় তবে অবশ্যই অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ হওয়া উচিত।

চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সিনহুয়াকে সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একাধিক দেশ ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কয়েক বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র সহায়তা দিয়েছে। এর মধ্যে কংগ্রেসের কাছে আরও ৩ হাজার ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার চেয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে ওয়াশিংটনকে হুমকি দিয়ে রাশিয়া বলছে, কিয়েভকে সামরিক সহায়তা মানে আগুনে ঘি ঢালা। অভিযান প্রসঙ্গে চীনা সংবাদমাধ্যমকে ল্যাভরভ বলেন, ইউক্রেনে পরিকল্পনা মোতাবেক রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযান চলছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযানে নেমেছে দেশটির বাহিনী। এ অভিযানকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো। এ যুদ্ধ বন্ধে পুতিনের সঙ্গে মুখোমুখি আলোচনায় বসতে তাগিদ দিয়ে আসছে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

 

সর্বশেষ খবর