রবিবার, ১ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

ছয় জেলায় ঝড়ে ব্যাপক ক্ষতি, নিহত ৪

প্রতিদিন ডেস্ক

উত্তরাঞ্চলের জয়পুরহাট, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম,নীলফামারী, সিরাজগঞ্জ ও ঠাকুরগাঁওয়ে প্রবল ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে গাছপালা উপড়ে পড়ে ও বজ্রপাতে চারজন নিহত হয়েছেন। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :

জয়পুরহাট : শুক্রবার রাতে প্রবল ঝড়-বৃষ্টিতে উপড়ে গেছে প্রায় সহস্রাধিক গাছপালা, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ধান, পাট, আম, ভুট্টা, কলাসহ শাক-সবজি খেত। ঝড়ে গাছ ভেঙে পড়ে নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক শফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে ২ ঘণ্টা স্থায়ী ঝড়-বৃষ্টিতে জেলার প্রায় ১৭ হাজার ২০০ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের সময় নিজের মোটরসাইকেলে বাড়ি ফেরার পথে জয়পুরহাট সদর উপজেলার শ্যামপুর গ্রামে গাছ ভেঙে নিহত হন সঞ্জয় কুমার মন্ডল নামে এক যুবক। নিহত সঞ্জয় একই গ্রামের সুচীন্দ্রনাথ মন্ডলের ছেলে। এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন স্থানে সহস্রাধিক গাছপালা উপড়ে পড়েছে এবং বেশ কিছু কাঁচা-পাকা বাড়ি ও প্রাচীর ধসে পড়েছে। জেলা প্রশাসক শরীফুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, জেলা ত্রাণ তহবিলে পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণসামগ্রী মজুদ রয়েছে, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা পাওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হবে।

দিনাজপুর : গতকালের ঝড় ও বজ্রপাতে দিনাজপুরের খানসামার দুই গ্রামে পৃথকভাবে একজন নারী ও একজন পুরুষ নিহত হয়েছে। নিহতদের পরিবারের খোঁজখবর নিয়ে তাদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন খানসামা ইউএনও রাশিদা আক্তার। গতকাল সকালে খানসামা উপজেলার ভেড়ভেড়ি ইউনিয়নের হোসেনপুর ও সুবর্ণখুলী গ্রামে এ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। বজ্রপাতে খানসামার ভেড়ভেড়ি ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামের মৃত ওসমান গণি চুনিয়ার ছেলে শাহ আলম (৪৫) ও একই ইউনিয়নের টংগুয়া গ্রামের ঝসড়ুপাড়ায় ফজলুল হকের স্ত্রী মাজেদা বেগম (৪০) খেত থেকে শসা তুলতে গিয়ে বজ্রপাতে নিহত হয়। এ বিষয়ে খানসামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাশিদা আক্তার বলেন, এরকম ঘটনা অনাকাক্সিক্ষত। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই নিহতের পরিবারের খোঁজখবর নিয়েছি এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছি।

কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামের চিলমারীতে গরুর জন্য ঘাস কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। নিহত নারীর নাম জোসনা বেগম (৩৫)। নিহত জোসনা বেগম উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের পুঁটিমারী এলাকার হাবিবুর রহমানের স্ত্রী। শনিবার দুপুরে উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নের পুটিমারী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। থানাহাট ইউপির ৪নং ওয়া?র্ড সদস্য ফয়জার রহমান জানান, শনিবার দুপুরের আগের বাড়ির পাশের জমি থেকে গরুর জন্য ঘাস কাটতে গিয়ে আকস্মিক বজ্রপাতে জোসনা বেগমের মৃত্যু হয়। এ ব্যাপারে চিলমারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আ?তিকুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

নীলফামারী : নীলফামারীতে কালবৈশাখী ঝড়ে সহস্রাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে। এসময়  ছোট-বড় অসংখ্য গাছপালা উপড়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় মাঠে থাকা বোরো ধান, ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসলের। বিদ্যুতের তারে গাছ উপড়ে ও ডাল ভেঙে পড়ে প্রায় ১৬ ঘণ্টা ব্যাহত হয় বিদ্যুৎ সঞ্চালনব্যবস্থা।

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, জেলা সদর, কিশোরগঞ্জ, জলঢাকা ও সৈয়দপুর উপজেলার ওপর দিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে এ ঝড় বয়ে যায়। কোথাও কোথাও ঝড়ের সঙ্গে শিলাবৃষ্টি হয়েছে। ঝড়ে ৮১৬ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : সিরাজগঞ্জে কালবৈশাখী ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন উপজেলায় গাছপালাসহ ঘর ভেঙে গেছে। বিদ্যুতের তারের ক্ষতি হওয়ায় অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে। রায়গঞ্জ উপজেলায় ঘর ভেঙে পড়ে তিনজন ও চকমুথর গ্রামের দিনমজুর সেলিম, তার ছেলে ও মেয়ে আহত হয়েছেন।

কাটেঙ্গা, সয়াশাখা, দোগাছী, মহেশ কাংলা, দোরতা, বর্ণি, ছোট কয়রা, বড় কয়রা, কাগমারি, হাট বয়রা, কাওয়াকোলাপাড়া এলাকায় ঝড়ের প্রকোপ ছিল বেশি।

কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদ হাসান সিদ্দিকী বলেন, উপজেলার সোনামুখী ইউনিয়নের হরিনাথপুর, চালিতাডাঙ্গার কবিহার, গান্ধাইল, তেকানী, নাটুয়ারপাড়া ও নিশ্চিন্তপুরের কিছু অংশের ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেছে। এতে বেশ কিছু কাঁচা বাড়িঘরের ক্ষতি হয়েছে।

ঠাকুরগাঁও : ঠাকুরগাঁওয়ে মধ্যরাতে হঠাৎ কালবৈশাখীর তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়েছে ঠাকুরগাঁওয়ের ঘরবাড়ি ও বিভিন্ন ফসল। এ ছাড় লণ্ডভণ্ড হয়েছে সদর, রানীশংকৈল, বালিয়াডাঙ্গী, হরিপুর, পীরগঞ্জ উপজেলার শতাধিক গ্রাম। এ ঝড়ো বৃষ্টিতে আম, ধান, ভুট্টাসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আহত হয়েছেন প্রায় অর্ধ শতাধিক মানুষ।

ঠাকুরগাঁও ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক ফরহাদ হোসেন জানান, শহরের বিভিন্ন জায়গায় রাস্তায় গাছ ভেঙে ও বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে গেছে। রাত ১২টার পর থেকে ঝড়ে বিভিন্ন জায়গায় বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে যাওয়ায় এখন পর্যন্ত (দুপুর দেড়টা) জেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ আছে। শহরে চারটি স্থানে বড় গাছ উপড়ে পড়েছে। বহু গাছ ভেঙে পড়েছে। এগুলো সরানো হচ্ছে।

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক আবু হোসেন বলেন, ঝড়ের কারণে আম-লিচু বাগানের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। কৃষির সব মৌসুমী ফসলের ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণ এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।

 

সর্বশেষ খবর