শুক্রবার, ৬ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

বিশ্বে বাড়ছে সতর্কতা কমছে বাংলাদেশে

যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন নাগরিকরা, অসচেতনতা বাংলাদেশে

জয়শ্রী ভাদুড়ী

বিশ্বে বাড়ছে সতর্কতা কমছে বাংলাদেশে

বিশ্বের বেশ কিছু দেশে আবারও চোখ রাঙাচ্ছে করোনা। বাড়ছে সংক্রমণ, বাড়ছে মৃত্যু। এই ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে দেশগুলো। অন্যান্য দেশে যাতে সংক্রমণ ছড়িয়ে না যায় এ জন্য নেওয়া হয়েছে বাড়তি সতর্কতা। যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশে সরকারি বিধিনিষেধ শিথিল থাকলেও সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা এখনো লক্ষ্যণীয়। কিন্তু বাংলাদেশে সংক্রমণ কমে আসায় কেউ মানছে না স্বাস্থ্যবিধি। এতে ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে করোনার চতুর্থ ঢেউয়ের। এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সংক্রমণ এখন কমে এসেছে। এখন বিক্ষিপ্ত, বিচ্ছিন্ন আক্রান্তের ঘটনা ঘটছে। কিন্তু সংক্রমণ কমে একটা ঢেউ শেষ হলে এর তিন-ছয় মাসের মধ্যে করোনার আরেকটা ঢেউ আসে। এটা রোগের ধরন অনুযায়ী আমরা দেখছি। মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে দেশে করোনা শনাক্তের হার এক শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। সংক্রমণ কমে আসার প্রায় আড়াই মাস হয়ে যাচ্ছে। পরবর্তী ঢেউ আসার একটা শঙ্কা রয়েছে এই মাস কিংবা আগামী মাসের ভিতরে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে সংক্রমণ বাড়ছে। ভারতের মুম্বাই, দিল্লিতে সংক্রমণ বাড়ছে। আমেরিকা, আফ্রিকাতে সংক্রমণ আবার বেড়েছে। তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। হাসপাতালগুলোতে সংক্রমণ প্রতিরোধের ব্যবস্থা আগে করতে হবে। হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যসেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সংক্রমণ বেশি ছড়ায়। সংক্রমণ ঠেকাতে নজরদারি বাড়াতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মানায় জোর দিতে হবে।’

করোনাভাইরাসে মৃত্যুহীন টানা ১৫ দিন পার করল বাংলাদেশ। আগের দুই সপ্তাহের মতো গত ২৪ ঘণ্টাতেও কেউ মারা যাননি। একই সময়ে আগের দিনের তুলনায় কমেছে নতুন সংক্রমণ ও নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো কভিড-১৯ বিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। অধিদফতরের উপপরিচালক ও কভিড ইউনিটের প্রধান ডা. মো. জাকির হোসেন খান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তির তথ্য বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৮৭৯টি ল্যাবে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এর মধ্যে আরটি-পিসিআর ল্যাব ১৬০টি, জিন এক্সপার্ট ল্যাব ৫৭টি, র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন ল্যাব ৬৬২টি। মোট ল্যাবের মধ্যে সরকারি ৫৪৫টি ও বেসরকারি ১১৭টি। এসব ল্যাবে গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ২২৬টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এদিন নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ২ হাজার ২১২টি। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৯২ লাখ ৫৭ হাজার ৪৭১টি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৪৭ লাখ ৪৩ হাজার ৬৬৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ১ কোটি ৪০ লাখ ১ হাজার ১৩৭টি।

গতকাল যেসব নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে তার মধ্যে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৪টি নমুনায়। আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ১০। নতুন শনাক্ত হওয়া ৪টিসহ এখন পর্যন্ত মোট করোনা রোগী শনাক্ত হলেন ১৯ লাখ ৫২ হাজার ৭৪৭ জন। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার আগের দিন ছিল শূন্য দশমিক ৬০ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় এই হার কমে নেমে এসেছে শূন্য দশমিক ১৮ শতাংশে। এখন পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ। আগের দিন করোনা সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়েছিলেন ২৫২ জন। গতকাল এই সংখ্যা কিছুটা বেড়ে হয়েছে ২৫৭ জন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত করোনামুক্ত হয়েছেন ১৮ লাখ ৯৬ হাজার ৭৮৮ জন। সংক্রমণ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৭ দশমিক ১৩ শতাংশ।

এর আগে, সবশেষ গত ২০ এপ্রিল করোনা সংক্রমণ নিয়ে একজন মারা গিয়েছিলেন। এরপর টানা ১৫ দিন নতুন কেউ করোনা সংক্রমণ নিয়ে মারা না যাওয়ায় করোনায় মোট মৃত্যু আগের মতো ২৯ হাজার ১২৭ জনে স্থির রয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ১৮ হাজার ৫৯৪ জন, নারী ১০ হাজার ৫৩৩ জন। এ ব্যাপারে রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম মোস্তাক হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনা নির্মূল করে নাগাদ হবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। যেসব দেশ টিকা তৈরি করেছে সেখানেও সংক্রমণে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। আমাদের দেশে সংক্রমণ কমে এসেছে এটা ভালো খবর। গতকাল মাত্র চারজন আক্রান্ত হয়েছেন। টানা ১৫ দিন মৃত্যুহীন পার করছে দেশ, এটা স্বস্তির। কিন্তু এ জন্য সচেতনতা বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। আমাদের অবহেলার সুযোগ যেন করোনা ভাইরাস না নেয় সে ব্যাপারে নজর রাখতে হবে।

বিশ্বে করোনা সংক্রমণের হালনাগাদ তথ্য দেয় ওয়ার্ল্ডো মিটার। গতকাল দেওয়া তথ্য মতে, বিশ্বে এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৫১ কোটি ৫৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৪২ জন। করোনা সংক্রমিত হয়ে বিশ্বে মারা গেছেন ৬২ লাখ ৭০ হাজার ৯৩ জন। সবেচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে। নতুন করে আবার বেশ কিছু দেশে বাড়তে শুরু করেছে সংক্রমণ। গতকাল অস্ট্রেলিয়াতে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৪ হাজার ৮৬৮ জন, ফিনল্যান্ডে ২৯ হাজার ৭৫৪ জন, দক্ষিণ কোরিয়াতে ৪২ হাজার ২৭৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল চীনে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৩৭৩ জন, মারা গেছেন ১৩ জন। তাই সতর্ক থাকায় জোর দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শহীদুল্লাহ সিকদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ১৯১৯ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়া স্প্যানিশ ফ্লু চার বছর ছিলো। তাই করোনাও সহজে নির্মূল হবে না। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস দফায় দফায় হানা দিচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। আবহাওয়া, ভৌগলিক বিন্যাস ও জিনগত কারণে বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্ট তৈরি করে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে করোনা। এক ভ্যারিয়েন্টের প্রভাব কমলে ছড়াচ্ছে নতুনটা। দেশে সংক্রমণ কমেছে। কিন্তু নতুন ভ্যারিয়েন্টের প্রভাবে পুনরায় যে করোনা আবার ছড়াবে না এটা বলা যায় না। তাই অসতর্ক হলে চলবে না। সুস্থ থাকতে হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরি। মাস্ক ব্যবহারে জোর দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

সর্বশেষ খবর