শুক্রবার, ৬ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

ভিড় এখন ঢাকামুখী যাত্রীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভিড় এখন ঢাকামুখী যাত্রীদের

কমলাপুর রেলস্টেশনে গতকাল ঢাকামুখী মানুষের ভিড় -জয়ীতা রায়

দুই বছরের করোনাকাল শেষে এবারের ঈদযাত্রায় ছিল স্বস্তি। ঈদুল ফিতরের ছুটিতে অনেকটা স্বস্তিতে ঢাকা ছেড়েছিল মানুষ। ছুটি শেষে আবারও স্বস্তিতে আকাশ, নৌ, সড়ক ও রেলপথে ফিরতে শুরু করেছেন তারা। তবে এখনো অনেকে বাড়িতেও যাচ্ছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের ছুটি শেষ হলেও ঢাকায় ফেরা মানুষের চাপ বেশি থাকবে আজ ও কাল শনিবার।

গতকাল সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে দেখা গেছে ঢাকা ফেরা মানুষের ভিড়। মানুষের ভিড়ে সরগরম ছিল কমলাপুর রেলস্টেশন। তবে বাসস্ট্যান্ডগুলোতে তেমন ভিড় ছিল না। গতকাল ভোর থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ঢাকামুখী যাত্রীদের ভিড় ছিল মাদারীপুরের বাংলাবাজার ফেরিঘাটে। যানবাহনের চাপ অপেক্ষাকৃত বেশি থাকায় পারাপারে এসে দুর্ভোগে পড়েন ঢাকামুখী যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকরা। তবে গতকাল রাজধানীর আন্তজেলা বাস টার্মিনাল গাবতলী এলাকা ঘুরে ঢাকামুখী মানুষের চাপ দেখা যায়নি।  যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামায় চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের প্রবেশদ্বার খ্যাত সায়েদাবাদ-কাঁচপুর সড়কের বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে যানজট। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। অন্যদিকে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে দেখা যায়, ঈদের তৃতীয় দিনেও ঢাকা ছাড়ছেন অনেকে। আর এই টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যাচ্ছে বিভিন্ন জেলাগামী বাস। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দ সেতুর ‘এক্সপানশন জয়েন্ট’ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সংস্কার কাজের কারণে এক পাশ দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ রেখেছিল সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এতে বুধবার ওই মহাসড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হওয়ায় যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন। 

যাওয়া-আসায় সরগরম কমলাপুর স্টেশন : ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলে যোগ দিতে রাজধানীতে ফিরছেন হাজারো মানুষ। বুধবার থেকেই ফিরতে শুরু করেন তারা। তবে এই সংখ্যাটা গতকাল ছিল বেশি। অন্যদিকে যারা বিভিন্ন কারণে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়িতে যেতে পারেননি, তারা ঈদের পর ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন।

মঙ্গলবার দেশব্যাপী উদযাপিত হয়েছে ঈদুল ফিতর। ঈদের ছুটি শেষ হয়েছে বুধবার। বৃহস্পতিবার থেকে খুলেছে অফিস-আদালত। বাড়িতে যাওয়া এবং কর্মস্থলে যোগ দিতে রাজধানীতে ফেরা মানুষের ভিড়ে বৃহস্পতিবার সরগরম রয়েছে কমলাপুর রেলস্টেশন।

যানবাহনের চাপ নেই, স্বস্তিতে ফিরছেন যাত্রীরা : গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক দিয়ে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। এসব মহাসড়কে গতকাল যাত্রী ও যানবাহনের চাপ অনেকটাই কম ছিল। মহাসড়কে স্বাভাবিক গতিতেই গাড়ি চলাচল করছে। বুধবারও মানুষকে ফিরতে দেখা গেছে। গতকাল সকাল থেকেই বাস, ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল ও বিভিন্ন যানবাহনে লোকজন ফিরছে। তবুও গাজীপুরের সড়ক-মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক হয়ে ঢাকাগামী যাত্রী ও যানবাহনের চাপ এখনো হচ্ছে না। অন্যান্য সময়ের মতোই যানবাহন স্বাভাবিক গতিতে চলাচল করছে। ঢাকাগামী যাত্রীর চাপ না থাকলেও গাজীপুর মহানগর পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, জেলা ট্রাফিক পুলিশ মহাসড়কে তাদের কর্তব্য পালন করে যাচ্ছে।

কর্মস্থলে ফিরছে মানুষ : স্বজনদের সঙ্গে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফিরছে মানুষ। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত রাজবাড়ী দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের দৌলতদিয়া প্রান্তে যাত্রীদের চাপ  বেড়েছে। দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় বড় ধরনের কোনো ভোগান্তি না থাকায় স্বস্তির কথাও জানিয়েছেন যাত্রী ও চালকরা।

গতকাল সকালে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় দেখা যায়, কর্মস্থলে ফেরা মানুষের চাপ রয়েছে। তবে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেশি না থাকায় সীমিতসংখ্যক ফেরি চালাচ্ছে বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসির) দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মো. শিহাবউদ্দীন বলেন, আমাদের ফেরি বহরে ২১টি ফেরি রয়েছে। তবে বর্তমানে ১০টি ফেরি অপারেশনে রয়েছে। যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পেলে ফেরি বাড়ানো হবে।

ভিড় বাড়ছে বাংলাবাজার ঘাটে : গতকাল ভোর থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ঢাকামুখী যাত্রীদের ভিড় ছিল মাদারীপুরের বাংলাবাজার ফেরিঘাটে। যানবাহনের চাপ অপেক্ষাকৃত বেশি থাকায় পারাপারে এসে দুর্ভোগে পড়েন ঢাকামুখী যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকরা। এদিকে ঘাটের সংযোগ সড়কে যানবাহনের সিরিয়াল বেশি থাকায় ফেরি পারাপারে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা আটকে থাকতে হচ্ছে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে আসা যাত্রীদের। তবে লঞ্চ ও স্পিডবোটে যাত্রী চাপ সহনীয় রয়েছে। যাত্রীরা লঞ্চ-স্পিডবোটে ভোগান্তি ছাড়াই পারাপার হচ্ছেন।

বিআইডব্লিউটিসি বাংলাবাজার ঘাট সূত্র জানায়, ঈদের ছুটি শেষে রাজধানীমুখী যাত্রীরা ভোর থেকেই কর্মস্থলে যোগ দিতে গন্তব্যে ছুটছেন। ভোরের দিকে লঞ্চ ও স্পিডবোটে যাত্রীদের চাপ হঠাৎ করেই বেড়ে যায়। সাধারণত যারা অফিস করবেন, তাদের একটা অংশ ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে ঘাটে এসে উপস্থিত হন। এরপর থেমে থেমে যাত্রীদের ভিড় বাড়তে থাকে। তবে ফেরিঘাটে কিছুটা ভোগান্তি ছিল।

বিআইডব্লিউটিসি বাংলাবাজার ফেরিঘাট ব্যবস্থাপক সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাতদিন ২৪ ঘণ্টা ফেরি চলছে। ফলে ঘাটে খুব বেশি ভোগান্তি পোহাতে হবে না যাত্রীদের। বাংলাবাজার-শিমুলিয়া এবং মাঝিরকান্দি-শিমুলিয়া উভয় ঘাট দিয়েই যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। ফেরিতে সাধারণ যাত্রীদের চাপ কমই। তবে মোটরসাইকেল আরোহীদের চাপ রয়েছে।

বিআইডব্লিউটিএর বাংলাবাজার লঞ্চঘাট সূত্রে জানা গেছে, বুধবার বিকাল থেকেই যাত্রীরা ঢাকা ফিরতে শুরু করেছে। তবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বেড়েছে যাত্রীদের চাপ। নৌযানে ধারণক্ষমতা মেনে যাত্রী পার করা হচ্ছে। ঝড়ের মৌসুমে সতর্কতার সঙ্গে নৌযান চলাচল করছে। নৌরুটে ৮৭টি লঞ্চ ও দেড় শতাধিক স্পিডবোট রয়েছে। আবহাওয়া বৈরী হয়ে উঠলেই নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়।

শিমুলিয়ায় চাপ নেই স্বস্তিতে যাত্রীরা : শরীয়তপুরের মাঝিকান্দি-শিমুলিয়া নৌরুট দিয়ে ঈদ শেষে ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগের সহজতর মাধ্যম শিমুলিয়া-মাঝিকান্দি নৌরুটে গতকাল যাত্রী ও যানবাহনের চাপ অনেকটাই কম ছিল। তবুও ঘাট এলাকার রাস্তাগুলো সরু হওয়ায় কিছুটা যানজট রয়েছে। এ ছাড়া স্বাভাবিকভাবেই ফেরি, লঞ্চ ও সি-বোর্ড দিয়ে পারাপার হতে পারছে যাত্রীরা। ২০টি লঞ্চ, ৫০টি সি-বোর্ড ও ৪টি ফেরি দিয়ে এই নৌরুটে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে।  সকাল থেকেই ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল ও অন্যান্য হালকা পরিবহনসহ বিভিন্ন যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে মাঝিকান্দি ঘাটে।

বিআইডব্লিউটিএ মাঝির ঘাটের ইনচার্জ আবদুল্লাহ ইনাম জানান, এ নৌপথে ঢাকাগামী যাত্রী ও যানবাহনের চাপ এখনো শুরু হয়নি। ঘাটের পরিবেশ স্বাভাবিক রয়েছে।

তবে ঘাট এলাকায় পারাপারের অপেক্ষায় হাতে গোনা কিছু প্রাইভেট-পিকআপ রয়েছে। দু-এক দিন পর হয়তো ঢাকাগামী যাত্রীর চাপ বাড়তে পারে।

ঈদযাত্রায় ছিল স্বস্তি : ঢাকা থেকে উত্তরের পথে গাজীপুর-টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহের পথে গাজীপুরে, চট্টগ্রামের পথে মেঘনা সেতুর টোল প্লাজা এবং কুমিল্লার কিছু এলাকা এবং খুলনা-বরিশালের পথে দুই ফেরিঘাটে যানজটের শঙ্কা ছিল। কিন্তু তেমন কিছু ঘটেনি। ঈদযাত্রার শেষ দিন  সোমবার গাজীপুর-টাঙ্গাইল-সিরাজগঞ্জ হয়ে উত্তরাঞ্চলের পথ অনেকটাই ফাঁকা দেখা গেছে; ফলে যারা বাড়ি যাচ্ছিলেন তারা স্বাচ্ছন্দেই ফিরতে  পেরেছেন। সোমবার সকাল থেকেই প্রায় যানবাহন শূন্য ঢাকা-সিরাজগঞ্জ-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক। কোনো যানজট নেই; পরিবহন শ্রমিকদের হাঁকডাক নেই, যাত্রীদের নেই কোনো ব্যস্ততা। বিগত বছরগুলোতে ঈদযাত্রা মানেই ছিল এই মহাসড়কে তীব্র যানজট। কিন্তু এবার ঈদযাত্রায় ছিল তার উল্টো চিত্র। অতীতে বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুর দুই প্রান্তে যেসব স্থানে যানবাহনের দীর্ঘ সারিতে ঘরমুখো মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হতো এবার সেই স্থানগুলোতে যানজট তো দূরের কথা, স্বাভাবিক চাপও ছিল না। বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ওসি মোসাদ্দেক আলী বলেন, রবিবার বিকাল থেকেই মহাসড়কে যানবাহনের চাপ কমতে থাকে। সোমবার ভোর থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম সংযোগ মহাসড়ক অনেকটা ফাঁকা। পরিবারের সঙ্গে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে গণপরিবহনের পাশাপাশি মোটরসাইকেল, ট্রাক ও পিকআপে করে বাড়ি ফিরছে মানুষ। এদিকে ঈদযাত্রার শেষ দিনে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে তেমন চাপ ছিল না। এ পথের বেশির ভাগ মানুষ মোটরসাইকেলে করেই বাড়িতে গেছেন। দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও শিমুলিয়া-মাঝিরকান্দি নৌপথে সোমবার সকাল থেকেই মানুষ ও যানবাহনের চাপ কম দেখা গেছে। যাত্রীর সংখ্যাও ছিল তুলনামূলক কম। ঘাটে মোটরসাইকেল ছাড়া ছোট গাড়ি তেমন ছিল না। তবে লঞ্চ ও স্পিডবোটগুলোতে যাত্রীর চাপ ছিল। বেশির ভাগ যাত্রী লঞ্চে বা স্পিডবোটে পদ্মা পার হয়েছেন।

সর্বশেষ খবর