শিরোনাম
শুক্রবার, ৬ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

সিজার করলেন পশুর ডাক্তার সন্তানসহ মায়ের মৃত্যু

নেত্রকোনা প্রতিনিধি

নেত্রকোনার বারহাট্টায় পশু চিকিৎসকের করা সিজারের পর সন্তানসহ শরীফা আক্তার (১৯) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। ঈদের দ্বিতীয় দিনে এমন ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার দুপুর ২টার দিকে উপজেলার চন্দ্রপুর গ্রামের দক্ষিণপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। শরীফা একই গ্রামের বাকপ্রতিবন্ধী হাইছ উদ্দিনের মেয়ে। সংশ্লিষ্ট পশু চিকিসক হলেন জীবনপুর গ্রামের আবুল কাশেম। তিনি স্থানীয় পশু চিকিৎসক। পশুর পাশাপাশি বর্তমানে মানুষের চিকিৎসা করেন। আবুল কাশেম গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছিলেন। কিন্তু জয়ী হতে পারেননি। গৃহবধূর পরিবারসূত্রে জানা গেছে, শরীফা বারহাট্টা সরকারি কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পাস করেন। গত বছর সুনামগঞ্জের তাহেরপুর উপজেলায় তার বিয়ে হয়। স্বামীর নাম মহসিন মিয়া। শরীফার সন্তান প্রসবের সময় ঘনিয়ে এলে গত সপ্তাহে চন্দ্রপুর বাবার বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। বুধবার ওই চিকিৎসক তার সিজার করেন। এতে একটি ছেলেসন্তান জন্ম নিলেও কিছুক্ষণ পর মা ও সন্তান দুজনই মারা যান। ঘটনার পর উপস্থিত লোকজন ডাক্তারের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে মারমুখী হয়ে উঠলে কয়েকজন ডাক্তারকে বাড়ির পেছন দিয়ে চলে যাওয়ার সুযোগ করে দিলে তিনি পালিয়ে যান। এলাকাবাসী জানান, কাশেম একজন পশু চিকিৎসক। মানুষের চিকিৎসা করা তার ঠিক হয়নি। তারপর পর্যাপ্ত ওষুধ ও যন্ত্রপাতি ছাড়া বাড়িতে সিজার করলেন কীভাবে তা বোধগম্য নয়। ভুক্তভোগীর মা মাফিয়া আক্তার খাতুন বলেন, ‘সকালে শরীফার প্রসব ব্যথা শুরু হলে কাশেম ডাক্তারকে খবর দেওয়া হয়। তিনি দেখে বললেন সবকিছু স্বাভাবিক আছে, কোনো সমস্যা নেই। আমরা নেত্রকোনা নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু তার কথায় ভরসা পেয়ে আর নিইনি। আমরা সাধারণ মানুষ। ডাক্তারের কথামতোই সব করেছি। সিজার করার পর তিনি ওষুধ ও স্যালাইন আনতে বললে একজনকে মোহনগঞ্জ পাঠানো হয়। এরপর ওষুধ নিয়ে আসার আগেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে শরীফার মৃত্যু হয়।’ শরীফার চাচা গিয়াস উদ্দিন ও আবুল কালাম বলেন, আবুল কাশেম একজন পশু চিকিৎসক। তবে মাঝেমধ্যে মানুষের চিকিৎসাও করেন। প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র ছাড়াই শরীফার সিজার করে ফেলেন। অনেক দূরের পথ। ওষুধ নিয়ে আসতে আসতেই শরীফার মৃত্যু হয়। এদিকে টানাহেঁচড়া করতে গিয়ে সদ্যভূমিষ্ঠ হওয়া ছেলেসন্তানেরও মৃত্যু হয়। স্থানীয় ইউপি সদস্য লালন বখত মজুমদার বলেন, ‘কাশেম একজন পশুর ডাক্তার। শুনেছি পশুর পাশাপাশি এখন মানুষের চিকিৎসাও করেন। তার এসব অনিয়ম বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাই। না হলে আরও অনেকেই এভাবে ভুক্তভোগী হবে।’

সিংধা ইউপি চেয়ারম্যান নাসিম তালুকদার বলেন, ‘পশুর চিকিৎসক হয়ে মানুষের চিকিৎসা বিশেষ করে সিজার করা তো তার একেবারেই উচিত হয়নি।’

অভিযুক্ত পশু চিকিৎসক আবুল কাশেম সিজারের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘সিজারের পর ওষুধ আনতে পাঠানো হয়েছিল। দূরের পথ ওষুধ ও স্যালাইন আনতে দেরি হওয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে। তবে শুধু পশু নয়, মানুষের চিকিৎসার সনদও আছে আমার। দীর্ঘদিন থেকে আমি মানুষের চিকিৎসা করছি।’

এ ব্যাপারে মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. শাহরিয়ার জাহান ওসমানি বলেন, ‘সিজার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি এমবিবিএস ছাড়া কারও করার নিয়ম নেই।’ বারহাট্টা থানার ওসি লুৎফুল হক বলেন, এ বিষয়ে কেউ কিছু জানায়নি। এখন খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানান।

 

সর্বশেষ খবর