ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষে স্বস্তিতে নৌপথ, সড়ক ও রেলপথে ফিরতে শুরু করেছেন মানুষ। বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন ও লঞ্চঘাটে ঢাকা ফেরা মানুষের ভিড় থাকলেও এবারে রাস্তায় তেমন ভোগান্তি নেই। অনেকটা স্বাচ্ছন্দ্যেই ফিরছেন তারা।
ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাড়ির চাপ থাকলেও তেমন যানজট ছিল না। তবে অনেক এলাকায় গাড়ি চলেছে থেমে থেমে। লঞ্চ ও ফেরিঘাটে ভোগান্তির অভিযোগ করেছেন অনেকেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকায় ফেরা মানুষের চাপ আজ সব চেয়ে বেশি হবে। অনেকেই সড়ক পথে যানজটের শঙ্কার কথাও জানিয়েছেন।
এদিকে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুটে ঢাকায় ফিরতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ফেরিতে যাত্রীবাহী পরিবহন পারাপার না করায় ছোট ও হালকা যান নিয়ে পার হতে হচ্ছে। এতে লঞ্চ আর স্পিডবোটই যাত্রীদের একমাত্র মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এই সুযোগে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে পদ্মা নদী পার হচ্ছেন যাত্রীরা। একইভাবে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে বাসযাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এ ছাড়া মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে পৌঁছাতে বাংলাবাজার ফেরিঘাটে হাজার হাজার মোটরসাইকেলকে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। এই রুটে মাত্র পাঁচটি ফেরি দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২১ জেলার ছোট-মাঝারি পরিবহনসহ মোটরসাইকেলও পার করছে ঘাট কর্তৃপক্ষ। ফলে হাজারও মোটরসাইকেল ঘাটে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থেকে দুর্ভোগে পড়েছেন আরোহীরা।ঈদ শেষে ফিরছেন মানুষ : প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি শেষে গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক দিয়ে গাজীপুর ও রাজধানীর পথে মানুষ। গতকাল সকাল থেকেই বাস, ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল ও বিভিন্ন যানবাহনে করে লোকজন ফিরছেন। পুলিশ বলছে মহাসড়কে এখনো যানবাহনের চাপ পড়েনি, সড়কও যান চলাচলের উপযোগী আছে। যাত্রীরা বলছেন, অতিরিক্ত ভিড় এড়াতে, ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ায় চলে এসেছেন কর্মব্যস্ত অনেকে। সড়কপথে ফেরার সময়ে কোনো ধরনের ভোগান্তি হয়নি বলে জানিয়েছেন অনেকে। তবে তুলনামূলক যাত্রীর চাপ ছিল কম। আজ (শনিবার) সকাল থেকে ঢাকামুখী মানুষের চাপ বাড়বে, বলছে বাস চালকরা। কারণ হিসেবে জানা গেছে অনেকেই ছুটি শেষে রবিবার অফিস করবেন। সেই টার্গেট নিয়েই বাড়ি থেকে রওনা দেবেন অনেকে।
যানবাহনের চাপ বাড়লেও যানজট নেই : ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ঢাকামুখী যাত্রীদের কারণে যানবাহনের কিছুটা চাপ বেড়েছে সিরাজগঞ্জ মহাসড়কে। তবে অন্যবারের মতো যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি যাত্রীদের। শুক্রবার সকাল থেকে সিরাজগঞ্জ মহাসড়কের চান্দাইকোনা, হাটিকুমরুল গোলচত্বর, কড্ডার মোড় ও বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানা মোড় চত্বর এলাকায় সরেজমিনে এমন চিত্র দেখা যায়। হাটিকুমরুল ও কড্ডার মোড় এলাকায় যাত্রী ওঠা-নামার কারণে যানবাহনের কিছুটা চাপ তৈরি হয়। তবে এই সড়কের হটস্পট খ্যাত নলকা সেতু ও সংলগ্ন এলাকায় কোনো যানবাহনের চাপ নেই। এসব এলাকায় যানবাহন চলাচলে স্বাভাবিক গতি রয়েছে।
দৌলতদিয়াতে বাসযাত্রীদের ভোগান্তি : থ্রি হুইলারের যাত্রী ও ব্যক্তিগত ছোট গাড়ির চাপে ঈদ শেষে কর্মস্থলগামী বাসযাত্রীদের ভোগান্তি শুরু হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে ফেরির নাগাল পাচ্ছেন না দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা বাসযাত্রীরা। গতকাল দুপুরের পর থেকে দৌলতদিয়া প্রান্তে এই ভোগান্তি সৃষ্টি হয়। দুপুরের পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা কয়েক শত বাস ফেরি পারের অপেক্ষায় ঢাকা খুলনা মহাসড়কে আটকে পড়ে। প্রচণ্ড গরমে এসব বাসযাত্রীর ভোগান্তি তীব্র হয়। বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মো. শিহাব উদ্দীন বলেন গতকাল দুপুরের পর থেকে দৌলতদিয়া প্রান্তে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। সরাসরি যাত্রীরা ফেরিতে যাওয়ার কারণে বাসযাত্রীদের ভোগান্তি হচ্ছে। দৌলতদিয়া পাটুরিয়া নৌরুটে বর্তমানে ১৯টি ফেরি চলাচল করছে।
এদিকে দক্ষিণাঞ্চল থেকে বাংলাবাজার-সত্তার মাদবর ও মাঝিকান্দিঘাট থেকে শিমুলিয়া ঘাটে যাচ্ছে যানবাহন ও মানুষ। আবার এই ঘাট দিয়ে অনেকেই আসছে দক্ষিণ-পশ্চিমবঙ্গে। শরীয়তপুরের মাঝিকান্দি-শিমুলিয়া নৌরুট দিয়ে ঈদ শেষে ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগের সহজতর মাধ্যম শিমুলিয়া-মাঝিকান্দি নৌরুটে যাত্রী ও যানবাহনগুলো অন্যান্য দিনের তুলনায় গতকাল গাড়ির চাপ বেশি ছিল। তবুও ঘাট এলাকার রাস্তাগুলো সরু হওয়ায় কিছুটা যানজট রয়েছে। এ ছাড়া স্বাভাবিকভাবেই ফেরি, লঞ্চ ও সি-বোর্ড দিয়ে পারাপার হতে পারছে যাত্রীরা। ২০টি লঞ্চ, ৫০টি সি-বোর্ড ও ৪টি ফেরি দিয়ে এই নৌরুটে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। সকাল থেকেই ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল ও অন্যান্য হালকা পরিবহনসহ বিভিন্ন যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে মাঝিকান্দি ঘাটে।
লঞ্চে ঢাকামুখী যাত্রীদের ভিড় : ঈদের ছুটি শেষে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন। ফলে পটুয়াখালী-ঢাকা নৌপথে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি সংখ্যায় লঞ্চে বাড়ানো হলেও লঞ্চগুলো ইতোমধ্যে যাত্রীতে পরিপূর্ণ হয়েছে। যাত্রীদের চাপ বেশি থাকায় গতকাল পটুয়াখালী লঞ্চঘাট থেকে পাঁচটি লঞ্চ ঢাকায় এসেছে। ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম লঞ্চ। পটুয়াখালী নদীবন্দর থেকে প্রতিদিন তিনটি করে মোট ছয়টি লঞ্চ যাতায়াত করে থাকে। তবে ঈদে যাত্রীদের ব্যাপক চাপ থাকায় এখন পাঁচটি লঞ্চের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদিকে দেশের প্রধান বাণিজ্যিক নৌপথ বরিশাল-ঢাকা রুটে ঢাকামুখী যাত্রী উপচে পড়েছে। গতকাল বরিশাল নদী বন্দরে ছিল উপচে পড়া ভিড়। অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের অভিযোগে পারাবাত কোম্পানির একটি লঞ্চকে জরিমানা করে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই ঢাকার উদ্দেশে বরিশাল নদী বন্দর ত্যাগ করে যাত্রীতে টইটুম্বুর লঞ্চগুলো। এদিকে ঈদের পর গতকাল সর্বাধিক যাত্রীর চাপ থাকায় কেবিন কালোবাজারি ছিল তুঙ্গে। দেড় দুইগুণ অতিরিক্ত মূল্যে কালোবাজারে কেবিন কিনতে বাধ্য হয়েছেন অনেকে।