শনিবার, ৭ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

পাহাড়ে পর্যটকের ভিড়

প্রতিদিন ডেস্ক

পাহাড়ে পর্যটকের ভিড়

ঈদের ছুটিকে কেন্দ্র করে দেশের পার্বত্যাঞ্চল এখন পর্যটকের ভিড়ে মুখরিত। ছুটির দিন থেকে এ ভিড় বাড়তে থাকে এবং এখন ছুটি শেষের দিকে চলে এলেও ভিড় কমেনি, বরং শেষমুহূর্তে আরও বেড়েছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

রাঙামাটি : পাহাড় এখন পর্যটকের ভিড়ে মুখর। প্রতিদিনই নামছে মানুষের ঢল। বর্তমানে ৪ থেকে ৫ হাজারেরও অধিক পর্যটক অবস্থান করছেন রাঙামাটিতে। শুধু রাঙামাটি নয়, পর্যটক উৎসবে মেতেছে অপর দুই পার্বত্য  জেলা খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানও। পর্যটকদের পদচারণে মুখরিত পাহাড়ের পর্যটন কেন্দ্রগুলো। গতকালও ছিল রাঙামাটিতে অগণিত পর্যটকের ঢল। সকাল থেকে জেলার আশপাশের পর্যটকরা আসতে থাকেন রাঙামাটিতে। মানুষের ভিড়ে কানায় কানায় ভরে যায় ঝুলন্ত ব্রিজ।

পার্বত্যাঞ্চলের পর্যটন সূত্রে জানা গেছে, ঈদের পর থেকে তিন পার্বত্য জেলার সবগুলো আবাসিক হোটেল, মোটেল, সরকারি রেস্ট হাউসগুলো বুকিং হয়ে যায়। এখন কোথাও রুম খালি নেই। একই সঙ্গে আছে অগ্রিম বুকিংও। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে প্রকৃতির টানে দূর-দূরান্ত থেকে এসেছেন দেশি-বিদেশি হাজার হাজার পর্যটক। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে আগত পর্যটকরা রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু, শুভলং ঝরনা, পলওয়েল পার্ক, ডিসি বাংলো পার্ক ও কাপ্তাই-আসামবস্তি  সড়ক ও ফুরামন পাহাড়সহ বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেউ কাপ্তাই হ্রদ নৌ-ভ্রমণের আনন্দ উচ্ছ্বাসে মেতেছেন। আবার কেউ প্রকৃতিকে উজাড় করে দিচ্ছেন নিজেকে।

স্থানীয়রা বলছেন, বিকালে সূর্যের সোনালি রং যখন ছড়িয়ে পড়ে, ঠিক তখনই মানুষের ভিড় জমে ঝুলন্ত সেতুতে। হ্রদ, পাহাড় আর সবুজের লুকোচুরি খেলার দেখা মেলে এখানে। ভ্রমণকারীরা জানান, রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্স, ডিসি বাংলো পার্ক, পলওয়েল পার্ক, শুভলং ঝরনা, আসামবস্তি সড়ক, প্যাদা টিং টিং, বরগ্যাং ও ফুরামন পাহাড়ের মতো অসংখ্য পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে রাঙামাটিতে। এসব স্থানে পর্যটকদের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে হরেক রকম রেস্টুরেন্ট আর বিনোদন কেন্দ্র। রেস্টুরেন্টগুলোতে মিলছে পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের বিভিন্ন খাবার। এর প্রতি পর্যটকদের দারুণ আকর্ষণ। অন্যদিকে শহরের বিভিন্ন স্থানে আছে এ অঞ্চলের মানুষের দেশীয় পোশাক ও পণ্যসামগ্রী। যারা ঘুরতে আসছেন তারাও ছুটে যাচ্ছেন এসব শপিং মলে। ফলে ব্যস্ত সময় পার করছেন কাপ্তাই হ্রদের নৌ-ট্যুরিস্ট বোট ব্যবসায়ীরা। দিনরাত ছুটছেন তারা কাপ্তাই হ্রদ ভ্রমণপিপাসুদের নিয়ে।

বান্দরবান : টানা ছুটিতে বৃষ্টি উপেক্ষা করে নানা বয়সী পর্যটক ঘুরছেন পার্বত্য জেলা বান্দরবানে। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ১ মে থেকে ৭ মে পর্যন্ত টানা ছুটি কাজে লাগাতে দেশের অন্য এলাকাগুলোর চেয়ে পাহাড়ি জনপদ টানছে সবাইকে। করোনার বিধিনিষেধে দুই বছর গৃহবন্দি ছিলেন সবাই। এবার সেই বাধা কেটে যাওয়ায় পর্যটকের সমাগমে দীর্ঘদিন পর চিরচেনা রূপে ফিরে এসেছে বান্দরবানের পর্যটন কেন্দ্রগুলো।

জেলা সদর থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে নীলাচল, ৪ কিলোমিটার দূরে কৃত্রিম লেকের পর্যটন কেন্দ্র মেঘলা, পাহাড়ি ঝরনা শৈলপ্রপাত, মেঘ ছোঁয়া পাহাড়চূড়া চিম্বুক, পাহাড়চূড়ায় বিশাল জলাশয় বগালেক, মেঘের রাজ্য নীলগিরি, দেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ তাজিংঢং, কেওক্রাডং এবং নীলদিগন্ত ও তমাতুঙ্গীসহ রেমাক্রী, নাফাখুম, দেবতাখুম, আমিয়াখুম, দেশের সবচেয়ে উঁচু স্থলপথ আলীকদম-থানচি সড়ক এবং থানচির তিন্দু ও বড় পাথরেও পর্যটকের ভিড় চোখে পড়ার মতো।

পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের প্রথম দুই দিন বৃষ্টি থাকায় পর্যটক সমাগম তেমন একটা হয়নি। কিন্তু তৃতীয় দিন থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যেও বেড়েছে পর্যটকদের পদচারণ। কেউ কেউ এসেছেন বন্ধু-বান্ধব নিয়ে বাইক ট্যুরে, বাসে করে পরিবার নিয়ে এসেছেন কেউ কেউ।

রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) : বঙ্গোপসাগরের কূলঘেঁষে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য নিয়ে জেগে ওঠা সম্ভাবনাময় একটি পর্যটন কেন্দ্রের নাম ‘সোনারচর’। এর পাশেই রয়েছে চর হেয়ারদ্বীপ ও জাহাজমারা সমুদ্রসৈকত। সবুজ বনকুংয়ন, পাখির কলরব, বন্যপ্রাণীর ঝাঁক, জেলেদের উচ্ছ্বাস আর সাগরের বিস্তীর্ণ জলরাশি মিলে নয়নাভিরাম এক সৌন্দর্যের জগৎ সৃষ্টি হয়েছে এ চরটিতে। প্রায় ১০ হাজার একর আয়তনের এ চরে রয়েছে ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত। ফেনিল নোনাজলে ভেজা তটরেখায় চলে লাল কাঁকড়াদের ছোটাছুটি। একই স্থানে দাঁড়িয়ে উপভোগ করা যায় সূর্যাস্ত আর সূর্যোদয়ের মনোরম দৃশ্য। যদিও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এবং নগর থেকে বহুদূরের এই সৈকতের সৌন্দর্য এখনো অনেকের কাছেই অজানা। পটুয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য মহিব্বুর রহমান মহিব বলেন, রাঙ্গাবালীর সোনারচর, চরহেয়ার, জাহাজমারা সমুদ্রসৈকত দীর্ঘদিন ধরে পর্যটন বিকাশের সুযোগের অপেক্ষায় আছে। সোনারচর নিয়ে আমাদের অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। সোনারচর হবে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ : চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে গড়ে ওঠা একমাত্র বিনোদন কেন্দ্রে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ঈদের চার দিন পার হলেও শহরের বটতলা হাট এলাকায় নির্মিত জোসনারা পার্কসহ মহানন্দা সেতু, রাবার ড্যাম প্রকল্প এলাকা ও শেখ হাসিনা সেতু, সোনামসজিদ এলাকায় বিনোদনপ্রেমীদের পদচারণে মুখরিত হয়ে আছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরাঞ্চল চরবাগডাঙ্গা থেকে এই পার্কে সপরিবারে ঘুরতে আসা রাকিব উদ্দিন জানান, মহানন্দা নদীর ওপর শেখ হাসিনা সেতু নির্মিত হওয়ায় চরাঞ্চলের মানুষের কাছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে যাতায়াত সুবিধা বেড়েছে। তাই সহজ যোগাযোগের কারণে অটোরিকশা নিয়ে তিনি সপরিবারে এই পার্কে ঘুরতে এসেছেন। তিনি জানান, শহরে কোনো বিনোদন কেন্দ্র না থাকায় বিভিন্ন মানুষ এতদিন শেখ হাসিনা সেতুতে বিনোদন লাভের জন্য আসতেন। কিন্তু এবার শহরের বটতলাহাট নামক স্থানে একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র জোসনারা পার্ক নির্মিত হওয়ায় এবার তারা এখানে বেড়াতে এসেছেন। এ সময় তার স্ত্রী শিরিন খাতুন জানান, ছেলে-মেয়ে নিয়ে তারা ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে এখানে এসেছেন এবং সুলভে বিভিন্ন রাইড উপভোগ করলেন। তিনি বলেন, জেলার মানুষের বিনোদনের জন্য এ রকম পার্ক আরও গড়ে তুলতে হবে।

এ বিষয়ে জোসনারা পার্কের কর্ণধার চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আলহাজ মোখলেসুর রহমান বলেন, এতদিন শহরসহ চরাঞ্চলের মানুষের বিনোদনের জন্য নির্দিষ্ট কোনো স্থান ছিল না। এখন এ সমস্যা দূর হয়েছে।

শিবগঞ্জ উপজেলার ঐতিহাসিক সোনামসজিদসহ চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের মহানন্দা সেতু ও রাবার ড্যাম এলাকায়ও বিনোদনপ্রেমীদের ভিড় দেখা যাচ্ছে। মহানন্দা সেতুর অপর প্রাপ্ত বারঘরিয়া নামক স্থানে চটপটি বিক্রেতা সুমন আলী জানান, ঈদের দিন থেকে এই এলাকায় মানুষের ঢল নামায় তিনি প্রতিদিন ২০ হাজার টাকার চটপটি বিক্রি করছেন। এতে তার আয় অনেক গুণ বেড়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর