রবিবার, ৮ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

জয় বাংলা স্লোগানে মুখর সেই ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেন

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

জয় বাংলা স্লোগানে মুখর সেই ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেন

জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগানে প্রকম্পিত হলো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেন। হাজার দশেক দর্শক-শ্রোতার সরব উপস্থিতিতে ৬ মে শুক্রবার সন্ধ্যায় ‘গোল্ডেন জুবিলি বাংলাদেশ কনসার্ট’ ঘিরে বহুজাতিক এক সমাবেশে গানে গানে না হলেও প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের বক্তব্যে অদম্য গতিতে এগিয়ে চলা বাংলাদেশ দৃশমান হলো। উল্লেখ্য, একাত্তরের ১ আগস্ট এ ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠিত হয় শরণার্থীদের সাহায্যার্থে ও মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে আন্তর্জাতিক জনমত সুসংহত করতে। সেই ঐতিহাসিক কনসার্টের ৫০তম বার্ষিকীতে এ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চললেও নানা কারণে তা এক বছর বিলম্বে অনুষ্ঠিত হলো হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে। বাংলাদেশের চিরকুটের শারমিন সুলতানা সুমি তার ব্যান্ডের অসাধারণ জনপ্রিয় ছয়টি গানে মাতোয়ারা করেন বিশাল এ সমাগমকে। গানের ফাঁকে বাংলাদেশকেও দৃশ্যমান করার চেষ্টা করেছেন সুমি। তার জন্য বরাদ্দ ছিল মাত্র ২০ মিনিট। এ জন্য তিনি কোনো গানই পুরোপুরি পরিবেশন করতে সক্ষম হননি। তাই তৃপ্তি নিয়ে নিকট ভবিষ্যতে আবারও গাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি। সুমির সঙ্গে যন্ত্রসংগীতে অসাধারণ নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন ইমন চৌধুরী ও জাহিদ নীরব। রাত ৮টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও মিনিট বিশেক দেরিতে শুরু হয় অনুষ্ঠান। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম  মোজাম্মেল হক, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমান, সংসদ সদস্য অপরাজিত হক এবং সংসদ সদস্য নুরুল আমিন জাতীয় সংগীতে অংশ নেন। এ পর্বে নেতৃত্ব দেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী কাদেরী কিবরিয়া। বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আইসিটিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়সহ উপস্থিত সবাই দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীতে অংশ নেন। ভিনদেশিরাও গভীর শ্রদ্ধায় দাঁড়িয়ে বাঙালির সঙ্গে কণ্ঠ মেলান। এরপর জার্মানির ব্যান্ড ‘স্করপিয়ন্স’ মঞ্চ সাজাতে ৩৫ মিনিটের অধিক সময় ক্ষেপণ করে। এ সময়কে কাজে লাগাতে ন্যূনতম উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি বলে দর্শকরা বিরক্তি প্রকাশ করেন। কারণ প্রতিটি মিনিটের মূল্য ছিল হাজার ডলারের বেশি। সে সময় সজীব ওয়াজেদ জয়কে বক্তব্যের সুযোগ দিলে তিনি নিশ্চয়ই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা রচনার পথে তারই কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কীভাবে বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে তা বলতে পারতেন। উল্লেখ্য, এ অনুষ্ঠানের অর্ধেকের বেশি ছিলেন আমেরিকান। তবে স্করপিয়ন্সের শিল্পীরা পর্দা ওঠানোর পর নেচে ওঠে গোটা মিলনায়তন। রকস্টাররা সবাইকে তাক লাগিয়ে এক ঘণ্টারও অধিক সময় সংগীত পরিবেশন করেন। শিল্পীর মধ্যে ছিলেন ক্লাউস মেইন, রুডলফ শেঙ্কার, মিক্কে ডি, মাইকেল শেঙ্কার ও ম্যাথিয়াস জাবস।

শুরুতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের মডেলে পরিণত হওয়ার উন্নয়ন চিত্র উপস্থাপনের পাশাপাশি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাক সম্পর্কিত ঐতিহাসিক ভাষণের অংশবিশেষ প্রচারের সময় স্ক্রিনে ইংরেজি অনুবাদ থাকলে খুব ভালো হতো বলে অনেকে উল্লেখ করেছেন। বিএনপির সমর্থকরাও ছিলেন দর্শক-গ্যালারিতে। বিমুগ্ধচিত্তে তারাও উপভোগ করেছেন পুরো অনুষ্ঠান।

এ অনুষ্ঠানে শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তাদের সম্মান জানালে অনুষ্ঠানের প্রেক্ষাপট আরও গ্রহণযোগ্যতা পেত বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে। কারণ একাত্তরের সেই কনসার্টের মতো এবারের কনসার্টে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কোনো গানের ব্যবস্থা যেমন ছিল না, একইভাবে পণ্ডিত রবিশঙ্কর কিংবা জর্জ হ্যারিসনের স্বজনেরাও আমন্ত্রিত ছিলেন না। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি মালিকানাধীন প্রথম ও এখন পর্যন্ত একমাত্র ইউনিভার্সিটি ‘ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’র চ্যান্সেলর ইঞ্জিনিয়ার আবুবকর হানিফ বলেন, ‘এ উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাচ্ছি। বহুজাতিক সমাজে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিংয়ে এটি অবশ্যই ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।’ অনুষ্ঠান গ্যালারিতে বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) মঞ্জুর আহমেদ বলেন, ‘খুব ভালো লাগছে যে ৫০ বছর আগে যে বিষয়টি আমরা মিস করেছি, যে সম্পর্কে শুনছি, ইতিহাসে পড়ছি, সেই কনসার্টের স্মরণে আজকের এ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে নিজেকে গৌরবান্বিত বোধ করছি।’

উল্লেখ্য, ২০ হাজার আসনবিশিষ্ট এ মিলনায়তনের অধিকাংশই পূর্ণ হয়েছিল। তবে অনুষ্ঠানের প্রচারণা নিয়ে রহস্যজনক নীরবতা-গোপনীয়তার ব্যাপারটি না ঘটলে পুরো মিলনায়তন ভরে যেত এতে কোনো সন্দেহ নেই- এমন অভিমত পোষণ করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর