রবিবার, ৮ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

সামাজিক নিরাপত্তায় বরাদ্দ বাড়ছে সামান্যই

মানিক মুনতাসির

সামাজিক নিরাপত্তায় বরাদ্দ বাড়ছে সামান্যই

করোনা মহামারির কারণে দেশের প্রায় ২ কোটি মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। এ ছাড়া আয় কমেছে অধিকাংশের। জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ার ফলে মূল্যস্ফীতির চাপও ঊর্ধ্বমুখী। কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগের চাকাও প্রায় বন্ধ। রোজার সময় মানুষকে কিছুটা স্বস্তি দিতে কম দামে নিত্যপণ্য

সরবরাহের চেষ্টা করেছে সরকার। এদিকে জ্বালানি ও ভোজ্য তেলের দাম অস্বাভাবিক। অথচ আসছে বাজেটে বিপুলসংখ্যক অভাবী মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় আনার তেমন নতুন কোনো উদ্যোগ থাকছে না। এ কর্মসূচির আওতায় সুবিধাভোগীদের ভাতাও বাড়ছে খুবই কম হারে। বাজেট প্রণয়নে জড়িত অর্থ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য। সূত্র জানান, অন্তত সাত বছর আগে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা দ্বিগুণ করা হয়। সে সময় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সুবিধাভোগীদের ভাতাও বাড়ানো হয়। এরপর টানা ছয় বছর ধরে আর এ ভাতা বাড়ানো হয়নি। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরেও সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় সুবিধাভোগীদের ভাতা খুব একটা বাড়ানো হচ্ছে না বলে খসড়া বাজেটে এমন পরিকল্পনা করা হয়েছে। অবশ্য তা এখনো চূড়ান্ত নয়। বাজেট চূড়ান্ত করার আগে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে এ পরিকল্পনায় পরিবর্তনও আসতে পারে। বাজেটের খসড়া রূপরেখা অনুযায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সার্বিকভাবে বরাদ্দ বাড়বে সাকল্যে ৩ হাজার কোটি টাকা। তবে উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়বে কয়েক লাখ। কিন্তু উপকারভোীদের ভাতার পরিমাণ বাড়বে খুবই সামান্য। অর্থ বিভাগের সূত্রগুলো বলছেন, নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে বরাদ্দ রয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা। সে হিসাবে আসছে বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ বাড়তে পারে মাত্র ৩ থেকে ৪ হাজার কোটি টাকা। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, আসছে অর্থবছরে নতুন করে ১১ লাখ সুবিধাভোগীকে এ কর্মসূচির আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। দুই বছর আগে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ১১২ উপজেলায় ভাতা দেওয়া হতো। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে বাড়ানো হয় আরও ১৫০ উপজেলা। ফলে বর্তমানে ২৬২ উপজেলায় বয়স্ক ভাতা এবং বিধবা ও স্বামীনিগৃহীতাদের ভাতা দেওয়া হচ্ছে। আসছে বছরে আরও ১০০ উপজেলায় এ কার্যক্রম বাড়ানো হচ্ছে। এতে দেশের ৬৪ জেলার ৪৯৫ উপজেলার মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তা ভাতার আওতায় মোট উপজেলার সংখ্যা দাঁড়াবে ৩৬২। অথচ সাকল্যে বরাদ্দ বাড়ানো হতে পারে মাত্র ৩ থেকে ৪ হাজার কোটি টাকা। ফলে করোনা মহামারির আঘাতে নবসৃষ্ট দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনার সুষ্ঠু কোনো পরিকল্পনা এখনো নিতে পারেনি সরকার। যদিও অধিকসংখ্যক মানুষকে এ কর্মসূচির আওতায় আনার কথা বলা হচ্ছে অথচ বরাদ্দ বাড়ানো হবে খুবই কম, যা অসম পরিকল্পনারই অংশ বলে মনে করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনা মহামারির আঘাতে সারা দেশে বিপুলসংখ্যক মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যের খাতায় না লিখিয়েছে। নতুন করে কর্মসংস্থান এবং বিনিয়োগের চাকাও ঘুরছে ধীরগতিতে। সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় বরাদ্দ ও ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর