সোমবার, ৯ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

রাজস্ব খাতে যত চ্যালেঞ্জ

♦ এনবিআরের কোনো সংস্কার হয়নি। বরং কর আদায়ে দুর্বলতা ও অদক্ষতা আছে : ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ♦ যুদ্ধে অর্থনৈতিক মন্দা শুরু। পণ্যের দাম বেড়েছে, আমদানিতে সমস্যা হবে, কমবে রাজস্ব আয় : মো. জসিম উদ্দিন

রুহুল আমিন রাসেল

রাজস্ব খাতে যত চ্যালেঞ্জ

প্রতি বছর প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয়ের বিশাল লক্ষ্য নির্ধারণ করছে সরকার। কিন্তু কোনো অর্থবছরই সেই লক্ষ্য অর্জন করতে পারছে না জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সংস্থাটির বড় কোনো সংস্কারও হয়নি বলে মনে করেন অংশীজনরা।

তাদের মতে, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে এনবিআরের ভূমিকা মুখ্য। কিন্তু সেটা নেই। কর-জিডিপি বাড়ছে না। কর আদায়ে বড় দুর্বলতা, অদক্ষতা ও কর ফাঁকি রয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয়েছে। ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান লাভ করতে পারছে না। অর্থনীতিতে গতি কমে গেছে। ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের আয় বাড়েনি। খরচ বেড়েছে। কিন্তু কর-ভার কমেনি। ফলে রাজস্ব আদায় কমবে। এখন রাজস্ব আয় বাড়াতে কর-হার কমিয়ে আয়কর ও ভ্যাটের আওতা সম্প্রসারণ প্রয়োজন। রাজস্ব খাতে এ পদক্ষেপসমূহ নেওয়াই বড় চ্যালেঞ্জ।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) এনবিআরকে বলেছে, সব উদ্যোক্তার কর নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করে তা বিনিয়োগের প্রামাণিক দলিল হিসেবে গণ্য করা হোক। পণ্যের ব্যাপক মূল্য ও ব্যবসার খরচ বৃদ্ধির কারণে কর আপাতন অত্যধিক হারে বেড়ে গেছে। ফলে সাধারণ ভোক্তার ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে ও মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ক্রমবর্ধমান পণ্যমূল্য দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মুখে বড় কথা বললেও রাজস্ব আদায়ে এনবিআরের কোনো সংস্কার হয়নি। বরং কর আদায়ে দুর্বলতা ও অদক্ষতা আছে। কর ফাঁকি আছে। সরকারি কোষাগারে সঠিকভাবে রাজস্ব জমা হচ্ছে না। ভ্যাট-নির্ভরতা বেশি। ফলে আগামী বাজেটে রাজস্ব আয়ই সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এখন আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্য দিয়ে শুল্ক-কর আয় বাড়ানোর সুযোগ নেই। ফলে রাজস্ব আদায় বড় চ্যালেঞ্জ। অনেকটা স্বনির্ভর হওয়ায় পোশাকশিল্পে ভর্তুকি কমানো উচিত। অন্যান্য রপ্তানি খাতে ভর্তুকি সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন।

খ্যাতনামা এই  অর্থনীতিবিদের মতে, এনবিআরকে নির্দিষ্ট গন্ডি থেকে বেরিয়ে গ্রাম ও জেলা শহরগুলোতে কর আদায়ে নজর দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে ভ্যাটের বদলে আয়কর আদায়ে বেশি নজর দেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি আসছে বাজেটে সরকারকে ব্যয়ের খরচ কমাতে হবে। উন্নয়ন বাজেটের অহেতুক প্রকল্প বন্ধ করতে হবে। যেসব বড় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, তা বাস্তবায়নে সরকারের নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর।

এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয়েছে। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। শিল্পের কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় বিশ্ববাজারে আমরা প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারিয়েছি। ডলারের দাম বাড়ছেই। ফলে আগামীতে ডলারের ঘাটতি হবে। এতে আমদানিতে সমস্যা হতে পারে। আমদানির গতি শ্লথ হতে পারে। এর প্রভাবে স্থানীয় কর ও ভ্যাট আদায় কমে যেতে পারে। পণ্যের চাহিদা কমে গেলে আগামীতে কর ও ভ্যাটে সরকারের আয় কমবে। এসব চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় নিয়ে আগামী অর্থবছরের রাজস্ব বাজেট তৈরি করতে হবে।

এই শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতা আরও বলেন, চলমান বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার লক্ষ্যে দেশের বিনিয়োগ ও উৎপাদনশীল খাতকে দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করার জন্য একটি সুদূরপ্রসারী ও যুগোপযোগী পরিকল্পনার প্রতিফলন বাজেটে থাকতে হবে। জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং শিল্পায়নের স্বার্থে একটি শিল্প ও বিনিয়োগবান্ধব বাজেট প্রণয়নে সরকার আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাবে বলে মনে করছে এফবিসিসিআই।

জানা গেছে, আসছে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আয়ের প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। ইতোমধ্যে রাজস্ব বাজেটের খসড়া তৈরি করেছে এনবিআর। আগামী ১২ মে এই রাজস্ব বাজেট কাঠামো চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ১২ মে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন মন্ত্রী ও আমলা।

এনবিআর সূত্র বলছে, বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর আরোপিত কর-হার কমিয়ে মূল্য নিয়ন্ত্রণের কৌশল নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া কর্মসংস্থান বাড়াতে ও অর্থনীতিকে চাঙা করতে বিনিয়োগকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। কর-হার না বাড়িয়ে কর-জাল বা আওতা বাড়ানো হবে। চলমান বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ সংকট, যেমন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও এলডিসি উত্তরণ-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের ওপর।

এদিকে ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদসহ অন্য অংশীজনরা দীর্ঘদিন বলে আসছেন দেশের কর-জিডিপি বাড়ানোর কথা। কিন্তু কর-জিডিপি বাড়াতে হলে কর অব্যাহতি বাদ দিতে হবে বলে মনে করছে এনবিআর। এ বিষয়ে এনবিআরের শুল্ক অব্যাহতি ও প্রকল্প-সুবিধা শাখা থেকে ‘রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়তা প্রদানের নিমিত্তে অনুরোধপত্র’ পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা বিভাগের সচিবের কাছে।

ওই পত্রে এনবিআর বলেছে, স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে। বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দেশের চলমান উন্নয়নকে টেকসই করতে কর-জিডিপির অনুপাত বাড়ানোর বিকল্প নেই। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বিবেচনায় কর-জিডিপির অনুপাত পরিমাণে কম। মূলত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে শুল্ক-কর অব্যাহতির এ ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থানের উন্নতিতে এটি বড় একটি প্রতিবন্ধকতা। এ কর আদায় করা গেলে প্রকৃত কর-জিডিপির অনুপাত বর্তমানের দ্বিগুণ হয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নকে অধিক মাত্রায় ত্বরান্বিত করা সম্ভব।

অব্যাহতির পরিবর্তে প্রযোজ্য শুল্ক-করাদি পরিশোধ সাপেক্ষে পণ্য ছাড়ের মাধ্যমে কর-জিডিপির হার বৃদ্ধির বিষয়ে অর্থমন্ত্রী ২০১৬ সালের ১০ মে সব মন্ত্রণালয়/বিভাগের সিনিয়র সচিব/সচিবদের উপস্থিতিতে একটি উচ্চপর্যায়ের সভায় অনুশাসনও দেন। এ ছাড়া অর্থমন্ত্রী ২০১৯-২০ বাজেট বক্তৃতায় বলেছিলেন, বিভিন্ন খাতে কর অব্যাহতি যতটা সম্ভব পরিহার করা হবে। অস্বাভাবিক কোনো কারণ ছাড়া এসআরও জারি পরিহার করা হবে। এতে রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আসবে। সরকারের প্রতি ব্যবসায়ীদেরও আস্থা বেড়ে যাবে।

এ প্রসঙ্গে এনবিআরের শুল্ক বিভাগের সাবেক সিনিয়র সদস্য মো. ফরিদ উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এনবিআর গতানুগতিকতার বাইরে যেতে পারছে না। ভালো কিছু করতে গেলে বড় পরির্বতন দরকার। এ জন্য সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার দরকার। এনবিআরের নিজস্ব উদ্যোগও থাকতে হবে। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও দাবি উঠতে হবে। তার মতে, এনবিআরের বড় চ্যালেঞ্জ হলো, সংস্থাটি কোনো অর্থবছরেই রাজস্ব আয়ের টার্গেট অর্জন করতে পারে না। কর-জিডিপি বাড়ছে না। বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এই সময়ে শুল্ক-কর আয় বাড়ছে। এতে এনবিআরের কোনো কর্তৃত্ব নেই। মূলত করব্যবস্থা সহজ ও স্বচ্ছ করা দরকার। এতে ব্যবসায়ীদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়বে। বিনিয়োগ বাড়বে। ফলে কর্মসংস্থান বাড়বে। এই বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে এনবিআরের ভূমিকা মুখ্য বলে মনে করেন অবসরপ্রাপ্ত এই কাস্টম কর্মকর্তা।

এনবিআরের আয়কর বিভাগের সাবেক সিনিয়র সদস্য সৈয়দ আমিনুল করিম বলেন, বাজেটের রাজস্ব টার্গেট অর্জন করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। চলমান বৈশ্বিক ও দেশীয় বাস্তবতায় অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান প্রত্যাশিত লাভ করতে পারছে না। এমনকি অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ব্যাংক ঋণের পুনঃতফসিল করতে পারছে না। এসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষে এখন বড় আকারে কর প্রদান কঠিন হয়ে পড়েছে। আবার ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের আয় বাড়েনি। আয় না বাড়লেও খরচ বেড়েছে। কিন্তু কর-ভার কমেনি। এটাও চ্যালেঞ্জ।

তিনি বলেন, বিভিন্ন মহলে আলোচনা উঠেছে, আসছে বাজেটে কর অব্যাহতির সুযোগ প্রত্যাহার করা হবে। এটা করা হলে অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বিশাল ধাক্কা খাবে। যদিও কর-জাল বাড়াতে এনবিআরের কোনো জরিপ নেই। কর বিভাগে কোনো সংস্কারও করা হয়নি। ফলে করদাতা বৃদ্ধির সুযোগও নেই। এমন পরিস্থিতিতে আগামী বাজেটেও অপ্রদর্শিত অর্থের বিনিয়োগ অব্যাহত রাখা দরকার বলে মনে করেন অবসরপ্রাপ্ত এই আয়কর কর্মকর্তা। দেশের প্রাচীন বাণিজ্য সংগঠন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি আমদানি-নির্ভর। বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম বাড়ছেই। অন্যান্য পণ্যসামগ্রীর দামও বাড়ছে।

এর সঙ্গে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে গতি কমে গেছে। এখন সরকার রাজস্ব আয় কীভাবে বাড়াবে, এটাই বড় চ্যালেঞ্জ। আসছে বাজেটে ২ দশমিক ৫০ শতাংশ করপোরেট কর কমালেও শেষরক্ষা হবে না। ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমায় ছাড় দিতেই হবে। পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দিতে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পরামর্শ এই ব্যবসায়ী নেতার।

সম্প্রতি আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে আমদানি শুল্ক, আয়কর ও মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাটবিষয়ক প্রস্তাবনা এনবিআরকে দিয়েছে এফবিসিসিআই। সংগঠনটির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন স্বাক্ষরিত প্রস্তাবনার সারসংক্ষেপে বলা হয়, আয়কর ও মূসকের আওতা সম্প্রসারণ করে কর-হার কমিয়ে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এ জন্য বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে আয়কর ও মূসকের আওতায় নিবন্ধনের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট কর কর্তৃপক্ষ, বিভিন্ন বাণিজ্য ও পেশাজীবী সংগঠন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংক, লাইসেন্স ও নিয়ন্ত্রণকারী সরকারি প্রতিষ্ঠানকে যৌথভাবে দায়িত্ব পালন করার বিশেষ বিধান করতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ধরনের কাজে করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন ও কর পরিশোধের প্রমাণ দাখিল বাধ্যতামূলক করতে হবে।

এ সমস্যা নিরসনে আগামী অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৩০ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে বিশেষ করে উৎপাদনমুখী খাতসহ নিত্য ব্যবহার্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে মোট প্রাক্কলিত আমদানি শুল্কের বিপরীতে আনুপাতিক হারে আমদানি শুল্ক রেয়াত দেওয়ার প্রস্তাব করেছে এফবিসিসিআই। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এ ধরনের শুল্ক ও কর রেয়াতের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রাজস্ব মামলায় ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আয়কর আপিলাত ট্রাইব্যুনালকে নিরপেক্ষ ও স্বাধীন করার উদ্দেশ্যে অবসরপ্রাপ্ত আয়কর কর্মকর্তা অথবা বিজ্ঞ ও অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী নেতা অথবা পেশাজীবীদের মধ্য থেকে একজন সদস্য নিযুক্ত করা হোক।

শুল্ক ও কর-সংক্রান্ত প্রস্তাবে এফবিসিসিআই বলেছে, অহেতুক খরচ ও সময় কমানোর জন্য রপ্তানি খাতসহ শিল্প খাতে উৎস ও আগাম কর ফেরত দেওয়ার পরিবর্তে বিলোপ করতে হবে। জমি ক্রয়, নির্মাণ এবং রপ্তানিমুখী শিল্প ও সেবা খাতের ইউটিলিটি বিলসহ অন্যান্য ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কিত সমস্ত ভ্যাট ও কর (বার্ষিক হিসাবকৃত আয়কর ব্যতীত) সম্পূর্ণরূপে মওকুফ করতে হবে। শিল্প খাতে আবশ্যকীয় মূলধনী যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ, সব ধরনের কাঁচামাল যে খাতে ব্যবহৃত হয় তাদের প্রত্যেককে প্রজ্ঞাপনের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না করায় খাতভিত্তিক অসঙ্গতি দেখা দিচ্ছে। একটি কাঁচামাল একাধিক শিল্পে ব্যবহৃত হতে পারে এবং ওসব শিল্পের তালিকা প্রণয়ন করাও যেমন দুষ্কর, তেমনি ওসব কাঁচামালের বর্ণনায় সব শিল্পের নাম উল্লেখ করাও বাস্তবে সম্ভব নয়।

অন্যদিকে মাইক্রো, ক্ষুদ্র এবং অধিকাংশ মাঝারি খাতের উদ্যোক্তাদের কাঁচামাল ও বিভিন্ন উপকরণ সরাসরি আমদানি করার সচ্ছলতা না থাকায় বাণিজ্যিক আমদানির ক্ষেত্রে উচ্চতম শুল্কের কারণে তারা খোলাবাজার থেকে অত্যধিক মূল্যে ক্রয় করতে বাধ্য হন। আমদানিকারক নির্বিশেষে মাইক্রো, ক্ষুদ্র মাঝারি, নারী এবং নতুন শিল্পোদ্যোক্তাসহ সব শ্রেণির জন্য বিনিয়োগবান্ধব ও উৎপাদনশীল পণ্যভিত্তিক আমদানি শুল্ক স্তর বাস্তবায়নের প্রস্তাব করেছে এফবিসিসিআই।

আয়কর-সংক্রান্ত প্রস্তাবে এফবিসিসিআই বলেছে, দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের গতিশীলতা সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে একটি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগবান্ধব এবং উৎপাদনশীল টেকসই সরল ও আন্তর্জাতিক সর্বোত্তম চর্চার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ আয়কর পরিকাঠামো নিশ্চিত করা অপরিহার্য।

ভ্যাট-সংক্রান্ত প্রস্তাবে এফবিসিসিআই বলেছে, বর্তমানে পৃথক পৃথক এসআরও বা প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পণ্য ও সেবা খাতভিত্তিক ৫ শতাংশ, সাড়ে ৭ শতাংশ  ও ১০ শতাংশ হারে সুনির্দিষ্ট মূসক বা ভ্যাট আরোপিত হওয়ায় পণ্য এবং সেবা খাতে কর আপাতনে অসঙ্গতি দেখা দিয়েছে।

আগাম ও উৎসে করবিষয়ক জটিলতা নিরসনের প্রস্তাব দিয়ে এফবিসিসিআই বলেছে, শিল্প পরিচালনা ব্যয় কমানোর জন্য আমদানি পর্যায়ে শিল্প খাতের প্রদেয় আগাম আয়কর এবং আগাম কর প্রত্যাহার করা হোক। সরকার কর্তৃক ইস্যুকৃত মুদ্রার মাধ্যমে নগদ মূল্যে পারস্পরিক লেনদেন করা মৌলিক সাংবিধানিক অধিকার। বাংলাদেশে গৃহীত ইন্টারন্যাশাল ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ডের অধীনে নগদ লেনদেন নিষিদ্ধ করা হয়নি। তাই মূসক আইনের ৪৬(১)(ক) উপদফা রহিত করা হোক। আয়কর অধ্যাদেশে নগদ লেনদেনের ক্ষেত্রে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত সীমারেখা আরোপ করা হয়েছে। এই সীমারেখা সংবিধানের যথাযথ সংশোধনের মাধ্যমে সব ক্ষেত্রে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করেছে এফবিসিসিআই।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর