সোমবার, ৯ মে, ২০২২ ০০:০০ টা
খুনোখুনি সারা দেশে

বাবার অপমানের প্রতিশোধ নিতে গিয়ে হন খুন

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

বাবাকে চরম অপমানের বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মহসীন সরকার। সালিশে বিষয়টি মীমাংসা হলেও ‘অপমানকারী’ আরিফকে শায়েস্তা করতে ভয়ানক ফন্দি আঁটেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত পাল্টা আক্রমণে প্রতিপক্ষ আরিফের হাতে খুন হন মহসীন। অভিযুক্ত আরিফ আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ তথ্য জানিয়েছেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া আরিফ পুলিশের কাছেও একই কথা তুলে ধরেন। নিজেকে রক্ষার জন্য আরিফ এ জাতীয় বক্তব্য দিতে পারেন বলে আইনজীবীদের একটি সূত্র জানিয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া আখাউড়া উপজেলার খলাপাড়ার বাসিন্দা মো. মহসীন সরকার (৩৫) গত সোমবার সন্ধ্যায় খুন হন। মো. মহসীন উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের খলাপাড়া গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে ও বিডি ফুডসসহ একাধিক কোম্পানির স্থানীয় পরিবেশক। পৌর এলাকার রাধানগরে রাজীব কটেজে তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

পুলিশ জানায়, আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে আরিফ কী বলেছে সেটা যাচাই-বাছাই করা হবে। পুলিশ কিছু বিষয় মাথায় রেখে ঘটনার তদন্ত চালাচ্ছে। আরিফের শরীরের আঘাতও পুলিশের মনে সন্দেহের দানা বাঁধে।

মহসীন হত্যার পর তার বাবা শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে আখাউড়া থানায় মামলা করেন। এ ঘটনার আরিফের বাবা আউয়াল মিয়াকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তিন দিনের চেষ্টায় একাধিক জেলায় অভিযান চালিয়ে ৬ মে আরিফকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে আখাউড়া থানা পুলিশ। শনিবার বিকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট স্বাগত সৌম্যর আদালতে আরিফ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে আরিফ জানান, প্রবাসে থাকা অবস্থায় তার স্ত্রীকে নিয়ে কুৎসা রটায় মহসীনের পরিবার। এ ঘটনা কেন্দ্র করে মহসীনের বাবাকে অপমানিত করেন আরিফ। এ নিয়ে সালিশ বৈঠকে বিষয়টি মীমাংসা হলেও মেনে নিতে পারছিলেন না মহসীন।

 এরই জের ধরে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আরিফের ওপর আক্রমণ চালায় মহসীনসহ কয়েকজন। আরিফ তখন ফলসহ বিভিন্ন জিনিস নিয়ে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন। স্ত্রীর দেওয়া তালিকা অনুযায়ী একটি ছুরিও কেনেন তিনি। হামলার সময় ওই ছুরিতেই তিনি এলোপাতাড়ি আক্রমণ করেন বলে স্বীকারোক্তিতে উল্লেখ করেন। কিছুদিনের মধ্যেই আরিফের আবার প্রবাসে চলে যাওয়ার কথা। তবে মহসীনের সঙ্গে থাকা মো. শফিউল আলম নামে এক ব্যক্তি তাৎক্ষণিকভাবে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, সন্ধ্যার দিকে মোটরসাইকেলে তারা রাধানগর থেকে খলাপাড়া যাচ্ছিলেন। মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন মহসীন। এ সময় পাঁচ-ছয়জন এসে মহসীনের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। তাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়। হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরিবারের লোকজন জানান, কিছুদিন আগে মহসীনের বাবাকে অপদস্থ করেন একই এলাকার আউয়াল মিয়ার ছেলে মো. আরিফ। বিষয়টি সামাজিকভাবে মীমাংসা হয়। এরই জেরে তাকে হত্যা করা হয়। হাসপাতালে থাকা মহসীনের বাবা শহিদুল ইসলাম গায়ে লেগে থাকা রক্ত দেখিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ ঘটনার জন্য তিনি আরিফকে দায়ী করেন।

আখাউড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সঞ্জয় সরকার জানান, কৌশল অবলম্বন করে আরিফকে ধরা হয়। পরে তার দেওয়া স্বীকারোক্তি মতে নিজ বাড়ি থেকে হত্যাকাে  ব্যবহৃত ছুরিটি উদ্ধার করা হয়। আখাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মিজানুর রহমান জানান, আরিফ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার পর সেগুলো যাচাই করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর