সোমবার, ৯ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

প্রসবের পর কমোডে আটকে গেল নবজাতক

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

প্রসবের পর কমোডে আটকে গেল নবজাতক

বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডের শৌচাগারের কমোডের পাইপ ভেঙে এক নবজাতক মেয়েকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার বিকালে এ ঘটনা ঘটে। উদ্ধার হওয়া নবজাতককে হাসপাতালের বিশেষ সেবা ইউনিটে (স্ক্যানু) ও তার মাকে প্রসূতি ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার গণমান শেখপাড়া এলাকার বাসিন্দা নেয়ামত উল্লাহর স্ত্রী শিল্পী বেগম অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। বাচ্চা প্রসবে তার জটিলতা দেখা দেয়।

পরে তাকে স্বরূপকাঠি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে শনিবার পাঠানো হয় বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এ হাসপাতালে ভর্তির পর চিকিৎসকেরা শিল্পী বেগমের সন্তান প্রসবের জন্য অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন। শনিবার বিকালে তার অস্ত্রোপচারের সময় নির্ধারণ করা ছিল। এ জন্য নেয়ামত উল্লাহ প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র আনতে হাসপাতালের সামনে যান। এদিকে শিল্পী বেগম শৌচাগারে গেলে সেখানেই তার সন্তান প্রসব হয়ে যায় এবং শৌচাগারের কমোডের মধ্যে নবজাতকটি পড়ে আটকে যায়। পরে কমোডের পাইপ ভেঙে জীবিত অবস্থায় নবজাতককে উদ্ধার করা হয়। নেয়ামত উল্লাহ বলেন, ‘আমার স্ত্রীর সন্তান প্রসবে জটিলতা দেখা দেওয়ায় তাকে শনিবার সকালে বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডে ভর্তি করি। এরপর চিকিৎসকেরা জরুরিভাবে বিকালে সিজার করার পরামর্শ দেন। বিকালে অস্ত্রোপচারের জন্য ওষুধ কিনে ফিরে দেখি শৌচাগারের সামনে অন্য রোগী ও স্বজনদের ভিড়। আত্মীয়স্বজন কান্নাকাটি করছেন। এ সময় উপস্থিত লোকজন জানান, আমার স্ত্রী শৌচাগারেই সন্তান প্রসব করেছেন। কিন্তু কোথাও নবজাতক শিশুকে না দেখে উপস্থিত লোকজনের কাছে জানতে চাই, বাচ্চা কোথায়। তারা জানান, প্রসবের পর বাচ্চা শৌচাগারের কমোডের মধ্যে পড়ে গেছে। এ সময় আমাকে একজন কমোডের মধ্যে হাত দিতে বলেন। আমি পুরো হাত ঢুকিয়েও কিছু পাইনি, কিন্তু পাইপের মধ্যে থেকে কান্নার আওয়াজ পাচ্ছিলাম।’ নেয়ামত উল্লাহ বলেন, ‘কান্নার আওয়াজ শুনে আমি বিচলিত হয়ে যাই। কোনো কিছু ভাবার মতো অবস্থা ছিল না। কী করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। একপর্যায়ে হাসপাতালের লোকজন জানান, ফায়ার সার্ভিসে খবর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমি শিশুটির কান্নার শব্দ শুনে আর সহ্য করতে পারছিলাম না। এরপর কারও জন্য অপেক্ষা না করে দ্রুত কমোডের পাইপ ভেঙে ফেলি। এরপর বাচ্চাকে বের করে আনি।’ উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে নেয়ামত বলেন, ‘আমার স্ত্রীর প্রসববেদনা এতটাই তীব্র ছিল যে তিনি টেরই পাননি কখন সন্তান প্রসব হয়ে গেছে। সঙ্গে এক আত্মীয় ছিলেন। তিনি না দেখলে হয়তো আমার মেয়েকে আর বাঁচাতেই পারতাম না।’ নেয়ামত উল্লাহ ও শিল্পী বেগম দম্পতির চার বছর বয়সী আরও একটি কন্যাসন্তান আছে। নেয়ামত উল্লাহ পেশায় একজন জেলে। হাসপাতালের নবজাতক শিশুর বিশেষ সেবা ইউনিটের (স্ক্যানু) প্রধান ডা. এম আর তালুকদার মুজিব জানান, এটা একটা এক্সিডেন্টাল ডেলিভারি হয়েছে। টয়লেটে ওই নারীর স্টেইন হয়েছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এটাকে প্রিসিভিটাস ডেলিভারি বলে। যেভাবে ডেলিভারি হয়েছে তাতে খারাপ কিছু হওয়ার আশঙ্কা ছিল। নবজাতক এখন সুস্থ আছে। তার শরীরের রং ভালো, অ্যাক্টিভিটি ভালো, ফিডিংয়েরও আগ্রহ আছে। স্ক্যানু ইউনিটে তাকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলে তিনি জানান। এদিকে টয়লেটের প্যানে নবজাতক ভূমিষ্ঠ হওয়া এবং কমোডের মধ্য থেকে পাইপে গিয়ে আটকে পড়ার বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, নবজাতক ও তার মা সুস্থ আছেন। হাসপাতালের টয়লেট-বাথরুমগুলো আধুনিকায়ন করা প্রয়োজন। ওই টয়লেটে প্যানের স্থানে কমোড থাকলে এমন দুর্ঘটনা ঘটত না। ওই দুর্ঘটনার পর হাসপাতালের পূর্ত ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলীদের খবর দেওয়া হয়েছিল। তাদের চারজন প্রকৌশলী সরেজমিন পুরনো টয়লেট-বাথরুমের পরিস্থিতি দেখে গেছে। হাসপাতালের স্যানিটারি ব্যবস্থা শিগগিরই আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর