মঙ্গলবার, ১০ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

আরও প্রকট হবে ঘাটতির চাপ

মানিক মুনতাসির

আরও প্রকট হবে ঘাটতির চাপ

করোনা মহামারির কারণে সরকারের রাজস্ব আদায় কমেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে অনেক গুণ। অথচ সে হারে আয় বাড়েনি। বরং গত দুই বছরে বেশির ভাগ মানুষের আয় কমেছে। এ অবস্থায় আগের তুলনায় ভোগ-বিলাসের মাত্রা কমিয়ে দিয়েছে সাধারণ মানুষ। এতে সরকারের বাজেট বাস্তবায়নও বাধার মুখে পড়েছে। শুধু তাই নয়, চলতি (২০২১-২২) অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) সার্বিক বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৫ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৪৯০ কোটি ৭০ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ (প্রতি ডলার ৮৬ টাকা ৫০ পয়সা) প্রায় ২ লাখ ১৫ হাজার ৩২১ কোটি টাকা। এর আগে কোনো অর্থবছরে এত বেশি বাণিজ্য ঘাটতির মুখে পড়েনি বাংলাদেশ। ফলে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যেও (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) বড় ধাক্কা লেগেছে। অর্থ বিভাগের সূত্রগুলো বলছে, আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ আড়াই লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। বিশাল আকারের এই ব্যয় মেটাতে রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে এনবিআরকে। সরকারকে ঘাটতির জোগান দিতে হবে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে, একই সঙ্গে বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নিতে হবে। করোনাভাইরাসের অভিঘাত এবং ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে দেশে রাজস্ব আদায় কম হওয়ার কারণেই সরকারকে এ পথে যেতে হচ্ছে বলে জানান বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা। এখন পর্যন্ত খসড়া হিসাবে আসছে বাজেটের আকার ধরা হয়েছে প্রায় ৬ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। সে হিসাবে আগামী বছর ঘাটতি বাড়ছে ২৮ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। এ প্রসঙ্গে দেশবরেণ্য অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য গতকাল এক অনুষ্ঠানে বলেন, গত কয়েক মাসের ব্যবধানে বিপুল পরিমাণ বাণিজ্য ঘাটতির মুখে পড়েছে সরকার। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর। খাদ্যপণ্যের আমদানি বেড়ে যাওয়া এবং রপ্তানি ও রেমিট্যান্স কমে যাওয়া এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি মনে করেন। অর্থ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য প্রায় ৬ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার বাজেটের খসড়া আকার ঠিক করা হয়েছে। যা মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং চলতি অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে ৭৫ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার ধরা রয়েছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের বাজেটের ঘাটতিই ধরা হয়েছে প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির সাড়ে ৫ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে প্রাক্কলিত বাজেট ঘাটতি ধরা হতে পারে ২ লাখ ৪২ হাজার ৯৪১ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। সে হিসাবে ঘাটতি বাড়ছে ২৮ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। এদিকে এনবিআরের একটি সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) প্রথম আট মাস জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৪৯১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। যদিও গত অর্থবছরে একই সময়ে রাজস্ব আদায়ের হিসাবে বেশ এগিয়ে এনবিআর। গত বছর একই সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ১ লাখ ৫৩ হাজার ১০৪ কোটি ১০ লাখ টাকা। আর চলতি বছর আয় হয়েছে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৯৪৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। অর্থবছরের বাকি চার মাস মার্চ থেকে জুন- এই সময়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৪২ কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ করতে হবে। এ হিসাবে প্রতিদিন আদায় করতে হবে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা, যা অর্জন করা দুরূহ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। রাজস্ব আদায়ের এই লক্ষ্য অর্জিত না হলে স্বাভাবিকভাবেই রাজস্ব ঘাটতি বাড়বে। ফলে আসছে বছরে বাজেট ঘাটতি আরও প্রকট আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর