বৃহস্পতিবার, ১২ মে, ২০২২ ০০:০০ টা
কেমন বাজেট চাই । মো. জসিম উদ্দিন

কর সমন্বয় না হলে ধ্বংস হবেন ব্যবসায়ীরা

রুহুল আমিন রাসেল

কর সমন্বয় না হলে ধ্বংস হবেন ব্যবসায়ীরা

কর সমন্বয় না হলে স্থানীয় শিল্প থাকবে না এবং ব্যবসায়ীরা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম ট্রেড ভ্যাট বা এটিভি হিসেবে যে ৭ শতাংশ কর এনবিআর আদায় করছে, তা সমন্বয় করতে হবে। ব্যবসায়ী পর্যায়ে এ কর সমন্বয় করতে হলে ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা করতে হবে। এটা মোটেই সম্ভব নয়। ফলে স্থানীয় শিল্প থাকবে না, করহার আর এনবিআর থাকবে। ব্যবসায়ীরা ধ্বংস হয়ে যাবেন। এ অবস্থায় শিল্প পরিচালন খরচ কমানোর জন্য আমদানি পর্যায়ে শিল্প খাতের প্রদেয় আগাম আয়কর এবং আগাম কর প্রত্যাহার করতে হবে।

আসছে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন-এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। তিনি দেশে চলমান বৈষম্যমূলক করব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী বদ্বীপ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। সেটা বাস্তবায়নে ব্যবসায়ীরা যখন এগিয়ে এলেন তখনই এনবিআর নদী খননের মূলধনী যন্ত্রপাতি ড্রেজার আমদানিতে ৩৭ শতাংশ কর আরোপ করেছে। মূলধনী যন্ত্রপাতিতে ৩৭ শতাংশ কর আরোপ অন্যায্য ও চরম অন্যায়।  তিনি রাজস্ব খাতের মৌলিক সংস্কার চেয়ে বলেন, রাজস্ব আহরণ ও রাজস্ব নীতি কার্যক্রম পৃথক করে এনবিআরের ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন বিভাগ গঠন করতে হবে। রাজস্ব আহরণ থেকে রাজস্ব পলিসি কার্যক্রম পৃথক করে ২০০৮ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের জারি করা আদেশ এবং এ বিষয়ে ২০০৯ সালের বাজেট প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে হবে। শুল্ক ও কর হার যৌক্তিকীকরণ এবং সরকারের বিবেচনার জন্য অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বার্ষিক বাজেটের শুল্ক ও কর সংক্রান্ত সব বিষয় সংশোধন করতে হবে। বাণিজ্য, শুল্কায়ন ও পণ্য খালাস সুবিধা ত্বরান্বিত করতে বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো-সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। সুষম করব্যবস্থা, ভোক্তাস্বার্থ সংরক্ষণ ও উৎপাদনশীলতার ধারাবাহিক বৃদ্ধি সমুন্নত রাখতে বাংলাদেশের প্রত্যক্ষ কর ও পরোক্ষ করের বিদ্যমান অনুপাত ৩৫:৬৫ থেকে অতিদ্রুত ৬৫:৩৫ হারে নামিয়ে আনতে হবে। মো. জসিম উদ্দিন আরও বলেন, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কার্যকর এবং জোরদার না করে ফাঁকি দেওয়া কর আদায়ের জন্য প্রণোদনা হিসেবে নিয়মিত স্কেলের বেতন-ভাতাদি ছাড়াও কর কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত বিশেষ কমিশন প্রদানের বিধান বাতিল করতে হবে। এনবিআরের আয়কর, মূসক ও শুল্ক সম্পর্কিত সব অভিযোগ, বিরোধসহ মামলা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির আওতায় সম্পন্ন করতে হবে। আয়কর আপিলাত ট্রাইব্যুনালকে নিরপেক্ষ ও স্বাধীন করার উদ্দেশ্যে অবসরপ্রাপ্ত আয়কর কর্মকর্তা অথবা বিজ্ঞ ও অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী নেতা অথবা পেশাজীবীদের মধ্য থেকে একজন সদস্য নিযুক্ত করতে হবে। এফবিসিসিআই সভাপতি আমদানি শুল্ক, আয়কর ও মূসক বিষয়ক প্রস্তাব তুলে ধরে বলেন, সব উদ্যোক্তার কর নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করে বিনিয়োগের প্রামাণিক দলিল হিসেবে গণ্য করতে হবে। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, আয়কর ও মূসকের আওতা সম্প্রসারণ করে করহার কমিয়ে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ বাড়ানো প্রয়োজন। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ধরনের কাজে করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন ও কর পরিশোধের প্রমাণ দাখিল বাধ্যতামূলক করতে হবে। তিনি বলেন, অহেতুক খরচ এবং সময় কমানোর জন্য রপ্তানি খাতসহ শিল্প খাতে উৎস ও আগাম কর ফেরত দেওয়ার পরিবর্তে বিলোপ করতে হবে। জমি ক্রয়, নির্মাণ এবং রপ্তানিমুখী শিল্প ও সেবা খাতের ইউটিলিটি বিলসহ অন্যান্য ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কিত সমস্ত ভ্যাট এবং কর (বার্ষিক হিসাবকৃত আয়কর ছাড়া) সম্পূর্ণরূপে মওকুফ করতে হবে। আয়করসংক্রান্ত প্রস্তাবে মো. জসিম উদ্দিন বলেন, দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের গতিশীলতা সমুন্নত রাখতে বিনিয়োগবান্ধব এবং উৎপাদনশীল টেকসই সরল ও আন্তর্জাতিক সর্বোত্তম চর্চার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ আয়কর পরিকাঠামো নিশ্চিত করা অপরিহার্য।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর