বৃহস্পতিবার, ১২ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

টেকসই প্রবৃদ্ধির ধারণা গুরুত্ব পাচ্ছে বাজেটে

কিছুটা পরিবর্তন আসছে ত্রিবার্ষিক পরিকল্পনায়

মানিক মুনতাসির

করোনা মহামারি ও বিশ্ব অর্থনীতির অস্থিরতার কথা মাথায় রেখে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কাজ করছে সরকার। বাংলাদেশে প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যয় অনেক বেশি হওয়ায় সরকারি অর্থের অপচয় ঘটে। এ জন্য টেকসই উন্নয়ন ও টেকসই জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথে এগোচ্ছে সরকার।

আগামীতে দুই অঙ্কের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি) অর্জনের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছিল ত্রিবার্ষিক বাজেট পরিকল্পনায়। সেখান থেকে কিছুটা সরে এসে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। অবশ্য প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১-এও প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ। এটাকে টেকসই করতে মানুষের জীবন-মানের উন্নয়ন ও সামাজিক এবং অন্যান্য সূচকগুলোর অগ্রগতি অর্জনকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে আসছে বাজেটে।

অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, জিডিপির মাধ্যমে একটি দেশের অর্থনীতির মানদণ্ড, মানুষের জীবনধারার মান নির্ণয় করা হয়ে থাকে। ফলে আসছে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে গুণগত মানসম্পন্ন টেকসই উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে।

করোনা মহামারির কারণে দেশের অর্থনীতি স্তিমিত হয়ে পড়েছিল। যদিও অল্প সময়ের মধ্যেই তা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। অবশ্য কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগের চাকা এখনো কাক্সিক্ষত গতিতে ঘুরছে না। ফলে পূর্বের ওই ত্রিবার্ষিক পরিকল্পনায় কিছুটা পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে সরকার। এ জন্য দুই অঙ্কের জিডিপি অর্জনের চেয়ে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে বাজেট প্রণয়নের কাজ করছে অর্থ বিভাগ। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে আশা করছে সরকার। যদিও করোনা মহামারির কারণে গত বছর কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়নি। অবশ্য উন্নয়ন সহযোগী বিভিন্ন সংস্থার পূর্বাভাস অনুযায়ী চলতি বছর শেষে জিডিপি সর্বোচ্চ ৬ দশমিক ৯ শতাংশ অর্জিত হতে পারে বলে জানিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বিশ্বব্যাংক এটাকে আরও কমিয়ে বলছে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ হতে পারে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফের পূর্বাভাসও বলছে এবার প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। তবে এসব উন্নয়ন সহযোগীর সংস্থার সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে সরকার বলছে, বাজেটের টার্গেট অনুযায়ী কাক্সিক্ষত ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধিই অর্জিত হবে বছর শেষে। শুধু তাই নয়, ইতোমধ্যে মার্চ-২০২২ পর্যন্ত ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। ফলে আশা করা হচ্ছে, বছর শেষে এটা ৭ দশমিক ৫ শতাংশই অর্জিত হবে। আগামী সেপ্টেম্বর নাগাদ জিডিপির চূড়ান্ত এই হিসাব পাওয়া যাবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বিবিএসের হিসাব বলছে, এই অর্থবছরে চলতি মূল্যে জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ৩৯ লাখ ৭৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বা ৪৬৫ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরে জিডিপির আকার ছিল ৩৫ লাখ ৩০ হাজার ২০০ কোটি টাকা বা ৪১৬ বিলিয়ন ডলার। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ। করোনার কারণে এর আগের বছর ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার নেমেছিল ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশে। সূত্র জানায়, আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হচ্ছে। চলতি বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধির টার্গেট ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। অর্থ বিভাগ বলছে, বৈশি^ক মহামারি করোনার আঘাতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও কিছুটা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। তবে সারা পৃথিবী যখন নেতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে, সেই সময় বাংলাদেশে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। বৈশি^ক মহামারি করোনা থেকে অর্থনীতি যখন পুনরুদ্ধারের পথে ঠিক সেই সময় নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। ফলে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। এই হার এখন ৬ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশের বেশির ভাগই সীমিত আয়ের মানুষ। করোনা অনেকেরই সঞ্চয় শেষ করে দিয়েছে। এ অবস্থায় মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকলে সবচেয়ে কষ্টে পড়বে সীমিত আয়ের সব মানুষ ও নতুন করে যারা দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে তারা। আবার প্রণোদনা তহবিলের বড় অংশই ছিল ব্যাংক ঋণ। এই অর্থ না ফিরলে তা খেলাপিতে পরিণত হবে। ব্যাংকেরও নতুন বিনিয়োগযোগ্য তহবিলে ঘাটতি পড়বে। আবার যদি প্রভাবশালী মহল থেকে এই ঋণ মওকুফের দাবি ওঠে, তাহলেও বাড়বে নানা ধরনের সমস্যা। কেননা অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আর্থিক খাতের স্বাস্থ্য ভালো রাখাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এরই মধ্যে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে খাদ্য ও জ্বালানি পণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা এবং দেশের প্রধান রপ্তানি বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নে মন্দার পূর্বাভাস সত্ত্বেও আগামী অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে যাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এটাকে উচ্চাভিলাষী নয় বরং টেকসই ও উচ্চতর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের বাহক হিসেবে দেখছে সরকার।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর