বৃহস্পতিবার, ১২ মে, ২০২২ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

বিলুপ্তির পথে কাঠশালিক

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

বিলুপ্তির পথে কাঠশালিক

গ্রাম-বাংলার খুব পরিচিত শালিক পাখির মধ্যে অন্যতম কাঠশালিক। এ দেশে শালিক প্রজাতির মধ্যে রয়েছে কাঠ শালিক, ভাতশালিক, ঝুটি শালিক, গোশালিক, চিত্রা শালিক, গোলাপি শালিক, বামন বা শঙ্খ শালিক এবং ময়না শালিক।

কাঠশালিকের মাথা, পিঠ, লেজ ধূসর রুপালি রঙের। গলার নিচ থেকে বুক ও লেজের গোড়া পর্যন্ত হালকা খয়েরি রঙের। গলায় আছে মালার মতো অতিরিক্ত ধূসর পালক। উজ্জ্বল বড় বড় চোখ ও পা লালচে বর্ণের হয়। চোখে ধূসর বৃত্তের মাঝখানে থাকে কালো ফোঁটা। ঠোঁটের গোড়ার অংশ সুরমা ও আগার অংশ হলুদ বর্ণের। এরা দলবদ্ধভাবে থাকে এবং স্বভাবে লাজুক। মানুষের কাছাকাছি কম ঘেঁষে। গাছের কোটরে গর্ত করে বাসা বানায়। এরা বাংলাদেশের সবচেয়ে ছোট শালিক। কাঠ শালিক সাধারণত ১৯ থেকে ২১ সেন্টিমিটার লম্বা হয়ে থাকে। প্রজনন এবং ছানা লালন-পালনের জন্য গাছের কোটর ব্যবহার করে। বসন্তের শুরু থেকে বর্ষা পর্যন্ত প্রজনন ও ছানা লালন-পালনের মৌসুম।

এ সময় মা পাখি তিন-চারটি ছোট লম্বাটে হালকা নীল রঙের ডিম পাড়ে। ছানা বড় হয়ে উড়তে শিখলে বাসা ছেড়ে চলে যায়। ফিরে আসে পরের প্রজনন মৌসুমে। এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে ছোট ছোট পোকামাকড় ও ফল। কাঠ শালিক দম্পতি অন্য পাখির আক্রমণ থেকে ছানাদের রক্ষায় সদা সতর্ক থাকে। পরিবেশবান্ধব সুন্দর এ পাখি সংরক্ষণে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন পরিবেশবিদরা। মহাদেবপুর প্রাণ ও প্রকৃতি সংগঠনের সভাপতি কাজী নাজমুল হোসেন বলেন, এক সময় প্রচুর খেকশিয়াল দেখা যেত। কিন্তু এখন তেমন চোখে পড়ে না বললেই চলে। এর একটাই কারণ- প্রকৃতিতে বন-জঙ্গল কমে যাচ্ছে। তেমনি কাঠ শালিক পাখিও প্রকৃতিতে দিন দিন কমে যাচ্ছে। বর্তমানে যে কয়েকটি দেখা যাচ্ছে, পাঁচ বছর পর হয়তো আর তাও দেখা যাবে না। খাদ্য ও আবাসস্থল সংকট এবং পরিবেশগত সমস্যা দেখা দিলে প্রকৃতিতে এরা নিজেদের মিলিয়ে নিতে পারে না। এরা যে পোকামাকড় খায়, এখন ফসলি জমিতে কিটনাশক দেওয়ায় সেসব খাদ্য এরা পাচ্ছে না। এ ছাড়া প্রকৃতিতে গাছপালা কমে যাওয়ায় আবাসস্থল কমে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এসব সমস্যা সমাধানে পরিবেশবাদীদের পাশাপাশি দেশের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। শিকারিদের প্রতিরোধ করতে হবে। গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ সুন্দর পাখিকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। মহাদেবপুর জীববৈচিত্র, বন্যপ্রাণী ও নদী সংরক্ষণ সংগঠনের সভাপতি ইউনুসার রহমান বলেন, প্রতিনিয়ত গাছপালা ও জঙ্গল কমে যাচ্ছে। ফসলি জমিতে অতিরিক্ত কিটনাশক প্রয়োগ করায় কিটপতঙ্গ কমে যাচ্ছে।

কিটনাশকযুক্ত কিটপতঙ্গ খাওয়ায় তাদের প্রজনন ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এ প্রজাতিকে প্রকৃতিতে আবারও ফিরিয়ে আনতে হলে বনবিভাগ বা সরকারিভাবে এদের প্রজনন করে প্রকৃতিতে ছেড়ে দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, প্রকৃতিগতভাবে কাঠ শালিক সুন্দর ও দুর্লভ প্রজাতির পাখি। যেহেতু কিটপতঙ্গ ও ফল এদের প্রধান খাদ্য, তাই ফলের গাছে কিটনাশক প্রয়োগ করায় এদের পাকিস্থলিতে সমস্যা হয়। এতে করে স্বাভাবিকভাবে আয়ুষ্কালের আগেই পাখিগুলো মারা পড়ছে। এ ছাড়া এ পাখির নিজেদের কোনো বাসা নেই। কাঠ শালিক প্রজননের সময় অন্য পাখির বাসায় ডিম দেয়। পুরনো ও বড় গাছ এবং জঙ্গল কেটে ফেলায় এখন তারা আশ্রয় হারাচ্ছে। এসব কারণে এ পাখির দ্রুত বিলুপ্তি ঘটছে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর