শুক্রবার, ১৩ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

সম্রাটের আরও উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন

বিএসএমএমইউ চিকিৎসক

নিজস্ব প্রতিবেদক

সদ্য কারামুক্ত ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট দীর্ঘদিন ধরেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সিসিইউতে চিকিৎসাধীন; যে কারণে কারামুক্ত হলেও তিনি এখনো সেখানেই রয়েছেন। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, সম্রাটকে হাইলি ইকুইপমেন্ট আছে এমন জায়গায় নিয়ে যাওয়া ভালো। তার আরও উন্নত চিকিৎসা দরকার। গতকাল বিএসএমএমইউ হাসপাতালে সম্রাটের শারীরিক অবস্থা নিয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন হাসপাতালের পরিচালকের নেতৃত্বে চিকিৎসকরা। সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য দেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘১৬ মে আমরা একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করব। তার অবস্থা বিবেচনা করে পরিবারের সঙ্গে আলাপ করব। তার অভিভাবকরা না নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত তিনি এখানেই থাকবেন। এর মধ্যে কোনো অসুবিধা দেখা দিলে তাকে হয়তো আবারও লম্বা সময়ের জন্য এখানে থাকতে হতে পারে।’

এরপর সম্রাটের চিকিৎসায় নিয়োজিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. হারিসুল হক বলেন, ‘দেড় বছর আগে আমরা যখন তার এনজিওগ্রাম করলাম, তারপর বেডে নেওয়ার পর তিনি শকে চলে গেলেন। আমরা ইনজেকশন দিয়ে তার প্রেসার ওঠানোর ব্যবস্থা করলাম। তার হার্টে মেটালিক ভাল্ব আছে। তাকে তখন তিনটি দামি ইনজেকশন দেওয়ার পর আমাদের মধ্যে আবার ফিরে এলেন। এরপর আবার তার অ্যানিমিয়া ফিরে এলো।’ তিনি বলেন, ‘ওনার মেটালিক ভাল্বের পরিস্থিতি কী তা জানতে হবে। এর জন্য ইলেকট্রফিজিওলজি স্টাডি দরকার। তার শরীরে একটি ধাতব বস্তু আছে, সেখানে কারেন্ট দিয়ে ইলেকট্রফিজিও স্টাডি করব। এতে আরেকটা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এজন্য হাইলি ইকুইপমেন্ট আছে এমন জায়গায় যাওয়া ভালো। ঢাকায আমরা এমন জায়গা এখনো ডেভেলপ করতে পারিনি। তিনি সিঙ্গাপুরের কথা বলেছেন সেটা অবশ্যই ভালো জায়গা। তিনি চাইলে এর চেয়েও ভালো জায়গায় যেতে পারেন। আমরা আসলে ইলেকট্রফিজিওলজি স্টাডিতে অতটা সক্ষম নই।’

কার্ডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ রায়হান মাসুম মণ্ডল বলেন, ‘সম্রাটের বিষয়ে আগামী সোমবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে পরিবার চাইলে আগেই নিতে পারবে। কিছু সময় স্থিতিশীল থাকেন আবার কিছু সময় তিনি অস্থিতিশীল। তার ?“সাডেন কার্ডিয়াক ডেথ” সিনড্রোম আছে। এর সঙ্গে তার ভাল্ব রিপ্লেসমেন্ট আছে। তিনি যখন প্রথম এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন তার হৃৎস্পন্দন এলোমেলো ছিল। তার সর্বোপরি অবস্থা এমন যে দূর থেকে দেখলে মনে হবে একজন সুস্থ মানুষ বসে আছেন। কিন্তু একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে যখন দেখবেন, তখন দেখা যাবে তিনি তার হার্টের ভিতরে একটি অ্যাটম বোম নিয়ে বসে আছেন। যেটি স্বাভাবিকই থাকে, কিন্তু একটু এলোমেলো হলে তার মৃত্যু নিশ্চিত। যতক্ষণ তার জটিলতাগুলো ঠিক না হচ্ছে, তাকে এমন জায়গায় থাকতে হবে যে দ্রুত সিসিইউ কিংবা কার্ডিওলজিস্টের শরণাপন্ন হওয়া যায়।’

সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. রায়হান মাসুম মণ্ডল আরও বলেন, ‘তিনি যত দিন জেল কর্তৃপক্ষের অধীনে ছিলেন, আমরা জেল কর্তৃপক্ষকে তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করেছি। এখন যেহেতু তিনি জামিনে মুক্ত আছেন আমরা এখন তার পরিবারকে তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানাব। সোমবার আমরা একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে তার শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনা করব। তার অভিভাবক সিদ্ধান্ত নেবেন যে তিনি চিকিৎসা কোথায় পাবেন।’

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নজরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘দেড় বছর ধরে এখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন সম্রাট। তার ৩১ থেকে ৩৩% হার্টের ফাংশনাল ছিল। তিনি আসামি হলেও আমাদের কাছে একজন রোগী। সে হিসেবেই আমরা দেখেছি তাকে। আমরা শঙ্কায় ছিলাম আমাদের কোনো অবহেলার কারণে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে কি না।’ সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউ হাসপাতালের অতিরিক্ত পরিচালক ডা. পবিত্র কুমার দেবনাথ, সহযোগী অধ্যাপক ডা. আরিফুল ইসলাম জোয়ারদার টিটো, সহকারী পরিচালক ডা. এহসানুল কবির, ডা. এনায়েত তুষার, ডা. মোহাম্মদ কুতুব উদ্দিন প্রমুখ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর