শনিবার, ১৪ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

বার্ন ইনস্টিটিউটে ৬৫ শতাংশ রোগী ঢাকার বাইরের

♦ পাঁচ বিভাগীয় হাসপাতালে হচ্ছে ১০০ শয্যার বার্ন ইউনিট ♦ চট্টগ্রামে চীনের অর্থায়নে বিশেষায়িত বার্ন হাসপাতালের প্রস্তাব

জয়শ্রী ভাদুড়ী

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদী অতিক্রম করার সময় বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর এ অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জন মানুষ মারা যায়। অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধদের উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু প্রায় আড়াই বছর ধরে সেখানে বার্ন ইউনিট বন্ধ থাকায় মেলেনি প্রয়োজনীয় সেবা।

গুরুতর দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসার জন্য ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। এই হচ্ছে ঢাকার বাইরে পোড়া রোগীদের চিকিৎসার চিত্র। দেশের অন্যান্য বিভাগীয়, জেলা হাসপাতালের চিত্রও একই রকম। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আসা ৬৫ শতাংশ রোগীই ঢাকার বাইরের।

চিকিৎসা দেরিতে শুরু হওয়ায় জীবন ঝুঁকিতে পড়ে রোগীদের, বেড়ে যায় ক্ষতের তীব্রতা। তাই দগ্ধ রোগীদের সেবা দিতে রাজধানীর বাইরে দেশের পাঁচটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০০ শয্যা করে মোট ৫০০ শয্যার বার্ন ইউনিট করার প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ ছাড়া চট্টগ্রামে আগুনে পোড়া রোগীদের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিতে চীনের অর্থায়নে ‘বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ বার্ন হাসপাতাল’ করার প্রস্তাব করেছে ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাস। এর আগে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ১০০ শয্যার বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট স্থাপনের প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব করেছিল চীন। কিন্তু জায়গা নির্ধারণ সংক্রান্ত জটিলতায় বাতিল হয় সে প্রকল্প। পরবর্তীতে অন্য জায়গা চিহ্নিত করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এখন এ সংক্রান্ত বিস্তারিত প্রস্তাবনা পাঠানো হবে ঢাকাস্থ চীন দূতাবাসে।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা যায়, গত ১০ দিনে এ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে সেবা নিয়েছেন ৩৬২ জন রোগী। এর মধ্যে ১২৯ জন ঢাকার বাসিন্দা। বাকি ২৩৩ জন অর্থাৎ ৬৫ শতাংশ রোগীই ঢাকার বাইরে থেকে এ হাসপাতালে সেবা নিতে এসেছেন। নারায়ণগঞ্জ থেকে এসেছেন ১২১ জন, বরিশালের ১০ জন, চট্টগ্রামের ৫১ জন, রাজশাহীর ১৩ জন, খুলনার ১২ জন, সিলেটের ছয়জন, রংপুরের ১৪ জন এবং ময়মনসিংহের ছয়জন। গত ১০ দিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬৪ জন। এর মধ্যে আটজন ঢাকার বাসিন্দা। বাকি ৫৬ জন ঢাকার বাইরে থেকে এসেছেন। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের ২২ জন, বরিশালের দুইজন, চট্টগ্রামের ১৬ জন, রাজশাহীর একজন, খুলনার পাঁচজন, সিলেটের একজন, রংপুরের ছয়জন, ময়মনসিংহের তিনজন ছিলেন। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সারা দেশ থেকে আগুনে পুড়ে যাওয়া রোগী এ হাসপাতালে আসেন চিকিৎসার জন্য। পুড়ে যাওয়ার পরের ২৪ ঘণ্টা এ রোগীদের চিকিৎসায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এ সময়কে গোল্ডেন আওয়ার বলে থাকি। তাই ঢাকার বাইরে পাঁচটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০০ শয্যা করে মোট ৫০০ শয্যার বার্ন ইউনিট করার প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। হাসপাতালগুলো হলো- রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ফরিদপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।’ তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রামে বিশেষায়িত বার্ন হাসপাতাল স্থাপনে নতুন জায়গার প্রস্তাবনা চাওয়া হয়েছে। এ জায়গাটি দেখতে চট্টগ্রামে যাব। এরপর প্রস্তাবনার সামগ্রিক বিষয় ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাসে পাঠানো হবে। চট্টগ্রামে বিশেষায়িত বার্ন হাসপাতাল তৈরিতে চীনের আগ্রহ রয়েছে।’ দেশের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে বার্ন ইউনিটের বেহাল দশা। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) নেই বার্ন ইউনিট। এখন ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ১৪টি বেডে চলছে কার্যক্রম। এ ওয়ার্ডে চলে শিশু, নারী-পুরুষ সবার চিকিৎসা। নেই ড্রেসিং কক্ষও। বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মাত্র একজন চিকিৎসক দিয়ে চলত ৫০ শয্যার বার্ন ইউনিট। ২০২০ সালের ২৮ এপ্রিল বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগীয় প্রধান ডা. এম এ আজাদ সজলের মৃত্যুর পরে বন্ধ হয়ে যায় এ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট। সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১২ শয্যায় চলছে বার্ন ইউনিট। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৬ শয্যার বার্ন ইউনিট রয়েছে। তার মধ্যে চারটি শয্যা নষ্ট। আর ফরিদপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোনো বার্ন ইউনিটের অস্তিত্বই নেই। এ এলাকার মানুষকে আগুনে পোড়া রোগী নিয়ে ছুটতে হয় ঢাকার পথে।

সর্বশেষ খবর