সোমবার, ১৬ মে, ২০২২ ০০:০০ টা
কেমন বাজেট চাই → ড. মইনুল ইসলাম

বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ন্ত্রণ জরুরি

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ন্ত্রণ জরুরি

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেছেন, করোনাকালীন যে পরিস্থিতিতে বড় ধরনের সংকট মোকাবিলা করতে হয়েছে, এখন সেই সংকট মোচনের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে আগামী বছরের বাজেট করতে হবে। সরকারের বেশকিছু পদক্ষেপ নিতে হয়েছে যা অর্থনীতিতে ঘাটতি তৈরি করেছে। এখন এই ঘাটতি থেকে বের হওয়ার পরিকল্পনা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর্থিক কাঠামোতে বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি মূলত আমাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার পরিকল্পনা গুরুত্ব দিয়ে বাজেট      করতে হবে। আমাদের অর্থনীতির বড় সমস্যা এখন বাণিজ্য ঘাটতি। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একুশে পদক প্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ মইনুল ইসলাম এসব কথা বলেন।

অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বলেন, এ বছরই আমাদের আমদানি প্রায় ৮২-৮৫ বিলিয়ন ডলারে চলে যাবে, কিন্তু রপ্তানি প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার হবে। সম্প্রতি আমদানির পরিমাণ প্রায় ৪৬ শতাংশ বেড়েছে। রপ্তানি সে তুলনায় কম বেড়েছে। ফলে এখানে ৩২-৩৫ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি। আমাদের প্রতিবছর রেমিট্যান্স আসে ২০ বিলিয়ন ডলারের মতো। চলতি হিসাবের ব্যালেন্স ঘাটতি রেমিট্যান্স দিয়ে পূরণ করতে পারব না। কাজেই এ বছরই আমাদের ১০ বিলিয়ন ডলারের একটা ঘাটতি সৃষ্টি হচ্ছে। এই ঘাটতি মোকাবিলার জন্য আমদানি পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা খুব জরুরি। তিনি বলেন, এই সময় রপ্তানি কিছুটা বেড়েছে। তবে রপ্তানি বাড়লেও সেটা ঘাটতি পূরণে যথেষ্ট হবে না। তাই কোনো ধরনের অপ্রয়োজনীয় আমদানির বিষয়ে খুব সতর্ক থাকতে হবে। অর্থাৎ আমদানিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে শক্ত হাতে। তিনি বলেন, গত কয়েক মাসের ব্যবধানে রিজার্ভ ৬ থেকে ৭ বিলিয়ন ডলার কমে গেছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আরও কমবে। এভাবে যদি আমাদের আমদানি-রপ্তানির তুলনায় বাড়তে থাকে এবং তা যদি রেমিট্যান্স দিয়ে পূরণ করতে না পারি তাহলে অতি দ্রুত আমাদের রিজার্ভ শেষ হয়ে যাবে। রিজার্ভ কমে গেলে টাকারও দাম কমবে। সেক্ষেত্রে আমাদের অর্থনীতিতেও একটা বিপদ অপেক্ষা করছে। সব কিছুর দাম বেড়ে যাবে। স্বস্তির অবস্থানে আমরা থাকতে পারব না। এই বিষয়গুলো আগামী বাজেটে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। তিনি আরও বলেন, বিশাল অভ্যন্তরীণ ঋণ আছে। তা যোগ করলে বাংলাদেশের ঋণ ও জিডিপির অনুপাত ৫০ শতাংশের ওপরে চলে যাবে। এটা খুবই বিপজ্জনক। দেশি-বিদেশি ঋণ গ্রহণ, পরিকল্পনা ছাড়া প্রকল্প গ্রহণের বিষয়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

মইনুল ইসলাম বলেন, আমাদের অর্থনীতিতে অর্থ পাচার একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। অর্থ পাচার দমন করতে না পারলে অর্থনীতিকে শক্ত ভিত্তি দেওয়া যাবে না। অর্থ পাচারের যে ধরনের সংবাদ আমরা দেখি তা খুবই বিপজ্জনক। অর্থ পাচারের সঙ্গে খেলাপি ঋণের সম্পর্ক আছে। সরকার খেলাপি ঋণ লুকিয়ে ফেলার পদ্ধতি নিয়েছে, আদায় করার কোনো পদক্ষেপ তারা নেয়নি। বাস্তবে এখন প্রায় ৪ লাখ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ সৃষ্টি হয়েছে। খেলাপি ঋণ লুকিয়ে ফেলার এই পদ্ধতি অর্থনীতিকে বড় ধরনের চাপে ফেলবে। এই খেলাপি আদায়ের পদক্ষেপ জাতীয় বাজেটের কর্মপরিকল্পনায় থাকতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর