সোমবার, ১৬ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

সিলেটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, পানিবন্দি লাখো মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

সিলেটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, পানিবন্দি লাখো মানুষ

সিলেটের জকিগঞ্জের মানিকপুরে সুরমা নদী থেকে পানি ঢুকছে লোকালয়ে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সিলেটের ছয় উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লাখো মানুষ। গৃহপালিত পশু নিয়েও মানুষ বিপাকে পড়েছেন। তলিয়ে যাওয়ায় কয়েকটি উপজেলার সঙ্গে জেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। গতকাল বৃষ্টিপাত কম হলেও উজানের ঢলের কারণে সুরমা ও কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। ফলে নতুন করে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

সারি, গোয়াইন, ধলাইন, সুরমা ও কুশিয়ার ডাইক ভেঙে যেসব উপজেলার বিভিন্ন এলাকা বন্যাকবলিত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- সিলেট সদর, জকিগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কানাইঘাট। কোথাও ডাইক ভেঙে নদীর পানি ঢুকছে। কোথাও তীর উপচে পানি ঢুকছে লোকালয়ে। জেলার সব নদীর পানিও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। জানা গেছে, সিলেটের সদর উপজেলার টুকেরবাজার ইউনিয়নের (বর্তমানে সিটি করপোরেশনের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড) পীরপুর এলাকায় সুরমা নদীর ডাইক ভেঙে শুক্রবার থেকে পানি ঢুকছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের নির্দেশে সিটি করপোরেশন বাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ বন্ধ করলেও টানা বৃষ্টিপাতে আবারও পানি ঢুকছে। এ ছাড়া সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী-তীরবর্তী নগরীর বিভিন্ন এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা জানান, সিলেট অঞ্চলে কয়েকদিনের বৃষ্টির সঙ্গে যোগ হয়েছে উজান থেকে নেমে আসা ঢল। ভারতের মেঘালয়, ত্রিপুরা ও আসাম প্রদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি দ্রুত বাড়ছে। গতকাল বৃষ্টিপাত না হলেও উজানের ঢলের কারণে নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট এবং জৈন্তাপুর ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

 এসব গ্রামের সঙ্গে উপজেলা সদরের সড়ক যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন। এ উপজেলায় ফসলি জমিও তলিয়ে গেছে। কানাইঘাট উপজেলায় সুরমা নদীর প্রবল ঢলে উপজেলার লক্ষ্মীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়নের কুওরঘড়ি ডাইকে ভাঙন দেখা দেয়। উপজেলার লক্ষ্মীপ্রসাদ পশ্চিম, বড়চতুল, লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব, সাতবাঁক, কানাইঘাট সদর, দিঘীরপাড় পূর্ব ও দক্ষিণ বাণীগ্রাম ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা ও রাস্তা-ঘাট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। কানাইঘাট বাজারে কোমর থেকে হাঁটু পানি বিরাজ করছে। কানাইঘাট-চতুল-দরবস্ত সড়ক, কানাইঘাট-গাছবাড়ী গাজী বোরহান উদ্দিন সড়ক, কানাইঘাট-সুরইঘাট সড়ক ও কানাইঘাট-শাহবাগ-জকিগঞ্জ সড়কের বিভিন্ন এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সিলেট শহরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। গোয়াইনঘাট উপজেলার সারী-গোয়াইনঘাট সড়কের লাফনাউট, আলীরগাঁও কলেজ, আলীরগ্রাম, বেকরা ব্রিকফিল্ডসহ সড়কের বিভিন্ন স্থানে পানি উঠেছে। গোয়াইনঘাট-রাধানগর সড়ক, গোয়াইনঘাট-সোনারহাট সড়কের বিভিন্ন স্থান তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। জকিগঞ্জ উপজেলার বারহাল, মানিকপুর ও কাজলসার ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় সুরমা-কুশিয়ারা নদীর ডাইক ভেঙে ও উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। পানিনিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা থাকায় তলিয়ে গেছে পৌরসভার জকিগঞ্জের প্রধান ডাকঘর, প্রাণিসম্পদ অফিস, স্থলশুল্ক স্টেশন, জকিগঞ্জ ফাজিল সিনিয়র মাদরাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলারও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানান, সিলেটে ১৮ মে পর্যন্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে রাতের বেলা বৃষ্টি বেশি হবে।

লক্ষ্মীপুরে ফসলি খেতে ঢুকছে জোয়ারের পানি, দুশ্চিন্তায় কৃষক : লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, মেঘনা উপকূলীয় এলাকা লক্ষ্মীপুরে নদীর জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে রামগতি ও কমলনগর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের ফসলি জমি। গতকাল দুপুর ১টার দিকে জোয়ারের অতিরিক্ত পানি উপকূলে ঢুকতে শুরু করে। বিকালে ৪ টার পর তা নেমে যায়। গত কয়েক দিনের বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে ফসল। এতে করে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছে এ অঞ্চলের কৃষক।

স্থানীয়রা জানান, জোয়ারের পানিতে নদী সংলগ্ন ফসলি জমিগুলো নিমজ্জিত হয়ে যায়। এতে সয়াবিন,  বোরো ধান এবং রবি শস্যের খেতে পানি জমে গেছে। ফলে ফসলের ক্ষতির শঙ্কায় রয়েছে কৃষক।

সর্বশেষ খবর