সোমবার, ১৬ মে, ২০২২ ০০:০০ টা
কৃষি

পুকুরে মুক্তা চাষে সফল কবির

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

পুকুরে মুক্তা চাষে সফল কবির

নওগাঁর আত্রাই উপজেলার জগদাস গ্রামের উদ্যোমী যুবক কবির হোসেন পুকুরে ঝিনুকে মুক্তা চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন। পুকুরে মাছের পাশাপাশি মুক্তা চাষ ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এলাকাজুড়ে। এই উদ্যোক্তাকে এলাকাবাসী প্রথমে পাগল হিসেবে আখ্যায়িত করলেও পরে তার এই সাফল্য দেখে মুক্তা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন অনেক বেকার যুবক।

সরেজমিন  গিয়ে দেখা গেছে, পুকুরের পানিতে তিন ফুট পর পর ভাসছে ফাঁকা প্লাস্টিকের বোতল।  সেখানে পানির এক ফুট নিচে রয়েছে একটি করে প্লাস্টিকের ডালা। সে সব ডালার প্রতিটিতে রয়েছে ২০টি করে জীবন্ত ঝিনুক। এভাবে তিনি ওই পুকুরে প্রায় ৮ হাজার ঝিনুক বিশেষ প্রক্রিয়ায় চাষ করছেন। ওই ঝিনুকের মধ্যে প্রতিটিতে কমপক্ষে দুটি করে বিভিন্ন ডিজাইনে নিউক্লিয়াস প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। একটি নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে এসব ঝিনুক থেকেই উৎপাদন হচ্ছে বিভিন্ন ডিজাইনের মুক্তা। কবির হোসেন বলেন, আমি ফ্রিলান্সার হিসেবে কাজ করতাম। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে কাজ হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ি। বাড়িতে বসে অলস দিনযাপন করছিলাম। এ সময় ইউটিউবে ঝিনুকে মুক্তা চাষের সাফল্যময় গল্প দেখে উৎসাহিত হই। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিয়ে গ্রামেই পুকুর লিজ নিয়ে মাছ চাষের পাশাপাশি ঝিনুকে মুক্তা চাষের প্রকল্প হাতে নেই। তিনি আরও জানান, তার চাষ করা ৮ হাজার ঝিনুকের মধ্যে বিভিন্ন ডিজাইনের প্রায় ১৫ হাজার নিউক্লিয়াস প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। প্রায় এক বছরে এসব ঝিনুক থেকে পাওয়া যাবে কমপক্ষে ১৫ হাজার মুক্তা। পুকুর লিজ, ঝিনুক সংগ্রহ, পরিচর্যা, নিউক্লিয়াস ক্রয় ও সংস্থাপন বাবদ মোট খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ লাখ টাকা। এই এক বছরে ওই ঝিনুক থেকে উৎপাািদত মুক্তা ২২ থেকে ২৫ লাখ টাকায় বিক্রির প্রত্যাশা তার। ইতোমধ্যে ঝিনুক সংগ্রহের সময় হয়ে গেছে। এসব মুক্তার বাজার রয়েছে ভারতের কলকাতায় এবং দেশের আড়ং নামের প্রতিষ্ঠানে।

এদিকে কবিরের সাফল্য দেখে তার সঙ্গে মুক্তা চাষে  যোগ দেন আশপাশের গ্রামের আরও ২০ বেকার যুবক।  ইতোমধ্যেই গ্রামটি এখন মুক্তা চাষির গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

জগদাস গ্রামের আবু বাশার ও মানিক নামের দুই উদ্যোক্তা জানান, কবিরের সাফল্য তাদেরও মুক্তা চাষের দিকে আকৃষ্ট করেছে। ইতোমধ্যে ওই দুই যুবকসহ গ্রামের ২০জন বেকার যুবক ঝিনুকে মুক্তা চাষের ছোট ছোট প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। তারাও আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা পলাশ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, ইতোমধ্যেই উপজেলার বেশ কয়েকটি স্থানে মুক্তা চাষের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। মুক্তা চাষে ঝুঁকি কম ও লাভজনক। মানসম্মত মুক্তা চাষে আগ্রহীদের সার্বিক প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর