মঙ্গলবার, ১৭ মে, ২০২২ ০০:০০ টা
কেমন বাজেট চাই । ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম

মুদ্রার অবমূল্যায়ন ঠেকানোর কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

মানিক মুনতাসির

মুদ্রার অবমূল্যায়ন ঠেকানোর কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, আসন্ন ২০২২-২৩ বাজেট প্রসঙ্গে প্রথম কথা হচ্ছে এবার কভিডের কারণে দারিদ্র্যসীমার নিচের লোকের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। মানুষ জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। এর ওপর বেকার সমস্যা তো আছেই। ফলে এবারের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাড়াতে হবে। এখানে বরাদ্দ এবং নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা দুটোই বাড়াতে হবে।

দ্বিতীয়ত আমাদের রিজার্ভ কমেছে। প্রতিনিয়ত কমছে। তবে এখনো পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো রিজার্ভ আমাদের রয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে নজর রাখতে হবে। সতর্ক থাকতে হবে। বৈদেশিক ঋণের ব্যাপারে সুদৃঢ় নীতি গ্রহণ করতে হবে। ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমছে। এও শক্তভাবে খেয়াল রাখতে হবে। টাকার অবমূল্যায়ন ভয়াবহ বিপদও ডেকে আনতে পারে। এটা ঠেকাতে হবে। এজন্য আসছে বাজেটে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আইএমএফের মতো সংস্থাগুলোর কাছ থেকে যাতে নমনীয় সুদহারের ঋণ পাওয়া যায় সেদিকে নজর রাখতে হবে। উচ্চ সুদের ঋণ এড়িয়ে চলতে হবে। দ্বিপক্ষীয় যেসব ঋণ রয়েছে সেগুলো যত কম নেওয়া যায় এমন নীতি গ্রহণ করতে হবে আসন্ন বাজেটে। পাশাপাশি সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ঋণ নেওয়ার মাত্রা কমাতে হবে। তবে বাজেট ঘাটতি সব সময় ৫ শতাংশের মধ্যে রাখার একটা বাধ্যবাধকতা আমরা মেনে চলি। এ বছর যেহেতু বৈশ্বিক প্রেক্ষপটটা একেবারেই ভিন্ন তাই বাজেট ঘাটতি ৬ থেকে সাড়ে ৬ শতাংশে চলে গেলেও তেমন কোনো সমস্যা হবে না। তাই অগ্রাধিকার খাত বিবেচনায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে। এতে বাজেটের অঙ্ক বাড়লেও তেমন কোনো সমস্যা হবে না বলে তিনি মনে করেন।

এজন্য অবশ্য রাজস্ব আদায়ের দিকে আরও বেশি মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক এই উপদেষ্টা। তিনি বলেন, আমাদের কর-জিডিপি রেশিও খুবই কম। যারা কর দেন তাদের ওপর বেশি বোঝা চাপানো যাবে না। বরং যারা কর দেন না তাদের করের আওতায় আনতে হবে। বিপুলসংখ্যক টিআইএনধারী এখনো কর দেন না। তাদের করের আওতায় এনে রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে। এনবিআর গত এক দশকে উল্লেখযোগ্য করদাতা বাড়াতে পারেনি। সেদিকে নজর দেওয়া জরুরি। শুধু কাগুজে পরিকল্পনা না করে বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা করে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বিষয়ে তিনি বলেন, এটা হচ্ছে আমাদের বাজেটের আরেকটা দুর্বল জায়গা। প্রথম ছয় বা নয় মাস তেমন কোনো অগ্রগতি হয় না এ খাতে। এ সময় হয়তো এডিপিতে বরাদ্দের ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়। শেষ তিন মাসে এডিপির অর্থ খরচ করতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো তাড়াহুড়া করে। এতে একদিকে সরকারি অর্থের অপচয় ঘটে, অন্যদিকে প্রকল্প বাস্তবায়নের গুণগত মান ঠিক থাকে না। একইভাবে দুর্নীতিও সংঘটিত হয়। এজন্য সারা বছর যেন একই গতিতে অর্থ খরচ হয়, প্রকল্প বাস্তবায়ন যেন বছরের শুরু থেকেই জোরেশোরে হয় সেদিকে কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে। এতে প্রশাসনিক দক্ষতা বাড়ানো এবং প্রশাসনযন্ত্রের মধ্যে জবাবদিহি নিশ্চিতেরও দাবি জানান তিনি। শ্রীলঙ্কার আর্থিক সংকট ইস্যুতে তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কা আর বাংলাদেশ কিন্তু এক বিষয় নয়। দুটোকে একসঙ্গে মেলানো ঠিক হবে না। তাদের বৈদেশিক ঋণ, উৎপাদন, রপ্তানি খাত, রেমিট্যান্স কোনোটাই আমাদের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ নয়। ফলে শ্রীলঙ্কা কখনো বাংলাদেশের জন্য উদাহরণ হতে পারে বলে তিনি মনে করেন না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর