মঙ্গলবার, ১৭ মে, ২০২২ ০০:০০ টা
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন

রেলের সেই টিটিই নির্দোষ

পাবনা প্রতিনিধি

রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের আত্মীয় পরিচয়ে বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণকারী যাত্রীদের জরিমানাকারী টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) শফিকুলের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগের প্রমাণ পায়নি তদন্ত কমিটি। তদন্তে টিটিই শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রমাণ না পাওয়ায় তাকে সম্পূর্ণ নির্দোষ ঘোষণা করেছে তদন্ত কমিটি।

গতকাল সকাল ১১টা ২০ মিনিটে নিজ কার্যালয়ে প্রতিবেদন জমা নেন পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) শাহিদুল ইসলাম। পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা (এটিও) সাজেদুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি ৪০ পৃষ্ঠার মূল প্রতিবেদন জমা দেন।

শাহিদুল ইসলাম জানান, প্রতিবেদনে টিটিইকে সম্পূর্ণ নির্দোষ বলা হয়েছে। ওই ট্রেনের গার্ড শরিফুল ইসলাম বিনা টিকিটের যাত্রী ইমরুল কায়েস প্রান্তকে ফুসলিয়ে টিটিই শফিকুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে বাধ্য করেন। টিটিই শফিকুল ইসলাম তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবী। আমি অন্যায় করিনি কিংবা কখনো অন্যায়ের সঙ্গে আপস করিনি। আমি সবাইকে বলতে চাই, সত্য ন্যায় আর নৈতিক শক্তি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শক্তি। কারোর বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। আমি যতদিন রেলে চাকরি করব, ততদিন সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাব বলেও জানান তিনি। গত ৬ মে রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে বিনা টিকিটে রেল ভ্রমণ করায় তিন যাত্রীকে জরিমানা করেন খুলনা থেকে ঢাকাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেসের ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) শফিকুল ইসলাম। কিন্তু রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে পরদিন তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে রেল কর্তৃপক্ষ। অসদাচরণের অভিযোগ তদন্ত করতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।

বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমের কল্যাণে প্রকাশ্যে এলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় আলোচনা সমালোচনা। ওই সময়ে রেলমন্ত্রী সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, আত্মীয় পরিচয় দিয়ে বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করা তিন যাত্রীর সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। যাত্রীদের সঙ্গে ‘খারাপ আচরণ করায়’ শফিকুলকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে তিনি কর্মকর্তাদের কাছে শুনেছেন।

কিন্তু বিনা টিকিটের ওই যাত্রীরা যে রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় সে বিষয়টি তুলে ধরে প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। এরপর সংবাদ সম্মেলন করে রেলমন্ত্রী বলেন, টিকিট ছাড়া ভ্রমণ করা যাত্রীরা যে তার আত্মীয়, তা তিনি জানতেন না বলে স্বীকার করেন। গত ৮ মে ওই সংবাদ সম্মেলনে রেলমন্ত্রী জানান, টিটিই শফিকুল ইসলামের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি তড়িঘড়ি বরখাস্তের আদেশ দেওয়ায় রেলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (পাকশীর ডিসিও) নাসির উদ্দিনকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। তবে এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন ডিসিও নাসির উদ্দিন বলে দাবি রেল সংশ্লিষ্টদের। সুন্দরবন এক্সপ্রেসে বিনা টিকিটে এসি কেবিনে ভ্রমণকারী সেই তিন যাত্রী ছিলেন রেলমন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মী আক্তার মনির ভাগ্নে ইমরুল কায়েস প্রান্ত এবং তার দুই মামা হাসান ও ওমর। হাসান ও ওমর প্রান্তের মা ইয়াসমিন আক্তার নিপার চাচাতো ভাই। সেই সূত্রে তারাও রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর আত্মীয়।

টিটিই শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে রেল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেছিলেন ইমরুল কায়েস প্রান্ত। ওই ঘটনা নিয়ে তদন্তে কমিটির সামনে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে তিনি ক্ষোভ ঝাড়েন সাংবাদিকদের ওপর। পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের এটিও সাজেদুল ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত ওই তদন্ত কমিটির বাকি দুই সদস্য হলেন, সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী (এইএন) শিপন আলী এবং রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সহকারী কমান্ডেন্ট (এসিআরএনবি) আবু হেনা মোস্তফা কামাল।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর