বৃহস্পতিবার, ১৯ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

বন্যার আরও অবনতি

সিলেটে পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত নতুন নতুন এলাকা, ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট ও সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

বন্যার আরও অবনতি

বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের শক্তিয়ারখলা এলাকা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

উজানে ভারতের আসাম ও মেঘালয়ের পাহাড়ি এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় সিলেটের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সুরমা ও কুশিয়ারার চারটি ও সারি নদীর একটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কোনো কোনো স্থানে মঙ্গলবার রাতে পানি কমলেও গতকাল সকাল থেকে ফের পানি বাড়তে থাকে। ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ছাতক-সিলেট ও তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কে হাঁটুসমান পানির ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, গতকাল বিকাল ৩টায় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৫১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এই পয়েন্টে গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত পানি হ্রাস পেলেও পাহাড়ি ঢল নামায় ফের পানি বাড়তে থাকে। সুরমা নদীর পানি বিকাল ৩টায় সিলেট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বিকাল ৩টায় কুশিয়ারার পানি জকিগঞ্জের আমলসীদে বিপৎসীমার ১৬৬ সেন্টিমিটার ও শেওলা পয়েন্টে ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। জৈন্তাপুরে সারি নদীর পানিও গতকাল থেকে বাড়ছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ি এলাকায় ভারী বর্ষ হওয়ায় সুরমা, ধলাই ও সারি নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। ফলে গতকাল সকাল থেকে পানি বেড়ে আগের অবস্থায় চলে যায়। এ ছাড়া আসামের পাহাড়ি এলাকায় ভারী বর্ষণের কারণে সুরমা ও কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জকিগঞ্জ ও কানাইঘাটের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গতকাল কানাইঘাট উপজেলায় নতুন করে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জকিগঞ্জে পানি বৃদ্ধি পেয়ে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের বিভিন্ন অংশ তলিয়ে গেছে। থানাবাজার এলাকায় সড়কে হাঁটুপানি। কুশিয়ারা নদীর ডাইকের বিভিন্ন অংশ দিয়ে পানি উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করছে। জকিগঞ্জ উপজেলা সদরের পার্শ্ববর্তী কেছরি এলাকায় ডাইকের ওপর বস্তা ফেলে পানি ঠেকানোর চেষ্টা করছেন স্থানীয়রা। এরপরও পানি উপচে ভিতরে প্রবেশ করছে। স্থানীয়রা জানান, কেছরি এলাকায় ডাইক ভেঙে পানি প্রবেশ করলে পুরো উপজেলা সদর পানিতে তলিয়ে যাবে।

এ ছাড়া নতুন করে বিশ্বনাথ ও গোলাপগঞ্জ উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। দুই উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এদিকে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সিলেট নগরীতে জনদুর্ভোগ বেড়েছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় অনেককে নৌকা ও ভেলায় চড়ে যাতায়াত করতে দেখা গেছে। নগরীতে ১৪টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। গতকাল পরিদর্শনে এসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এমপি এবং দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেছেন।

এদিকে সুনামগঞ্জে বৃষ্টিপাত বন্ধ থাকায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কয়েকটি এলাকায় রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে সেখানকার সাধারণ মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিভিন্ন উপজেলায় বন্যায় প্লাবিত হয়েছে দুই শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে ইরি ধান, বাদাম ও সবজি খেত। এ ছাড়া ছাতক-সিলেট ও তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ-জেলার এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের কিছু অংশ ওপর দিয়ে বন্যার পানি ভাটির দিকে গড়িয়ে পড়ছে। হাঁটুসমান পানির ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। 

সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। বন্যার পানি ওঠায় কোম্পানীগঞ্জ থানা সদরের মডেল উচ্চবিদ্যালয়ে বন্ধ রয়েছে পাঠদান। ছবিটি গতকাল তোলা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

এদিকে বিগত ২৪ ঘণ্টায় সুরমা নদীর ষোলঘর পয়েন্টে পানির উচ্চতা ২০ সেন্টিমিটার কমে নদীর পানি এখন বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড আবহাওয়া সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, বৃষ্টিপাত বন্ধ থাকলে দুই তিন দিনের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।  জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, বন্যায় জেলায় দুই শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে। যার মধ্যে ছাতকে ১৭২টি, দোয়ারাবাজারে ২৩টি, সদর উপজেলায় ২০টি বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে ছাতকে ২৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রেখে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র খোলার কথা জনিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। এদিকে ছাতকে বন্যা কবলিত ১৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ও ৫ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণার কথা জানিয়েছেন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন।

 জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান, বিভিন্ন উপজেলায় ৭২০ হেক্টর জমির ইরি ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। পানি দ্রুত নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতি কম হবে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে ত্রাণ হিসেবে বিতরণের জন্য দুর্গত উপজেলাগুলোতে সরকারের পক্ষ থেকে ১৫ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দের চাল ও অর্থ সংশ্লিষ্ট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে।

সিলেটে বন্যার্তদের মধ্যে বিএনপির ত্রাণ বিতরণ : কানাইঘাটে বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেছে জেলা বিএনপি। গতকাল দুপুরে জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরীর নেতৃত্বে দলের নেতা-কর্মীরা এই ত্রাণ বিতরণ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মামুনুর রশীদ মামুন, জেলা আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্য ইশতিয়াক আহমদ সিদ্দিকী, জেলার সাবেক সহ-দফতর সম্পাদক দিদার ইবনে তাহের লস্কর, জেলা বিএনপি নেতা মাহবুব আলমসহ জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলা বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতারা।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর