বৃহস্পতিবার, ১৯ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

বাধ্যতামূলক হচ্ছে মালিকের এনআইডি

ভূমিকর দিতে লাগবে মোবাইল নম্বরও, মন্ত্রিসভায় উঠছে আইন

উবায়দুল্লাহ বাদল

ভূমি উন্নয়ন কর নির্ধারণের জন্য এখন থেকে ভূমি মালিকের তথ্যাদির সঙ্গে মোবাইল নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট এনআইডিধারী ব্যক্তির একই মৌজায় কী পরিমাণ ভূমি রয়েছে তা সুনির্দিষ্ট করে ভূমি কর নির্ধারণ ও আদায় করা হবে। এ কারণে ভূমি মালিকের মোবাইল নম্বর ও এনআইডি দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। জমির মালিকদের কাছে মোবাইল মেসেজের মাধ্যমে ভূমি উন্নয়ন করের পরিমাণ জানিয়ে দেওয়া হবে। উল্লিখিত বিধান রেখে ‘দ্য ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ট্যাক্স অর্ডিন্যান্স ১৯৭৬’ যুগোপযোগী করে ‘ভূমি উন্নয়ন কর আইন, ২০২২’-এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে প্রস্তাবিত আইনের খসড়া অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে। এ ছাড়া ভূমি-সংক্রান্ত আরও দুটি আইনের খসড়া অনুমোদনের জন্য উপস্থাপনের কথা রয়েছে।

বর্তমান আইন অনুযায়ী, ব্যক্তি ও পরিবারভিত্তিক কৃষিজমির মোট পরিমাণ ৮ দশমিক ২৫ একর (২৫ বিঘা) পর্যন্ত হলে কোনো ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হয় না। প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, তবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল না হলে যে কোনো পরিমাণ জমির জন্য ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হবে। কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তি ও পরিবারভিত্তিক কৃষিজমির পরিমাণ ২৫ বিঘার বেশি হলে বা কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল নয় এমন কোনো ব্যক্তি বা পরিবার বা কোনো সংস্থার যে কোনো পরিমাণ কৃষিজমি থাকলে সম্পূর্ণ জমির ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হবে। ভূমি উন্নয়ন কর ধার্য হবে অর্থবছর (১ জুলাই থেকে ৩০ জুন) অনুযায়ী। এখন কর ধার্য হয় বাংলা সন অনুযায়ী। মওকুফের অধীন আখ আবাদ, লবণ চাষের জমি এবং কৃষকের পুকুর (বাণিজ্যিক মৎস্য চাষ ছাড়া) অন্তর্ভুক্ত হবে। আবাসিক জমি, বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত জমি, শিল্পকাজে ব্যবহৃত জমি, কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তি বা পরিবার, ভূমি মালিকসহ বিভিন্ন বিষয়ে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে খসড়া আইনে। খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, অকৃষিজমির ভূমি উন্নয়ন করের হার নির্ধারণের জন্য অগ্রসরতার মানদণ্ডে দেশের সব জমি ক, খ, গ, ঘ ও ঙ- এই পাঁচ এলাকায় শ্রেণিবিভাগ বিবেচিত হবে, যা সরকার গেজেট প্রজ্ঞাপন দিয়ে সময়ে সময়ে খতিয়ানে বর্ণিত অংশ অনুসারে নির্ধারণ করবে। উত্তরাধিকার বা অন্য কোনো হস্তান্তরের ফলে জমির মালিক একাধিক ব্যক্তি হলে তারা জমা খারিজ করে আলাদা নামজারি না করালে একই দাগভুক্ত হিসেবে জমির ওপর ভূমি উন্নয়ন কর আরোপ করা হবে। প্রতিবছর জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে জুন মাসের শেষ তারিখ পর্যন্ত অর্থবছর অনুযায়ী ভূমি উন্নয়ন কর জরিমানা ছাড়া আদায় করা যাবে। বকেয়া ও হাল ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের সঙ্গে বা পরে ভূমির মালিক আগ্রহী হলে সর্বোচ্চ তিন বছরের ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করা যাবে। অগ্রিম আদায়ের ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে ভূমি উন্নয়ন করের হার বাড়লে বর্ধিত পরিমাণ সরকারি পাওনা অবশ্যই আদায় করতে হবে। কর আদায় পদ্ধতি প্রসঙ্গে খসড়ায় বলা হয়, নাগরিকের সুবিধার্থে চলমান পদ্ধতির পাশাপাশি ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতেও সরকার ভূমি উন্নয়ন কর দেওয়ার ব্যবস্থা করবে। সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের তফসিলি যে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতেও ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের ব্যবস্থা করবে। কোনো বছরের ভূমি উন্নয়ন কর সেই বছরের ৩০ জুনের মধ্যে পরিশোধ করা না হলে তা বকেয়া হিসেবে বিবেচিত হবে। বকেয়া ভূমি উন্নয়ন করের ওপর প্রথম বছর বার্ষিক ১০ শতাংশ হারে, দ্বিতীয় বছর ১৫ শতাংশ হারে এবং তৃতীয় বছর থেকে ২০ শতাংশ হারে জরিমানা আদায় করতে হবে। তৃতীয় বছর শেষে ‘দ্য পাবলিক ডিমান্ড রিকভারি অ্যাক্ট, ১৯১৩’ অনুযায়ী সার্টিফিকেট মামলা করা যাবে। মামলার মাধ্যমে বকেয়া করের ওপরের হার অনুযায়ী জরিমানাসহ আদায় করা হবে। কোনো ভূমি মালিকের একই মৌজায় একাধিক খতিয়ানের জমি থাকলে তা একটি জমাবন্দিতে একত্র করে ভূমি উন্নয়ন কর নির্ধারণ ও আদায় করতে হবে। ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে একক মালিকের মৌজাভিত্তিক জমাবন্দি বা উপজেলা, জেলা বা পুরো এলাকার জমির তথ্য মন্তব্য কলামে দেখানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

এ জন্য ভূমি মালিকের মোবাইল নম্বর ও এনআইডি দেওয়া বাধ্যতামূলক করতে হবে। সব জমাবন্দি (নাম, জমি ও খাজনার বিবরণী) অন্তর্ভুক্ত থাকলে ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা জুলাই মাসের মধ্যে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে নির্ধারিত ফরমে ভূমি উন্নয়ন করের তালিকা তৈরি করে জমাবন্দি মালিকদের কাছে মোবাইল মেসেজের মাধ্যমে ভূমি উন্নয়ন করের পরিমাণ জানিয়ে দেওয়া হবে। এই নোটিফিকেশন ভূমি উন্নয়ন কর নির্ধারণের নোটিস জারি বলে বিবেচিত হবে। কোনো ভূমি মালিকের কোনো দাগের জমি শতাংশের ভগ্নাংশ থাকলে তা পরবর্তী পূর্ণ শতাংশে গণ্য করে ভূমি উন্নয়ন কর নির্ধারণ করা হবে। এ ছাড়া সরকারি কবরস্থান, শ্মশান, জামে মসজিদ, ঈদগাহ, মাঠ, সর্বজনীন মন্দির, গির্জা বা সর্বসাধারণের প্রার্থনার স্থান ভূমি উন্নয়ন করের বাইরে থাকবে। তবে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, গোত্রীয়, দলীয় ও সম্প্রদায়ভিত্তিক উপাসনালয় বা সমাধিক্ষেত্র এবং দান ও দর্শনীর অর্থে বা সহায়ক বাণিজ্যিক কার্যক্রমের মাধ্যমে পরিচালিত উপাসনালয় বা সমাধিক্ষেত্র ভূমি উন্নয়ন করের আওতায় থাকবে বলে খসড়ায় বলা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর