শিরোনাম
রবিবার, ২২ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

ঝড় বজ্রপাত ট্রলারডুবিতে নিহত ৮

প্রতিদিন ডেস্ক

আকস্মিক কালবৈশাখী ঝড়ে গতকাল দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভোরের দিকে এ ঝড়ের সময় বজ্রপাত ও ট্রলারডুবিও ঘটে। বজ্রপাতে ছয়জন ও ট্রলারডুবিতে দুজন নিহত হয়েছেন। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহে ১০ মিনিটের কালবৈশাখী ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তিন উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম। বজ্রপাতে স্বামী-স্ত্রী ও দুটি মহিষ নিহত হয়েছে। স্থানীয় সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে, সকাল ৬টার দিকে হঠাৎ আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে ওঠে। মুহূর্তেই বৃষ্টি ও প্রচণ্ড ঝড় শুরু হয়। এতে কালীগঞ্জ উপজেলার এনায়েতপুর, রঘুনাথপুর, পিরোজপুর, খোসালপুরসহ ১০ গ্রামের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ১০ মিনিট স্থায়ী এ ঝড়ে বাড়িঘর, আম, কলা, ফসল, বিদ্যুতের পোল ও বিভিন্ন গাছ ভেঙে যায়। হরিণাকুণ্ডু উপজেলার জোড়াদহ, মালিপাড়া, তৈলটুপিসহ কয়েকটি গ্রামের পান ও কলার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কালীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার রথীন্দ্রনাথ বসাক জানান, ঝড়ে ৩৩টি বিদ্যুতের পোল ভেঙে গেছে। তা ছাড়া ৩৩ কেভি লাইনের ওপর গাছ পড়েছে। এদিকে ভোরবেলা শৈলকুপা উপজেলার কুলচারা গ্রামে বেগুন খেতে বেগুন ওঠাতে গিয়ে স্বামী গোলাম নবী ও তার স্ত্রী রূপা খাতুন বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া সদর উপজেলার ডেফলবাড়িয়া গ্রামে বজ্রপাতে আশরাফুল ইসলাম নামে এক কৃষকের গোয়ালঘরের দুটি মহিষও নিহত হয়েছে। বজ্রপাতে আগুন লেগে পুড়ে গেছে কালীগঞ্জ উপজেলার সুন্দরপুর গ্রামের মাঠে এক কৃষকের ১০ কাঠা জমির বোরো ধান।

বগুড়া : বগুড়ায় কালবৈশাখী ঝড়ে গাছ ও ঘরের দেয়াল চাপা পড়ে দুজন নিহত হয়েছেন। তার মধ্যে শাজাহানপুরে বৃ-কুষ্টিয়া গ্রামে আবদুল হালিম (৫০) গাছচাপায় এবং কাহালু উপজেলায় গাছ পড়ে ঘর ধসে যাওয়ায় মাটিচাপায় মারা গেছেন শাহিন (৪৫) নামে এক দিনমজুর। জানা গেছে, ভোররাতের ঝড়ে একটি বড় গাছ ভেঙে আবদুুল হালিমের ঘরের ওপর পড়ে। এরপর সেই গাছের ডাল কাটতে গেলে চাপা পড়ে তিনি গুরুতর আহত হন। বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে দুপুরে তিনি মারা যান। হালিম শাজাহানপুর বৃ-কুষ্টিয়া গ্রামের আনছার আলীর ছেলে। এ ছাড়া ঘরধসে মাটিচাপায় মারা যাওয়া শাহিন গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার জুমারবাড়ী গ্রামের মৃত গুলজারের ছেলে। তিনি প্রায় সাত বছর আগে থেকে কাহালুতে দিনমজুরের কাজ করছিলেন। এখানেই তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাস করছিলেন। বগুড়া আবহাওয়া অফিস সূত্র জানান, ভোর ৪টায় কালবৈশাখী ঝড় ৮৮ দশমিক ৬ কিলোমিটার বেগে বয়ে যায়। বগুড়া জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিসার গোলাম কিবরিয়া জানান, ঝড়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে গাছপালা ও বৈদ্যুতিক লাইনের। বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ওপর গাছ উপড়ে পড়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ভোর ৪টায় বগুড়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। ফলে বিকাল ৩টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ ছিল না।

দিনাজপুর : বজ্রসহ বৃষ্টির সময় চিরিরবন্দর উপজেলার বাড়ির পাশের জমিতে গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে আলতাফ হোসেন (৪৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। তিনি উপজেলার আউলিয়াপুকুর ইউনিয়নের আতারবাজার কাকপাড়ায় খলিল উদ্দীনের ছেলে। গতকাল দুপুর ২টার দিকে আতারবাজার কাকপাড়ায় এ বজ্রপাত হয়।

মুন্সীগঞ্জ : লৌহজংয়ের শিমুলিয়া ঘাট বরাবর পদ্মা নদীর মাঝে ঝড়ের কবলে পড়ে ৩৫০ মণ ধান নিয়ে একটি মালবাহী ট্রলার ডুবে গেছে। সকাল ৬টায় হঠাৎ ঝড়ের কবলে পড়ে মাওয়া থেকে শিবচরগামী ধানবোঝাই ট্রলারটি ডুবে যায়। ট্রলারে ১৫ জন শ্রমিক ছিলেন। এর মধ্যে দুজন নিখোঁজ। তারা হলেন হেলাল (৩৮) ও কাজল (২৮)। সন্ধ্যায় এ খবর লেখা পর্যন্ত তাদের সন্ধান না পাওয়ায় ধারণা করা হচ্ছে ট্রলারডুবিতে তারা মারা গেছেন।

চকরিয়া (কক্সবাজার) : চকরিয়ায় গাছচাপা পড়ে আবদুস শুক্কুর (৩৭) নামে এক যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকাল ১০টার দিকে উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের শান্তিনগরে এ ঘটনা ঘটে। শুক্কুর ওই এলাকার নুরুল হোসাইনের ছেলে। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহরাজ উদ্দিন মিরাজ জানান, সকালের দিকে প্রচণ্ড বেগে কালবৈশাখী বাতাস শুরু হয়। এমন সময় বাইরে কাজ করছিলেন আবদুস শুক্কুর। প্রচণ্ড বাতাসে উঠানের একটি গামারি গাছ ভেঙে তার মাথায় পড়ে। এতে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।

ভোলা : মেঘনা নদীতে কালবৈশাখী ঝড়ে বালুবোঝাই বাল্কহেড ডুবে গেছে। এ ছাড়া ঝড়ের কবলে পড়ে অন্য একটি বাল্কহেডের ধাক্কায় নদীপাড়ের তিনটি দোকানঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। তবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। সকালে ভোলা সদর উপজেলর ধনিয়া ইউনিয়নের তুলাতলী মাছঘাট এলাকায় মেঘনা নদীতে এ ঘটনা ঘটে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দুপুরে ডুবে যাওয়া বাল্কহেড উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। স্থানীরা জানান, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে কালবৈশাখী ঝড়ে হঠাৎ মেঘনা নদী উত্তাল হয়ে ওঠে। এ সময় ঝড়ের কবলে পড়ে তুলাতলী ঘাটের কাছে অবস্থানরত এমভি তামিম শামিম নামে একটি বালুবোঝাই বাল্কহেড ডুবে যায়। বাল্কহেডটিতে থাকা ছয়জন স্টাফ নিরাপদে তীরে উঠে আসেন। এ সময় ঘাটের কাছে নোঙর করা এমভি হৃদয় নামে অন্য একটি খালি বাল্কহেড প্রচণ্ড বাতাস ও নদীর উত্তাল ঢেউয়ের তোরে এসে নদীতীরবর্তী দোকানপাটে ধাক্কা দেয়। এতে তুলাতলী মাছঘাটের একটি চায়ের দোকান ও দুটি মাছের আড়ত দুমড়ে মুচড়ে বিধ্বস্ত হয়। তবে কেউ হতাহত হয়নি।

চুয়াডাঙ্গা : আলমডাঙ্গা উপজেলার বেশকিছু এলাকায় টর্নেডো আঘাত হেনেছে। গতকাল সকালে আচমকা টর্নেডোর আঘাতে অর্ধশতাধিক বাড়িঘরের ক্ষয়ক্ষতি হয়। ভেঙে পড়ে গাছপালা। এতে চুয়াডাঙ্গা-কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা-রাজশাহী রুটের সড়ক ও রেলপথে প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রনি আলম নূর জানান, টর্নেডোর আঘাতে উপজেলার কালিদাসপুর ও ডাউকি ইউনিয়নে অন্তত ৪০টি বাড়িঘরের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সড়কের পাশের গাছপালার বেশি ক্ষতি হয়েছে। এতে চুয়াডাঙ্গা-কুষ্টিয়া রুটে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। উপজেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের চেষ্টায় বেলা ১১টায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশনের মাস্টার মিজানুর রহমান জানান, আলমডাঙ্গার ঘেঁসা হালসা এলাকায় রেললাইনের ওপর গাছ পড়ায় চুয়াডাঙ্গা-রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা-চিলাহাটি ও চুয়াডাঙ্গা-গোয়ালন্দ রুটে প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে।

নওগাঁ : কালবৈশাখী ঝড়ে নওগাঁয় আম, ধান, গাছ, বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন গ্রামে বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শুক্রবার ৩টার দিকে শুরু হয় কালবৈশাখী। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা ঝড়বৃষ্টির কারণে উড়ে গেছে ঘরের চালা, উপড়ে গেছে গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি। গাছের ডাল পড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে ও তার ছিঁড়ে অনেক স্থানে বিদু্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে আম ও ধানের। বিভিন্ন রাস্তায় গাছপালা ভেঙে পড়ে আছে। শত শত হেক্টর জমির আম ও ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

খাগড়াছড়ি : খাগড়াছড়িতে ঝড়ো হাওয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে ৭টায় হঠাৎ ঝড়ো হাওয়ার প্রভাবে বিদ্যুতের খুঁটি ও গাছপালা ভেঙে ঘণ্টাখানেক যান চলাচল বন্ধ ছিল। বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের বিভিন্ন স্থানে গাছপালা ভেঙে পড়ে ও তার ছিঁড়ে গিয়ে পাঁচ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল বিভিন্ন এলাকা। খাগড়াছড়ি বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী স্বাগত সরকার জানান, ঝড়ো হাওয়ায় ৩৩ কেভি ও ১১ কেভি লাইনে গাছ ভেঙে ও ডালপালা পড়ে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ : কালবৈশাখীর তাণ্ডবে ঘরবাড়ি, দোকানপাটসহ শত শত গাছপালা ভেঙে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে কাজিপুর। গতকাল ভোরে এ অঞ্চলে কালবৈশাখী ঝড় হানা দেয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সোনামুখী বাজার।

এ বাজারের বেশ কয়েকটি দোকানঘরের চাল উড়ে গেছে। সেই সঙ্গে বৈদ্যুতিক লাইনও বিচ্ছিন্ন হয়েছে।

সর্বশেষ খবর