সোমবার, ২৩ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

স্বস্তিতে নেই বন্যাকবলিতরা

সিলেট নগরীতে ছড়িয়ে পড়েছে উৎকট দুর্গন্ধ, দিরাই শাল্লায় বাড়ছে পানির উচ্চতা, নেত্রকোনায় প্লাবিত নিম্নাঞ্চল

প্রতিদিন ডেস্ক

স্বস্তিতে নেই বন্যাকবলিতরা

সুনামগঞ্জ পৌরসভার বন্যাকবলিত পূর্ব সুলতাপুর এলাকা। গতকালের তোলা ছবি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

সিলেট নগরী থেকে পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছে উৎকট দুর্গন্ধ। গতকাল পর্যন্ত যাদের বাসা-বাড়ি থেকে পানি নেমে গেছে দুর্গন্ধের কারণে তারাও ফিরতে পারছেন না নিজ ঘরে। অন্যদিকে বন্যাকবলিত এলাকায় খাবার ও পানীয় জলের সংকট রয়ে গেছে। দুর্ভোগ কিছুটা কমলেও স্বস্তিতে নেই মানুষ। ত্রাণের জন্য পানিবন্দি মানুষের মাঝে এখনো হাহাকার চলছে। সুনামগঞ্জের দিরাই ও শাল্লায় ক্রমেই  বাড়ছে পানির উচ্চতা। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে দেখা দিতে পারে বন্যা। নেত্রকোনার দুর্গাপুরে কেরণখোলা আত্রাখালী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল। ভয়ংকর বন্যার আশঙ্কা করেছেন সেখানকার মানুষ।

সিলেট : পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে সিলেট নগরীর বন্যা আক্রান্ত এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে দুর্গন্ধ। সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, পানি পুরোপুরি না নামলে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করা সম্ভব হবে না। চিকিৎসকরা বলছেন, বন্যা পরবর্তীতে নানা রোগ বালাইয়ের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে।

বন্যার পানি কমতে শুরু করায় অনেক স্থানে ভেসে উঠছে রাস্তাঘাট। আগে যেসব রাস্তা দিয়ে নৌকায় চলাচল করতে হতো এখন সেসব জায়গায় রিকশা এবং গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। এখনো নগরীর সুরমা নদীর তীরবর্তী কিছু এলাকা এবং উপজেলাগুলোর নিম্নাঞ্চল পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এসব এলাকা থেকে পানি নামতে আরও ২-৩ দিন সময় লাগতে পারে বলে মনে করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ। বন্যাকবলিত এলাকায় খাবার ও পানীয় জলের সংকট রয়ে গেছে। দুর্ভোগ কিছুটা কমলেও স্বস্তিতে নেই মানুষ। ত্রাণের জন্য পানিবন্দি মানুষের মাঝে এখনো হাহাকার চলছে। সরকার থেকে বরাদ্দকৃত ত্রাণ খুবই অপ্রতুল বলে দাবি তাদের। জেলার কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা এখনো স্বাভাবিক হয়নি।

গতকাল নগরীর উপশহর, তেররতন, সাদিপুর, কুশিঘাট, সোবহানীঘাট, যতরপুর, ছড়ারপাড়, মাছিমপুর, তালতলা ও জামতলাসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। সুরমা নদীর পানি কমায় লোকালয় থেকেও পানি নামছে। বন্যাকবলিত এলাকায় মারাত্মক দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। দুর্গন্ধের কারণে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। বহুতল ভবনের নিচতলা এবং কলোনিতে যারা বসবাস করতেন, পানি নেমে যাওয়ায় তারা ফিরে এসেছেন। কিন্তু দুর্গন্ধের কারণে পরিবার নিয়ে তারা বাসায় উঠতে পারছেন না। অনেককে দেখা গেছে শ্রমিক লাগিয়ে বাসা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে। তবে দুর্গন্ধ না কমা পর্যন্ত তারা বাসায় ফেরার চিন্তা বাদ দিয়েছেন।

উপশহরের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন জানান, এক সপ্তাহ পর তার বাসা থেকে পানি নেমেছে। বাসার ভিতর ও আশপাশ এলাকায় এত বেশি দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে তাতে কোনোভাবেই পরিবার নিয়ে বাসায় ওঠা সম্ভব নয়।

সিলেট সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনাবিষয়ক কর্মকর্তা হানিফুর রহমান জানান, বন্যার পানিতে ময়লা-আবর্জনা পচে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়েছে। পানি পুরোপুরি না কমায় পরিচ্ছন্নতা অভিযান জোরদার করা যাচ্ছে না। তবে যথাসম্ভব পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুর রহমান জানান, বন্যা পরবর্তীতে আক্রান্ত এলাকায় অপরিচ্ছন্ন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বিরাজ করে। এ থেকে ডায়রিয়া ও বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ দেখা দিতে পারে। সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।

সিলেট শহরের মতো জেলার সবকটি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বেশিরভাগ রাস্তাঘাট থেকে বন্যার পানি নেমে গেছে। তবে নিম্নাঞ্চলে এখনো বাড়ি-ঘর বন্যার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।

সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জে বিপৎসীমার নিচে নেমে এসেছে সুরমা নদীর পানি। নয় দিন পর রোদ ঝলমল একটি দিন পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন বানভাসি মানুষ। তবে অস্বস্তি বেড়েছে ভাটির উপজেলা দিরাই ও শাল্লায়। সেখানে ক্রমেই  বাড়ছে পানির উচ্চতা। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে সেখানে দেখা দিতে পারে বন্যা পরিস্থিতি। ছাতক ও দোয়ারাবাজারে বন্যা পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। ছাতকের ভাটির চার ইউনিয়নে পানি কমা ধীরগতি হওয়ায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে। একই অবস্থা সুনামগঞ্জ পৌরসভার বর্ধিত এলাকায়ও। নিচু এলাকায় তৈরি ঘরবাড়ি থেকে এখনো পানি নামেনি।

বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় ছাতক-সিলেট ও তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। বানের তোড়ে সেতু ভেঙে যাওয়ায় জেলা সদরের সঙ্গে দোয়ারাবাজার উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত জানান, বর্ধিত পৌর এলাকার অনেক স্থান থেকে এখনো বন্যার পানি নামেনি।  হাওর তীরবর্তী হওয়ায় এসব এলাকা থেকে ধীরগতিতে পানি নামছে। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, চলতি বন্যায় জেলায় ৮২৯ হেক্টর জমির বোরো ধান নিমজ্জিত হয়েছে। এ ছাড়া ৭০ হেক্টর বাদাম, ৪৮ হেক্টর আউশ ধানের বীজতলা ও ৪০ হেক্টর জমির সবজি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

নেত্রকোনা : পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার দুর্গাপুরে কেরণখোলা আত্রাখালী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে উপজেলার  নওয়াগাঁওসহ বিভিন্ন গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। অন্যদিকে কলমাকান্দা উপজেলার উপদাখালী নদীর ডাকবাংলো পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪০ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।  স্থানীয়রা ভয়ংকর বন্যার আশঙ্কা করছেন।

স্থানীয়রা জানান, কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করেছে।

সীমান্তবর্তী দুর্গাপুরে পাহাড়ি নদী সোমেশ্বরী, কেরণখোলা, কলমাকান্দায় কংশ, মহিষখোলা, গণেশ্বরী, মঙ্গলেশ্বরী, মহাদের খালিয়াজুরীর ধনু নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরই মধ্যে দুর্গাপুর ও কলমাকান্দার বিভিন্ন ইউনিয়নে নদী তীরবর্তী গ্রামের নিম্নাঞ্চল পাঁচগাঁও সীমান্ত এলাকায় দুর্ভোগ শুরু হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ায় কাটা হয়নি ফসল। চোখের সামনেই তলিয়ে গেছে কয়েক শ হেক্টর জমির সোনালি ধান। ইতোমধ্যেই কেরণখোলা নদীর পানিতে দুর্গাপুর চ-ীগড় ইউনিয়নের নওয়াগাঁওসহ হরিপুর, লিলাখালী এমন বেশ কটি গ্রাম তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন গ্রামবসী। এ ছাড়া কলমাকান্দার একটি বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছে কয়েক শ কৃষক পরিবার। মুহূর্তেই পানিতে তলিয়ে গেছে শতাধিক হেক্টর জমির পাকা ধান। কেউ কেউ কিছু ধান সংগ্রহ করতে পারলেও বৈরী আবহাওয়ায় শুকাতে না পেরে চারা গজিয়ে নষ্ট হচ্ছে শত শত মণ ধান। নষ্ট হয়ে গেছে গবাদিপশুর প্রধান খাদ্য খর। কলমাকান্দার পোগলা ইউনিয়নের পাঠানপাড়া, সাতপাকের ভিটা, শুনই, গাছতলাসহ বিলপাড় গ্রামে বসবাসরত অন্তত কয়েক শ পরিবারের অবস্থা প্রায় একই রকম। বছরের একমাত্র ফসল হারিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে পরিবারগুলোর।

ফরিদপুর : ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। উপজেলার চারটি ইউনিয়নে ১০৯ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। আংশিক তলিয়েছে ১৬৪ হেক্টর জমির ফসল।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর