সোমবার, ২৩ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

আমে ৬ হাজার কোটি টাকার হাতছানি

প্রত্যাশার চেয়ে বেশি বিকিকিনি হতে পারে

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

আমে ৬ হাজার কোটি টাকার হাতছানি

রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁয় চলতি মৌসুমে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার আমের ব্যবসা হবে। এখন পর্যন্ত আমের ফলন, বাজার দর যেভাবে আছে, তাতে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে বলে মনে করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। এদিকে, প্রত্যাশার চেয়ে কিছুটা বেশি বিকিকিনি হতে পারে বলে জানিয়েছে ফল গবেষণা কেন্দ্র।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দেওয়া তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে ৯০১ কোটি, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩ হাজার ১৫০ কোটি ও নওগাঁয় ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ব্যবসার সম্ভাবনা আছে।

বাগানে থোকায় থোকায় দুলছে গোপালভোগ, খিরসাপাতি, রানীপচ্ছন্দ, ল্যাংড়া, ফজলি, আশ্বিনা, বারি-৪, আম্রপালিসহ বিভিন্ন জাতের আম। রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁর বাগানগুলোতে এমন দৃশ্য সবার নজর কাড়ছে। বিক্রির জন্য বাজারে উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন জাতের আম। কৃষি বিভাগ বলছে, সামনে নতুন প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হলে চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবারও আমের উৎপাদনে

নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। জেলার চাষি, বাগানমালিক ও ব্যবসায়ীরা চলতি মৌসুমে বিভিন্ন জাতের আম বিক্রি করে ৩ হাজার ১৫০ কোটি টাকার ব্যবসা করতে পারবেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক জানান, গত কয়েক বছর আমের দাম না পাওয়ায় ব্যাপক লোকসান  গুণতে হয়েছে এ অঞ্চলের চাষিদের। তবে নানা প্রতিকূলতায় আমের উৎপাদন অনেক কম হলেও এবার করোনার প্রভাব ও বাজারজাতকরণে বাধা না থাকায় আমের ভালো দাম পাওয়ার আশা করছি।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খান বলেন, গাছে আম পাকলেই সেই আম বাজারে নামাতে পারবেন কৃষকরা। আর যদি কেউ অপরিপক্ব আম বাজারে নামায়, তা হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর এ কারণে চলতি আম মৌসুমে আমপাড়ার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়নি। কৃষি অফিস জানায়, ২০১৯ সালে ২ লাখ ৩৯ হাজার টন আমের উৎপাদন হয় এবং ১ হাজার ৭৯১ কোটি টাকার ব্যবসা হয়। ২০২০ সালে ২ লাখ ৪৫ হাজার টন আমের উৎপাদন হয় এবং ২ হাজার ৫০৭ কোটি টাকার ব্যবসা হয়। ২০২১ সালে ৩ লাখ ৮২ হাজার টন আমের উৎপাদন হয় এবং ৩ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়। আর এ বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। ৫৫-৬০ লাখ গাছে চলতি মৌসুমে কৃষি বিভাগ জেলায় আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৩ লাখ ২৫ হাজার টন। এতে ৩ হাজার ১৫০ কোটি টাকার আম বিক্রির সম্ভাবনা আছে। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, গড়ে ৪০ টাকা কেজি দরে আম কেনাবেচা নির্ধারণ করেছিল কৃষি অধিদফতর। সে হিসাব অনুযায়ী, গত মৌসুমে ৮০৬ কোটি ৯ লাখ ৯৩ হাজার টাকার আমের ব্যবসা হয়েছে। আর চলতি মৌসুমে তুলনামূলক বেশি জমিতে আমের চাষ হলেও আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৭৬.২৪ মেট্রিক টন। কৃষি অধিদফতরের তথ্য মতে, এবার প্রতি কেজি আমের গড় মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪২ টাকা। সে অনুযায়ী চলতি মৌসুমে ৯০১ কোটি ৬৪ লাখ ২ হাজার ৮০ টাকার আমের ব্যবসা হবে বলে তারা প্রত্যাশা করছেন। নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক শামছুল ওয়াদুদ জানান, চলতি মৌসুমে নওগাঁ জেলায় ২৯ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৫০ টন। এ হিসাবে এবার জেলার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৪৩৫ টন আম। প্রতি কেজি আমের গড় মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করে চলতি মৌসুমে ১ হাজার ৮৪২ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার আম বাণিজ্যের আশা করছে জেলার কৃষি বিভাগ। রাজশাহীর আম বাজারে আসতে শুরু করেছে। চলতি মৌসুমে ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমির আমবাগানে গাছে গাছে ঝুলছে আম। করোনা মহামারীর ভয় কাটিয়ে এবার ব্যবসায়ীরাও প্রস্তুতি নিয়েছেন আম কেনাবেচার। রাজশাহীতে এবার ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৭৬ মেট্রিক টন (হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ১১.৬০ মেট্রিক টন) আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে হিসাবে চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে ৯০১ কোটি ৬৪ লাখ ২ হাজার ৮০ টাকার আমের বিকিকিনি হওয়ার প্রত্যাশা করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর