সোমবার, ২৩ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

সিলেটে বন্যায় কৃষি ও মৎস্য খাতে ৪০ কোটি টাকার ক্ষতি

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেটে ভয়াবহ বন্যায় মারাত্মক ক্ষতিসাধিত হয়েছে কৃষি ও মৎস্য খাতে। হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল ও খামারের মাছ ভেসে গেছে বানের পানিতে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েক লাখ কৃষক ও মৎস্য খামারি। কৃষি ও মৎস্য অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, এ দুই খাতে প্রায় ৪০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের ধারণা, ক্ষতির পরিমাণ ১০০ কোটি টাকার ওপরে। চলতি বন্যায় সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার অন্তত ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। তলিয়ে যায় ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, হাটবাজার, ফসলি জমি ও মৎস্য খামার।

সিলেট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, বন্যায় ১ হাজার ৬০০ হেক্টর আউশ ধানের বীজতলা, ১ হাজার ৭০৬ হেক্টর বোরো ধান ও ১ হাজার ৪০০ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন সবজি তালিয়ে গেছে। এতে ১০ থেকে ১২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। সিলেট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা (উপপরিচালক) মোহাম্মদ কাজী মজিবুর রহমান জানান, বন্যার আগে কৃষকরা আউশের বীজতলা প্রস্তুত করেছিলেন। কেউ কেউ চারা লাগানো শুরু করেছিলেন। বন্যায় বীজতলা ও চারা তলিয়ে গিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, সিলেটে এখনো বোরো ধান কাটা শেষ হয়নি। প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা বাকি রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমির ধান পানিতে নিমজ্জিত। বেশির ভাগ আধাপাকা।

গত এপ্রিলে আগাম বন্যায় সুনামগঞ্জ জেলার ৫ হাজার ৭৭৫ হেক্টর বোরো ফসলের ক্ষতি হয়েছিল। মাস দেড়েকের মধ্যে ফের প্লাবিত হয়েছে জেলার অন্তত ছয় উপজেলা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ছাতক, তাহিরপুর ও দোয়ারাবাজার উপজেলা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, চলতি বন্যায় জেলার ১ হাজার ৯ হেক্টর বোরো ধান, ২০ হেক্টরের আউশ ধান, ১২১ হেক্টর আউশ ধানের বীজতলা, ৭০ হেক্টরের সবজি ও ৭৫ হেক্টরের চিনাবাদাম ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। চলতি বন্যায় এখন পর্যন্ত কৃষি খাতে অন্তত ৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম। কৃষির মতো সিলেট ও সুনামগঞ্জে মৎস্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দুই জেলা মিলে অন্তত ২৪ কোটি টাকার মৎস্যসম্পদ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিতে ভেসে গেছে প্রায় ৯ হাজার পুকুর ও খামার। ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যখামারিদের বেশির ভাগই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করেছিলেন। এখন ব্যাংক ঋণ পরিশোধে নিয়ে তারা চোখে অন্ধকার দেখছেন।

সিলেট জেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, বন্যায় জেলার ১১টি উপজেলার ১৮ হাজার ৭৪৯টি পুকুর, দিঘি, হ্যাচারি ও খামার তলিয়ে গেছে। এতে ২ কোটি ১৩ লাখ মাছের পোনা ও ২ হাজার ৩০৫ মেট্রিক টন মাছ পানিতে ভেসে গেছে। এ ছাড়া ক্ষতি হয়েছে মৎস্যখামারের অবকাঠামোও। সিলেট জেলার ১৫ হাজার ১৬৩ জন মৎস্য খামারির ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা বলে জানিয়েছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ।

মৎস্য অফিসের হিসাব অনুযাযী, জেলার মধ্যে জকিগঞ্জে ৬ হাজার ৩৫০টি খামারের ৬ কোটি ২২ লাখ টাকা, গোয়াইনঘাটে ২ হাজার ৫৯২টি খামারের ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা, কানাইঘাটে ২ হাজার ৩৫০টি খামার তলিয়ে ৬৪ লাখ টাকা, বিশ্বনাথে ২ হাজার ১৫০টি খামার তলিয়ে ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, জৈন্তাপুরে ২ হাজার ১০০টি খামার তলিয়ে ৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ও বিয়ানীবাজারে ১ হাজার ৪০২টি খামার তলিয়ে ২ কোটি ১৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া সিলেট সদর উপজেলায় ৫৩৫টি, গোলাপগঞ্জে ৮৪৫টি, বালাগঞ্জে ৭০টি, কোম্পানীগঞ্জে ১৪৫টি ?ও দক্ষিণ সুরমায় ২১০টি খামার তলিয়ে গিয়ে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩ কোটি টাকার।

সিলেট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘জেলায় মাছ চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রতিনিয়ত বাড়ছে।’

সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুনীল মন্ডল জানান, ‘বন্যায় মাছ চাষিদের অন্তত আড়াই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। জেলায় ৪৫০টি পুকুর-খামার-হ্যাচারি ডুবে ৩৫ টন মাছ ও ৩০ লাখ মাছের পোনা ভেসে গেছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর