বুধবার, ২৫ মে, ২০২২ ০০:০০ টা
হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ

হাতিরঝিলের পানি ও সৌন্দর্য অমূল্য

বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর হাতিরঝিলের পানি ও নজরকাড়া সৌন্দর্যকে অমূল্য সম্পদ উল্লেখ করে হাই কোর্ট বলেছেন, কোনোভাবেই হাতিরঝিলের ক্ষতি বা ধ্বংস করা যাবে না। হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রকল্পে সব ধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদের বিষয়ে দেওয়া রায়ে এমন পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। রায়ে সুপেয় পানির বিষয়েও নানা পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে। রায়ে হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রকল্প এলাকায় বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদসহ চার দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ঝিলকে মাছের অভয়ারণ্য করতে ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস বন্ধসহ নয় দফা পরামর্শও দিয়েছে আদালত। গত বছর ৩০ জুন বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। দুই বিচারপতির স্বাক্ষর শেষে গতকাল রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। ৫৫ পৃষ্ঠার রায়টি লিখেছেন বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল। প্রকল্পটির নকশার নির্দেশনার বাইরে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা-সংক্রান্ত প্রতিবেদন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর ২০১৮ সালে জনস্বার্থে হাই কোর্টে রিট দায়ের করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ। পরে ওই রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারি করে হাই কোর্ট। এরপর রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে গত বছরের ৩০ জুন রায় দেওয়া হয়।

চার দফা নির্দেশনা : হাই কোর্টের চার দফা নির্দেশনা হচ্ছে- এক. সংবিধান, পরিবেশ আইন, পানি আইন এবং তুরাগ নদ রায় মোতাবেক রাজধানী ঢাকার ফুসফুস বেগুনবাড়ি খালসহ হাতিরঝিল এলাকা জনগণের সম্পত্তি। দুই. হাতিরঝিল এলাকায় হোটেল, রেস্টুরেন্টসহ সব ধরনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বরাদ্দ এবং নির্মাণ সংবিধান, পরিবেশ আইন, পানি আইন এবং তুরাগ নদের রায় অনুযায়ী বেআইনি এবং অবৈধ। তিন. হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকায় বরাদ্দ করা সব হোটেল, রেস্টুরেন্ট এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান অবৈধ এবং এসব বরাদ্দ বাতিল ঘোষণা করা হলো। চার. এ রায়ের অনুলিপি প্রাপ্তির পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে সব হোটেল, রেস্টুরেন্ট এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদের জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।

দফা পরামর্শ : হাতিরঝিল রক্ষায় হাই কোর্টের দেওয়া নয় দফা পরামর্শ হচ্ছে- এক. হাতিরঝিল এবং বেগুনবাড়ি সম্পূর্ণ প্রকল্পটি সংরক্ষণ, উন্নয়ন এবং পরিচালনায় একটি পৃথক কর্তৃপক্ষ ‘হাতিরঝিল লেক সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ’ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সরাসরি অধীন গঠন করা। দুই. বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রকৌশল বিভাগ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪তম ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডকে যৌথভাবে হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকার স্থায়ী পরামর্শক নিয়োগ করা। তিন. জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য মাটির নিচে আন্তর্জাতিক মানের টয়লেট স্থাপন করা। চার. নির্ধারিত দূরত্বে বিনা মূল্যে জনসাধারণের পান করার জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা। পাঁচ. পায়ে চলার রাস্তা, বাইসাইকেল লেন এবং শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য পৃথক লেন তৈরি করা। ছয়. পানির জন্য ক্ষতিকর হেতু লেকে সকল প্রকার যান্ত্রিক তথা ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস ব্যবহার নিষিদ্ধ করা। সাত. লেকে মাছের অভয়ারণ্য করা। আট. প্রকল্পটি বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর নামে নামকরণ করা এবং নয়. হাতিরঝিল এবং বেগুনবাড়ি সম্পূর্ণ প্রকল্পটি সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও পরিচালনার ব্যয় রেভিনিউ বাজেট থেকে বরাদ্দ করা।

সর্বশেষ খবর