বুধবার, ১ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

পরীক্ষানির্ভরতা কমল নতুন কারিকুলামে

♦ তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত থাকবে না পরীক্ষা ♦ থাকবে না পিইসি জেএসসি-জেডিসি ♦ শ্রেণিকক্ষে মূল্যায়নে জোর ♦ বাস্তবায়ন আগামী বছর থেকে

আকতারুজ্জামান

শিক্ষাকে আনন্দময় করতে ঢেলে সাজানো হচ্ছে পুরো কারিকুলাম। আগামী বছর থেকে প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে ধাপে ধাপে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন করা হবে। নতুন কারিকুলামে কমানো হয়েছে পরীক্ষানির্ভরতা। পরীক্ষা ও মুখস্থ নির্ভর পড়াশোনার পরিবর্তে পারদর্শিতার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।  প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির শিশু শিক্ষার্থীদের জন্য বাতিল করা হয়েছে পরীক্ষা। এ ছাড়া বাতিল করা হয়েছে পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা (পিইসি), অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা। পরীক্ষা কমিয়ে জোর দেওয়া হয়েছে শ্রেণিকক্ষে শিখনকালীন মূল্যায়নে। সোমবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২১’ এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে নতুন কারিকুলামের নীতিগত অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

চূড়ান্ত হওয়া নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী, প্রাক প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শ্রেণিকক্ষে শিখনকালীন মূল্যায়ন করা হবে। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সমাজ ও বিজ্ঞান বিষয়ে শ্রেণিকক্ষে মূল্যায়ন করা হবে ৬০ ভাগ। আর বছর শেষে সামষ্টিক মূল্যায়ন বা পরীক্ষা হবে ৪০ ভাগ। ধর্ম, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও শিল্পকলায় কোনো পরীক্ষা হবে না। শ্রেণিকক্ষে শিখনকালীন মূল্যায়ন বা ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে এসব বিষয়ে। একইভাবে ষষ্ঠ ও অষ্টম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান ও গণিতেও শ্রেণিকক্ষে শিখনকালীন মূল্যায়ন করা হবে ৬০ ভাগ। আর পরীক্ষার মাধ্যমে সামষ্টিক মূল্যায়ন করা হবে ৪০ ভাগ। ধর্ম, ডিজিটাল প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, শিল্পসংস্কৃতি বিষয়ে শ্রেণিকক্ষে ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে। তবে নবম ও দশম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান ও গণিতে শিখনকালীন মূল্যায়ন করা হবে ৫০ ভাগ। সামষ্টিক মূল্যায়ন বা পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন হবে ৫০ ভাগ। বাকি বিষয়গুলোয় পরীক্ষা না নিয়ে শ্রেণিকক্ষে শিখনকালীন ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে। দশম শ্রেণি পর্যন্ত থাকবে না বিজ্ঞান, মানবিক বা ব্যবসায় শিক্ষার মতো কোনো বিভাগ বিভাজন। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে প্রতি বর্ষের শেষে আলাদা চূড়ান্ত পরীক্ষা নেওয়া হবে। একাদশ ও দ্বাদশের ফল সমন্বয় করে দেওয়া হবে এইচএসসি ও সমমানের পাবলিক পরীক্ষার ফল। একাদশ ও দ্বাদশে আবশ্যিক বিষয়গুলোয় শ্রেণিকক্ষে শিখনফলের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে ৩০ ভাগ। পরীক্ষার মাধ্যমে সামষ্টিক মূল্যায়ন করা হবে ৭০ ভাগ। ৭০ ভাগের ওপরই ছাত্র-ছাত্রীদের পাবলিক পরীক্ষা দিতে হবে। ঐচ্ছিক বিষয়গুলোর সবকটিতেই শ্রেণিকক্ষে শিখনফলের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে।

নতুন কারিকুলামে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে সপ্তাহে দুই দিন ছুটি নির্ধারণ করা হয়েছে। জাতীয় দিবসগুলো পালনের সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার নিয়ম রাখা হয়েছে। শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দিবসগুলো পালন করতে হবে। প্রতি শ্রেণিতে মোট বার্ষিক কর্মদিবস নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮৫ দিন।

সূত্র জানায়, ২০২৩ সালে প্রাথমিকে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে এবং মাধ্যমিকে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে এ কারিকুলাম চালু হবে। ২০২৪ সালে তৃতীয়, চতুর্থ এবং অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে এ কারিকুলামে পাঠদান করা হবে। পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন করা হবে ২০২৫ সালে। ২০২৫ সালের মধ্যে পুরো কারিকুলামই বাস্তবায়ন করবে সরকার। নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মাধ্যমিক পর্যায়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ইতোমধ্যে সারা দেশে ৬১টি স্কুল, কারিগরি ও মাদরাসায় পাইলটিং শুরু করা হয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মশিউজ্জামান গতকাল প্রতিবেদককে বলেন, কারিকুলাম অনুমোদন সংক্রান্ত তিনটি জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটি (এনসিসিসি) ও একটি উপদেষ্টা কমিটির যৌথ বৈঠকে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২১’ এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। এই অনুমোদনের পর নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন করতে আর কোনো বাধা থাকল না।

সর্বশেষ খবর