বৃহস্পতিবার, ২ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

মাদক বহনই তাদের পেশা

সন্তান অন্তত কিছু করে খাচ্ছে ভেবে খুশি অভিভাবকরা!

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

মাদক বহনই তাদের পেশা

মাদকের ট্রানজিট পয়েন্ট কক্সবাজারের বাহারছড়া এলাকার নোয়াখালীপাড়ার বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন। একসময় কক্সবাজার সদরে টমটম চালাতেন। এক বছরের ব্যবধানে তার জীবনযাত্রায় এসেছে আমূল পরিবর্তন। তার কাছে আলাদিনের চেরাগ হিসেবে আসে মাদক বহন। কক্সবাজার থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মরণনেশা ইয়াবা পাচার করে হয়েছেন সম্পদের মালিক। সম্প্রতি সাড়ে ৩ হাজার পিস ইয়াবাসহ জয়নাল গ্রেফতার হন চট্টগ্রাম মেট্রো মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের হাতে। জয়নালের এমন অর্থনৈতিক উত্থানের কথা শুনে চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেছে অধিদফতরের কর্মকর্তাদের। শুধু জয়নাল নয়, কক্সবাজারের গ্রামে গ্রামে রয়েছে এমন হাজারো জয়নাল। যারা ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য মাদক বহনকেই পেশা হিসেবে নিয়েছেন।

অধিদফতরের চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মুজিবুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ‘কক্সবাজার-টেকনাফের কিছু এলাকার লোকজন ইয়াবা ক্যারিয়ারকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন। ইয়াবাসহ গ্রেফতার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে দেখা গেছে একসময় তারা দিনমজুরের কাজ করতেন, কেউ টমটম কিংবা ইজিবাইক চালাতেন। ওই পেশা ছেড়ে তারা ইয়াবা বহন করছেন। কতজন ইয়াবা বহনকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন এর কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে ইয়াবা ক্যারিয়ারদের একটা ডাটাবেজ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

ইয়াবাসহ গ্রেফতার হওয়া কক্সবাজারের জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘কক্সবাজার-টেকনাফের বাসিন্দাদের একটি অংশ মাদক বহনকে অপরাধ মনে করে না! কোনো ছেলে মাদক বহন করলেই বরং অভিভাবকরা খুশি হন এ ভেবে যে, ছেলে অন্তত কিছু করে খাচ্ছে। টেকনাফের কিছু এলাকায় প্রতিটি ঘরেই রয়েছেন মাদকের ক্যারিয়ার। তারা মাসে চার থেকে পাঁচটি চালান বহন করে আয় করেন লাখ টাকা।’ অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশের ইয়াবা ব্যবসায়ীরা একসময় নিজেরাই কক্সবাজার থেকে ইয়াবা বহন করলেও বর্তমানে স্থানীয় লোকজন ও রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে তা বহন করা হচ্ছে। বিশেষ করে রিকশাচালক, টমটমচালক, ইজিবাইকচালক, দিনমজুর, হোটেলশ্রমিক, নির্মাণশ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের লোকজনকে ব্যবহার করছেন তারা। এর মধ্যে টেকনাফের পানখালী, নোয়াখালীপাড়া, হ্নীলা, জালিয়াপাড়া, হোয়াক্যং, মৌলভীবাজার, রামুর গোয়ালিয়া পালং (মিনি বান্দরবান), উখিয়ার মরিচ্যা, কক্সবাজার সদরের পাহাড়তলী, লাইট হাউস, টেকপাড়া, বাহারছড়া, নাজিরারটেক, সমিতিপাড়া, দনিয়ানগর, কুরুশকুল এলাকার গ্রামে গ্রামে ইয়াবা বহনকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন লোকজন। কক্সবাজার ছাড়াও গাজীপুর, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, খুলনা, মাদারীপুর, রাজশাহী, বাগেরহাটসহ কয়েকটি জেলার লোকজনও ইয়াবার বাহক হিসেবে কাজ করছেন।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের সহকারী পরিচালক সোমেন মণ্ডল বলেন, ‘কক্সবাজার ছাড়াও কয়েকটি সুনির্দিষ্ট জেলার লোকজন ইয়াবার বহনকারী হিসেবে কাজ করছেন। তারা সরাসরি ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নন। কিন্তু টাকার বিনিময়ে কক্সবাজার থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ইয়াবা বহন করে নিয়ে যান।’

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর