বৃহস্পতিবার, ২ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা
আবেদনে জালিয়াতি

ইতালিতে বাতিল কয়েক শ বাংলাদেশির নাগরিকত্ব

আ স ম মাসুম, যুক্তরাজ্য

ইতালীয় নাগরিকত্ব অর্জনের সময় আবেদনপত্রে জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগে কয়েক শ বাংলাদেশির ইতালীয় নাগরিকত্ব বাতিল হওয়ার উপক্রম হয়েছে। পরিস্থিতিটা বর্তমানে এমন হয়েছে : ইতালিপ্রবাসী এক বাংলাদেশি ইতালির নাগরিকত্ব পান ২০১৮ সালে। নাগরিকত্ব পেয়েই তিনি সপরিবারে চলে আসেন ব্রিটেনে। চলতি বছর এপ্রিলে ব্যক্তিগত কাজে তিনি ইতালি যান। ফেরার সময় তার পাসপোর্ট আটকে দেয় ইতালি ইমিগ্রেশন। কারণ তিনি নাগরিকত্ব আবেদনের সময় প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিলেন, ঘুষ দিয়ে তার নাগরিকত্ব আবেদন করে সফল হন। এখন বিপদ হচ্ছে তার পুরো পরিবার ব্রিটেনে আর তিনি আটকা পড়েছেন ইতালিতে! তিনি ২০১৬ সালের এপ্রিলে তার নাগরিকত্বের আবেদন করেছিলেন।

এমন সংকটের ঝুঁকিতে রয়েছেন অন্তত ২ হাজার বাংলাদেশি; এর মধ্যে অন্তত ৪০০-৫০০ বাংলাদেশি আছেন যারা ব্রিটেনে আসা ইতালীয় প্রবাসী।

ইতালির রাজধানী রোমের পাবলিক প্রসিকিউটর অফিসের ২০২০ সালের ২০ জুলাই জারি করা একটি চিঠির কপি বাংলাদেশ প্রতিদিনের হাতে এসেছে। এ চিঠিতে ১০ জনের একটি জালিয়াত চক্রের নাম প্রকাশ করা হয়েছে; এদের মধ্যে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা ও বাইরের দালাল রয়েছে। চিঠিতে ৪৮৬টি পাসপোর্ট আবেদনের রেফারেন্স নম্বরের উল্লেখ আছে। এ রকম আরও বেশ কিছু চিঠি ইতালির বিভিন্ন শহর থেকে ইস্যু করা হয়েছে। সে চিঠিতে উল্লেখ আছে- ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের মার্চ পর্যন্ত ৪৮৬টি আবেদনের রেফারেন্স নম্বর দেওয়া আছে। এ ৪৮৬ পাসপোর্ট আবেদনের তদন্ত হয় ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের জুলাই পর্যন্ত। মূলত কভিডের আগে এ নাগরিকত্ব বাতিলের চিঠি দেওয়া হলেও নতুন করে আবারও গত দুই মাস থেকে এ চিঠি দেওয়া হচ্ছে। ব্রিটেনপ্রবাসী ইতালি থেকে আসা বাংলাদেশি নাগরিক যিনি আবার ব্রিটেনস্থ ইতালি দূতাবাসের প্রবাসী রাজনীতিবিদদের নিয়ে গঠিত কমিটির ১৮ জন সদস্যের অন্যতম গোলাম মাওলা টিপু বলেন, ‘দুই থেকে আড়াই হাজার ব্যক্তির নাগরিকত্ব বাতিল হতে পারে; এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বাংলাদেশি আছেন।’ তিনি বলেন, ‘আমার কাছে ডজনখানেক লোক এসেছিলেন চিঠি নিয়ে। এটা নিয়ে অবহেলা করা উচিত নয়।’ গোলাম মাওলা টিপু বলেন, ‘ইতালি থেকে ব্রিটেনে আসা অনেক বাংলাদেশি ইতালি দূতাবাসে নিবন্ধন করেননি, মানে ইতালির সরকারের হিসাবে তারা ইতালিতেই আছেন। এর মধ্যে যারা এ জালিয়াতি করেছিলেন তাদের অনেকেই আছেন। তাদের ইতালির সরকার ইতালির ঠিকানায় চিঠি দিয়েছে, সে চিঠির খবরই জানেননি অনেকে। এখন ইতালিতে যাওয়ার পর পাসপোর্ট আটকে রাখা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘এখন যাদের পাসপোর্ট ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে তাদের আবারও সেই ১০ বছর বৈধভাবে থেকে তারপর নতুন করে নাগরিকত্বের আবেদন করতে হবে।’

ইতালিপ্রবাসী সাংবাদিক সোহেল মজুমদার বলেন, ‘অনেকেই শুধু অলসতার কারণে দালালদের শরণাপন্ন হয়ে এমন বিপদ ডেকে এনেছেন। নিজে যে কাজ করা যায় সে কাজ সময় বাঁচানোর জন্য দালালদের দিয়ে করিয়ে আজ অনেকেই পথে।’ গোলাম মাওলা টিপু আরও বলেন, ‘এখন উচিত যারা এ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত তাদের যৌথভাবে মূলধারার একজন দক্ষ আইনজীবী নিয়োগ করা, যিনি ইতালির আইন বোঝেন। নইলে সামনে আরও বিপদ হতে পারে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর