শিরোনাম
শুক্রবার, ৩ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা
সিটি নির্বাচন

পাল্টাপাল্টি অভিযোগ কুমিল্লায়

গোলাম রাব্বানী ও মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা থেকে

কুমিল্লা সিটিতে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরুর পর থেকেই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ চলছে। মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থীরা একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছেন। নির্বাচনী মাঠে উত্তাপ ছড়াচ্ছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। এ ছাড়া হামলা-হুমকির অভিযোগ দিন দিন বাড়ছে। অভিযোগকারীদের অধিকাংশ বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত। তারা বলেন, সরকারদলীয় প্রার্থীর লোকজন আমাদের কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছে। বুধবার রাতে ১ নম্বর ওয়ার্ডের একজন কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে ২০ জনের মতো আহত হন।

এদিকে জমজমাট প্রচার-প্রচারণা চলছে কুমিল্লা সিটিতে। সকাল থেকে রাত, ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন প্রার্থীরা, নগরী চষে বেড়াচ্ছে শত শত প্রচার মাইক; চায়ের আড্ডায় হচ্ছে ভোটের নানা হিসাব-নিকাশ। চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে প্রার্থীদের নিয়ে। অধিকাংশ ভোটারের প্রত্যাশা, নির্বাচনী পরিবেশ যেন শান্তিপূর্ণ থাকে। ভোটাররা যেন শান্তিতে ভোট দিতে পারেন। গতকাল আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী আরফানুল হক রিফাত কান্দিরপাড় টাউন হল সুপার মার্কেট, লাকসাম রোড, ছাতিপট্টি ও টিক্কারচর এলাকায় গণসংযোগ করেন। বিকালে যুবলীগ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে টাউন হলে মতবিনিময় করেন।

টেবিল ঘড়ি মার্কার স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মো. মনিরুল হক সাক্কু ২৭ নম্বর ওয়ার্ড চৌয়ারা বাজার হাইস্কুলের সামনে থেকে গণসংযোগ শুরু করেন। এ দিন তিনি ধনাইতরী জামতলা প্রাঙ্গণে উঠান বৈঠক, ধনপুর ঈদগা মাঠে উঠান বৈঠক, শামবকসী উত্তরপাড়া জামে মসজিদের সামনে উঠান বৈঠক, ধনেশ্বর সরকার বাড়ির সামনে উঠান বৈঠক করেন। স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার কুমিল্লা নগরীর ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের গোয়ালমথন এলাকায় গণসংযোগ করেন। বিকালে কান্দিরপাড় নিউমার্কেট, সাত্তার খান, খন্দকার মার্কেট এলাকায় গণসংযোগ করেন। কাউন্সিলর প্রার্থীরাও নিজ নিজ এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছেন রাত-দিন।

এদিকে বুধবার রাতে ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী গোলাম কিবরিয়ার সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেছেন তিনি। ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ আসনের লাঠিম প্রতীকের কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল হোসেন ছোটনের বিরুদ্ধে এ হামলার অভিযোগ তোলেন তিনি। এ ছাড়া ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সেলিম খান বলেন, প্রতিপক্ষ তার বাসার সামনে পাহারা বসিয়েছে। তার সমর্থকদের বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছে। ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সাইফুল হক চৌধুরী বলেন, তার সমর্থকদের বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে গোলাম কিবরিয়া বলেন, আমার প্রতিপক্ষ কাউন্সিলর পদপ্রার্থী আবুল হোসেন ছোটন তার কর্মী-সমর্থকদের দিয়ে বুধবার রাত সাড়ে ১০টায় তার সমর্থকদের হামলা করে। এ সময় ২০ জনের মতো মানুষ গুরুতর আহত হন। এ সময় তিনি ওই এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত সাব-ইন্সপেক্টর উজ্জ্বলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, ঘটনাস্থলে এসে এসআই উজ্জ্বল আসল অপরাধীদের আটক না করে উল্টো আমার সমর্থকদের লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করেন। তার বিরুদ্ধে আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সামনেও অভিযোগ তুলেছি। কিন্তু কেউ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। উল্টো তিনি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে এসে আমাকে হুমকি দিচ্ছেন। এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল হোসেন ছোটনকে ফোন করা হলে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে আক্তার নামের এক ব্যক্তিকে মোবাইল ফোন দিয়ে দেন। আক্তার বলেন, আপনি লিখে দেন সবকিছুই মিথ্যা। এ কথা বলে তিনি কল কেটে দেন। অভিযোগের বিষয়ে এসআই উজ্জ্বল বলেন, আমি নির্বাচন কমিশনের অধীনে কাজ করি। আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কথার বাইরে যেতে পারি না। তার অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এদিকে একটি সূত্র জানায়, গোলাম কিবরিয়ার সমর্থকদের ওপর হামলা হলে ঘটনাস্থলে তারাও পাল্টা হামলা করে। এতে আবুল হোসেন ছোটনের পাঁচজন সমর্থকও আহত হন। পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমেদ বলেন, প্রতি ওয়ার্ডে আমাদের মোবাইল টিম রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমরা কাজ করছি। রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী বলেন, আমরা কয়েকটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

চলছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ : বিএনপির সাবেক নেতা স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর নির্বাচনী প্রচার করা মাইকম্যানকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। বুধবার নগরীর ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ঝাউতলা এবি ফুড দোকানের সামনে এ ঘটনা ঘটে। মেয়র প্রার্থী সাক্কু জানান, রিটার্নিং অফিসার মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরীর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবরও অনুলিপি দিয়েছি। এ ছাড়া তিনি বিভিন্ন স্থানে মাইক ভাঙচুর ও পোস্টার ছেঁড়ারও কথা বলেন। স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক নেতা মেয়র প্রার্থী নিজামউদ্দিন কায়সার বলেন, তার ব্যানার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে।  আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আরফানুল রিফাত বলেন, তাদের কাজই হচ্ছে মানুষের বিরুদ্ধে বলা। বৃষ্টিতে পোস্টার নষ্ট হচ্ছে। আমার পোস্টারও তো নষ্ট হয়েছে। আমরা তো কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ দিইনি। এদিকে নির্বাচিত হলে সিটি করপোরেশনের দুর্নীতির একটি শ্বেতপত্র প্রকাশের ঘোষণা দিয়েছেন নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত। প্রচারে ও পথসভায় ভোটারদের তিনি এই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। সাবেক মেয়রের উদ্দেশে রিফাত বলেন, তিনি (সাক্কু) ১৬ বছরের বেশি সময় ধরে কুমিল্লা পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্বে ছিলেন। দীর্ঘ এই সময়ে তিনি নগরীর মানুষের জন্য কী করেছেন, তা নগরীর প্রতিটি মানুষের কাছে দৃশ্যমান।

তিনি এত উন্নয়ন করেছেন যে, আধা ঘণ্টা বৃষ্টি হলেই নগরী পানির নিচে ডুবে যায়। যানজটের কারণে নগরীর মানুষ এখন দিশাহারা। তিনি বলেন, আমি নির্বাচিত হলে ১৫ দিনের মধ্যে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করে দুর্নীতিবাজদের তালিকা মানুষের কাছে পৌঁছে দেব। প্রয়োজনে টাউন হল মাঠে মানুষকে ডেকে কে কী অপরাধ করেছেন, তার সব প্রমাণ দেব। আমি নগরীর মানুষের সেবক হতে চাই, অন্যদের মতো নগরপিতা হতে চাই না। রিফাতের অভিযোগকে ‘হাস্যকর’ বলেছেন সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। তিনি বলেন, এগুলো হাস্যকর কথা। আমি দুর্নীতি করলে এত বছর স্থানীয় সরকার বিভাগ বা দুর্নীতি দমন কমিশন আমাকে ধরেনি কেন? আর বিষয়টা তো এমন না যে, আমি সরকারদলীয় লোক। তিনি বলেন, এগুলো বলে কুমিল্লার মানুষকে আমার কাছ থেকে বিমুখ করা যাবে না। মানুষ আমার পাশে আছে, আমিও তাদের পাশে আছি।

সর্বশেষ খবর