শুক্রবার, ৩ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

নতুন জ্বালানি হাইড্রোজেন

চলছে সম্ভাব্যতা যাচাই, চট্টগ্রামে পাইলট প্লান্ট

জিন্নাতুন নূর

আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এবার বাংলাদেশেও নবায়নযোগ্য নতুন জ্বালানি হিসেবে হাইড্রোজেন ব্যবহারের পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে দেশের নতুন জ্বালানি হিসেবে এর সম্ভাবত্য যাচাই শুরু করেছে। এজন্য হাইড্রোজেন নীতি করারও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) হাইড্রোজেন উৎপাদনে চট্টগ্রামে একটি পাইলট প্লান্ট স্থাপন করে নতুন এ জ্বালানি উৎপাদনে সক্ষম হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারিভাবে অর্থায়ন করা হলে ভবিষ্যতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বড় আঙ্গিকে বাণিজ্যিক প্লান্ট তৈরি করে সাধারণের কাছে এ জ্বালানি পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, ‘দেশে পরীক্ষামূলকভাবে নতুন জ্বালানি হাইড্রোজেন দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাব্যতা জরিপ শুরু করেছি। আমরা জ্বালানি হিসেবে হাইড্রোজেন ব্যবহারের ব্যাপারে আগ্রহী। এরই মধ্যে হাইড্রোজেন পলিসি করার ব্যবস্থা নিয়েছি। ধারণা করছি বিশ্বের পরবর্তী জ্বালানি হবে হাইড্রোজেন। বিদ্যুতের নতুন যে মাস্টারপ্ল্যান রিভিউ হচ্ছে সেখানেও হাইড্রোজেন বড় ভূমিকা রাখছে। হাইড্রোজেন থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ইউরোপ ও আমেরিকা অনেক দিন থেকে চেষ্টা করছে। এরই মধ্যে ইইউ এ খাতে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগের জন্য তহবিল গঠন করেছে। দক্ষিণ কোরিয়া একটি হাইড্রোজেন বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করেছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি হিসেবে ভবিষ্যৎ দুনিয়ার জ্বালানি হবে হাইড্রোজেন।’ বর্তমানে বিশ্বে ৫০টির বেশি দেশে সীমিত আকারে জ্বালানি হিসেবে হাইড্রোজেন ব্যবহৃত হচ্ছে। পরিবেশ সুরক্ষায় জাপান ২০৩০ সালের মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করে পুরোপুরি হাইড্রোজেন ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করে। এরই মধ্যে দেশটিতে এ সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। নরওয়ে, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানও এ পথে হাঁটছে। এসব দেশে এরই মধ্যে হাইড্রোজেন জ্বালানির ব্যবহার শুরু হয়েছে। এ তালিকায় এবার নাম লেখাতে আগ্রহী বাংলাদেশ। জানা যায়, বিসিএসআইআরের প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রামে একটি হাইড্রোজেন উৎপাদন পাইলট প্লান্ট স্থাপিত হয়েছে। যেখানে প্রতি ঘণ্টায় এখন ২০ কেজি বায়োমাস (জৈব বস্তুপুঞ্জ) থেকে ১ দশমিক ৬ কেজি হাইড্রোজেন উৎপাদন হচ্ছে। এ ছাড়া এ জ্বালানির গবেষণা কাজে তৈরি করা হচ্ছে একটি গবেষণাগার। এ প্রকল্পের মাধ্যমে সবচেয়ে নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব হাইড্রোজেন জ্বালানি বিস্তারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রকল্পটির লক্ষ্য হচ্ছে হাইড্রোজেন উৎপাদন, মজুদ, সরবরাহসহ সংশ্লিষ্ট গবেষণা ও মান নিয়ন্ত্রণের জন্য অবকাঠামো নির্মাণ ও জাতীয় পর্যায়ের একটি রেফারেন্স সেন্টারের আঙ্গিকে সেবা প্রদান। ২০১৮ সালে এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয়। সাশ্রয়ীভাবে হাইড্রোজেন উৎপাদন এ প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য। প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, আগামী এক দশকের মধ্যেই শিল্প খাত ও যানবাহনে নতুন এ জ্বালানির ব্যবহার শুরু হবে। জানা যায়, দৈনন্দিন বর্জ্য বায়োমাসকে ফিডস্টক হিসেবে ব্যবহার করে হাইড্রোজেন উৎপাদনের পাইলট প্রসেস প্লান্টের কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে। কাঁচামাল হিসেবে পানির ব্যবহার করে শিগগির অন্য একটি প্রসেসিং প্লান্ট স্থাপিত হবে। বিসিএসআইআরের হাইড্রোজেন এনার্জি গবেষণাগার প্রকল্পের পরিচালক ও সংস্থাটির সিনিয়র প্রিন্সিপাল ইঞ্জিনিয়ার ড. মো. আবদুস সালাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আসছে ডিসেম্বরে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। এটি মূলত পাইলট প্রকল্প ছিল। প্রকল্পটি সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় আমরা বড় আঙ্গিকে ব্যবসায়িক ব্যবহারের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে হাইড্রোজেন প্লান্ট নির্মাণ করতে চাই। এখন শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতির অপেক্ষায় আছি।’ দেশে নতুন এ জ্বালানি উৎপাদন ও ব্যবহারের উজ্বল সম্ভাবনা রয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। এ খাতে বড় অবকাঠামো নির্মাণে সরকার অর্থায়ন করলে জ্বালানি হিসেবে হাইড্রোজেনের বাণিজ্যিক ব্যবহারও শুরু হবে।

সর্বশেষ খবর