রবিবার, ৫ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

সিসিটিভির আওতায় আসছে পুরো রাজধানী

♦ আবদুল গণি রোডের কমান্ড সেন্টার ও গুলশান থেকে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে ১৮৮০টি ক্যামেরা ♦ শিগগিরই ৩৬৪টি পয়েন্টে বসছে ১০০০ ক্যামেরা ♦ রাজধানীর প্রবেশমুখের ক্যামেরায় উঠে আসবে সব গাড়ির নম্বর প্লেটের ছবি

সাখাওয়াত কাওসার

সিসিটিভির আওতায় আসছে পুরো রাজধানী

অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুরো রাজধানীই আসছে সিসিটিভির (গোপন ক্যামেরা) নিয়ন্ত্রণে। প্রতিটি প্রবেশপথের পয়েন্টগুলোতে স্থাপিত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরায় সংযোজিত হচ্ছে বিশেষায়িত সফটওয়্যার ‘এএনপিআর’ (অটোমেটেড নম্বর প্লেট রিকগনিশন)। এই সফটওয়্যারের নজরদারিতে থাকবে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোর সড়কে থাকা মোটরসাইকেলসহ সব ধরনের যানবাহন। এর বাইরে বিভিন্ন পয়েন্টে স্থাপিত তাইওয়ানের তৈরি একেকটি ‘পিটিজেড’ ব্র্যান্ডের ক্যামেরার মাধ্যমে দেড় কিলোমিটার পর্যন্ত সড়কের প্রতিমুহূর্তের চিত্র সংরক্ষিত হচ্ছে সার্ভারে। তবে এরই মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে স্থাপিত ১ হাজার ৮৮০টি ক্যামেরার মাধ্যমে প্রতিমুহূর্তের চিত্র মনিটরিং করছে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিগগিরই ৩৬৪টি পয়েন্টে বসছে আরও ১০০০ উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরা। জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে গুলশান-১, গুলশান-২ গোলচত্বর, কাকলী থেকে এয়ারপোর্ট রোড ও প্রগতি সরণির একাধিক পয়েন্টে বিশেষায়িত সফটওয়্যার-সংবলিত এ ধরনের ক্যামেরা স্থাপনের অনেক সুফল পেয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। দিন দিন অপরাধ এবং অপরাধীদের বহুমাত্রিকতার কারণে পর্যায়ক্রমে পুরো রাজধানীতেই অত্যাধুনিক ক্যামেরা স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘অপরাধীদের নজরদারিতে রাখতে পর্যায়ক্রমে পুরো রাজধানীকেই সিসিটিভির নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে স্থাপিত ক্যামেরাগুলো অনেক অপরাধ উন্মোচনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। শিগগিরই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আরও ৫০০ ক্যামেরা বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।’

তিনি বলেন, ‘রাজধানীবাসীর জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করারই আমাদের মূল দায়িত্ব। আর বর্তমানে প্রযুক্তিগত অপরাধের হার বাড়ছে। বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করছি।’

জানা গেছে, এএনপিআর সফটওয়্যার ছাড়াও ‘বুলেট’ এবং ‘পিটিজেড’, ‘এএনপিআর’ ব্র্যান্ডের মোট ১০০০ ক্যামেরা বসানো হচ্ছে ৩৬৪টি পয়েন্টে। এর মধ্যে ১৯৪টি পয়েন্টে ৫০০টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। বাকি ৫০০টি ক্যামেরা ১৭০টি পয়েন্টে স্থাপন করবে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত ‘আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় কমিটি’ (এলওসিসি)। রাজউক, ডিএমপি, ডেসকো, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধি এবং গুলশান সোসাইটি, গুলশান ইয়ুথ ক্লাব, বারিধারা সোসাইটি, নিকেতন সোসাইটি, বনানী সোসাইটির সভাপতি ও সেক্রেটারিকে নিয়ে গঠিত হয়েছে এলওসিসি নামের একটি কমিটি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই কমিটির মাধ্যমে রাজধানীবাসীকে নিরাপদ রাখতে বিভিন্ন সময় দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকে সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে। তাদের অনুদান ও সহায়তার মাধ্যমেই বিভিন্ন দফায় গুলশান, বারিধারা, নিকেতন, বনানী এলাকার বাইরেও বিভিন্ন পয়েন্টে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে। একাধিক সূত্র বলছে, সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. জাভেদ পাটোয়ারী ২০১৮ সালের শুরুতেই সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের উদ্দেশে ডিএমপির নিরাপত্তা ও উন্নয়নের জন্য পুলিশের কয়েকটি ফান্ড থেকে সমন্বয় করে ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেন। ওই অর্থেই তিন ধরনের ৬২৫টি ক্যামেরা কেনে ডিএমপি। ২০২১ সালের মে মাসে এসব ক্যামেরা সরবরাহ করে স্মার্ট টেকনোলজি নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ৪০০টি বুলেট, ১০০টি পিটিজেড ও ১২৫টি এএনপিআর। পরে ১৯১টি পয়েন্টে এসব ক্যামেরা স্থাপন করে ফাইবার অ্যাট হোম নামের একটি প্রতিষ্ঠান। খরচ হয় ৫ কোটি টাকা। শিগগিরই এএনপিআর সফটওয়্যারটি যুক্ত হচ্ছে ১২৫টি ক্যামেরায়। ডেভ জোন নামের একটি প্রতিষ্ঠান বিশেষ এই সফটওয়্যারটি তৈরি করছে। রাজধানীর আবদুল গণি রোডে ডিএমপি কমান্ড সেন্টার থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে এসব ক্যামেরা। অন্যদিকে রাজধানীর গুলশান-২ নম্বরে পুরাতন গুলশান থানা ভবনের চতুর্থ তলায় স্থাপন করা হয়েছে এলওসিসির মনিটরিং ও কমান্ড সেন্টার। গুলশান বিভাগের উপকমিশনারের নেতৃত্বে একটি দল এই মনিটরিং সেন্টারের দায়িত্ব পালন করছে। সার্বিক দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন এলওসিসির দফতর সম্পাদক গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার রফিকুল ইসলাম। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, পাঁচটি সোসাইটির বাইরেও রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। শিগগিরই আরও ৫০০টির মধ্যে ২৫০টি সোসাইটিগুলোর বাইরে স্থাপন করা হবে।

সর্বশেষ খবর