রবিবার, ৫ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

মাদরাসাছাত্রীকে তিন তলা থেকে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহী মহানগরীর একটি মহিলা মাদরাসার ছাত্রীকে নির্যাতন করে তিন তলা থেকে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পরে গুরুতর আহত ওই ছাত্রীকে চিকিৎসা না দিয়ে মাদরাসার একটি কক্ষে তিন ঘণ্টা তালাবদ্ধ করে রাখেন মাদরাসা কর্তৃপক্ষ। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ঘরের দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করে। গতকাল বেলা ১১টার দিকে নগরীর লক্ষ্মীপুর ভাটাপাড়ার কামাল খাঁ রোডে তাহফিজুল কোরআন মহিলা মাদরাসায় এ ঘটনা ঘটে। আহত হালিমা খাতুন (৯) নগরীর শ্রীরামপুর নদীর ধার এলাকার রিকশাচালক বাদশা আলীর মেয়ে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে নওগাঁর সাপাহার উপজেলার আলী আহম্মেদের ছেলে হাফেজ মো. সানাউল্লাহ ও তার স্ত্রী জাকিয়া পারভীন রাজশাহীতে এসে দুটি হাফেজি (বালক ও বালিকা) মাদরাসা চালু করেন। ‘জান্নাতুল ফিরদাউস হাসিনা হাফিজিয়া মাদরাসা’ ও ‘তাহফিজুল কোরআন মহিলা মাদরাসা’ নামে এ দুটি প্রতিষ্ঠান পাশাপাশি চালু করেন। তিন তলাবিশিষ্ট একটি ভবনের ওপরতলার তিনটি ছোট কক্ষের একটিতে ওই শিক্ষক দম্পতি বসবাস করেন। আর বাকি দুটি কক্ষে ৩৫-৪০ জন ছাত্রীকে কোরআনের হাফেজ বানানোর জন্য গাদাগাদি করে রাখা হয়।

স্থানীয়রা জানান, বাইরে যাতে কোনো ছাত্রী বের হতে না পারে সেজন্য সব সময়ই তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। ছাত্রীদের মাঝেমধ্যেই নির্যাতন করা হয় বলেও অভিযোগ আছে। মাসখানেক আগে নির্যাতনের শিকার হালিমা খাতুন মাদরাসা থেকে বাড়ি চলে যায়। তিন-চার দিন আগে ছাত্রীর মা রুপা বেগম তাকে জোর করে মাদরাসায় রেখে যান। প্রত্যক্ষদর্শী জুয়েল, আল আমিনসহ ভাটাপাড়ার বেশ কয়েকজন জানান, বেলা ১১টায় ওই ছাত্রী তৃতীয় তলার একটি কক্ষের জানালার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে নিচে পড়ে যায়। কিছুক্ষণ পর তিন তলা থেকে কয়েকজন নারী তড়িঘড়ি নেমে এসে ওই ছাত্রীকে তুলে মেডিকেলে নিয়ে যান। সাড়ে ১১টার দিকে তাকে হাসপাতালে ভর্তি না করিয়ে ওই শিক্ষকের কক্ষে (মাদরাসা কক্ষের পাশের কক্ষ) নিয়ে এসে তালাবদ্ধ করে রাখেন। পরে খবর পেয়ে রাজপাড়া থানা পুলিশ গিয়ে দরজা খুলে দিতে বলে। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে পুলিশ ওই কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে অনুরোধ জানালেও শিক্ষক জাকিয়া দরজা খুলে দেননি। ২টার দিকে পুলিশ সিটি কাউন্সিলর মো. নুরুজ্জামান টুকুর উপস্থিতিতে দরজা ভেঙে আহত ছাত্রীকে উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করে। কাউন্সিলর নুরুজ্জামান টুকু বলেন, ‘ঘটনা শোনার পর আমি নিজে সেখানে গিয়ে দরজা খুলতে বলি। কিন্তু ভিতর থেকে দরজা খুলে দেওয়া হয়নি। পরে পুলিশ দরজা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যে জানালার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে ওই ছাত্রী পড়ে গেছে বলে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন, জোরপূর্বক ঠেলে ফেলে না দিলে কোনোভাবেই গ্রিলের ওই ফাঁক দিয়ে কেউ পড়ে যেতে পারবে না। অবশ্যই নির্যাতন করে ছাত্রীটিকে ফেলে দেওয়া হয়েছে।’ তবে মাদরাসার শিক্ষক জাকিয়া পারভীনের দাবি, ‘ছাত্রীদের পড়াচ্ছিলেন। এ সময় পালানোর উদ্দেশ্যে কাউকে না জানিয়েই পাশের কক্ষের জানালার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে হালিমা লাফ দেয়। এতে সে সামান্য আহত হয়। পরে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে মাদরাসায় নিয়ে আসা হয়।’

রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘খবর পেয়ে তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে ফোর্স পাঠাই। প্রায় আড়াই ঘণ্টা চেষ্টার পর দরজা ভেঙে আহত ছাত্রীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ভুক্তভোগী ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ করা হয়নি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর