রবিবার, ৫ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

প্রেমের টানে গাজীপুরে আমেরিকার যুবক

গাজীপুর প্রতিনিধি

প্রেমের টানে গাজীপুরে আমেরিকার যুবক

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সোশ্যাল ডেটিং অ্যাপে পরিচয়। তারপর প্রেম। আর প্রেমের টানে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে উড়ে গাজীপুরে এসেছেন মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের ক্যানসাস সিটির নাগরিক রাইয়ান কফম্যান। ইতোমধ্যে তিনি কনের পরিবারের সম্মতিতে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। কনে সাইদা ইসলাম গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বাসন থানার ভোগড়া মধ্যপাড়া এলাকার মোশারফ হোসেন মাস্টারের নাতনি ও মৃত সিকন্দার আলীর মেয়ে। বিয়ের কথা শুনে আশপাশের লোকজন গাজীপুরে সাইদার নানাবাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন। কনের নানা মোশারফ হোসেন মাস্টার জানান, ঢাকার দনিয়া এলাকার বাসিন্দা সিকন্দার আলী ছিলেন তার মেয়েজামাই। তিনি ২০১৯ সালে মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর সাইদার মা সাইদা ও তার ছোট বোনকে নিয়ে ঢাকা থেকে চলে আসেন তার কাছে। ভোগড়া মধ্যপাড়ায় নানার বাড়িতেই সাইদা মা ও বোনকে নিয়ে বসবাস করছেন। বাবা মারা যাওয়ার এক বছর পর ২০২০ সালে মানবিকে স্নাতক করেন সাইদা। কনে সাইদা জানান, ২০২১ সালের এপ্রিলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (সোশ্যাল ডেটিং অ্যাপ) প্রথম পরিচয় রাইয়ান কফম্যানের সঙ্গে। তারা নিজেদের ফোন নম্বর, ফেসবুক আইডি ও ঠিকানা বিনিময় করেন। এর পর থেকে নিয়মিত যোগাযোগ হতো তাদের মধ্যে। ফেসবুক, ফোন নম্বরে ও ভিডিও কলে কথা বলতে বলতে নিজেরা আরও ঘনিষ্ঠ হন এবং দুজন দুজনকে ভালোবেসে ফেলেন। প্রায় এক বছর তারা এভাবে প্রেম করেন। শেষে দুজন সিদ্ধান্ত নেন বিয়ে করার। রাইয়ান বিয়ে করার জন্য তার দেশেই খ্রিস্টধর্ম ত্যাগ করে যথানিয়মে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। পরে তার ও সাইদার পরিবারের সম্মতিতে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে উড়ে গত ২৯ মে বাংলাদেশে পৌঁছান। ওই দিনই দুজনের প্রথম দেখা হয়। সাইদার সঙ্গে সোজা গাজীপুরে সাইদার নানাবাড়িতে ওঠেন রাইয়ান কফম্যান। সামাজিক ও ধর্মীয় রীতি অনুয়ায়ী বিয়ের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেন তারা। তিনি এখন মোশারফ মাস্টারের বাড়িতেই অবস্থান করছেন। বাংলাদেশে আসার আগেই বিয়ের গয়না, কাপড়-চোপড়সহ মোবাইল ফোন কেনার জন্য সাইদার কাছে টাকা পাঠান রাইয়ান। রাইয়ান বাংলাদেশে আসার আগেই ওই টাকা দিয়ে বিয়ের প্রয়োজনীয় কেনাকাটাও সম্পন্ন করেন সাইদা। সাইদা ইসলাম বলেন, ‘রাইয়ানকে দেখার পর আমাদের পরিবারের তাকে পছন্দ হয়। ও আমাকে বিদেশ নিয়ে যেতে চাইছে। আমিও যাব।’ তিনি বলেন, ‘এখানে (বাংলাদেশে) ঘরোয়াভাবেই আমাদের বিয়ের সবকিছু হয়েছে। ওর পরিবার আমার সম্পর্কে জানে। ওর পরিবার এখন আসতে পারেনি। ওখানে (যুক্তরাষ্ট্র) গিয়ে তাদের কোর্টে আবার বিয়ে হবে।’ এক প্রশ্নে সাইদা বলেন, ‘ওদের কালচার আমাদের থেকে যেহেতু অনেকটাই আলাদা, তাই খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করব। মনের মতো একজনকে পেয়েছি, অবশ্যই আমি খুশি।’ বিয়ের পর সাইদাকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার কথা জানান রাইয়ান। রাইয়ান জানান, আনুষঙ্গিক কাগজপত্র ঠিকঠাক, ভিসা প্রসেসিং করতে কয়েক মাস লাগতে পারে। এসব সম্পন্ন হলেই সাইদাকে আমেরিকা নিয়ে যাবেন। পরে সেখানেই তারা সংসারধর্ম পালন করবেন। রাইয়ান আমেরিকার নিজ এলাকায় একটি প্লাস্টিক পণ্য তৈরির কারখানায় অপারেটর পদে কাজ করেন। লেখাপড়া মাধ্যমিক স্কুল পর্যন্ত। তার মা-বাবা ছাড়াও এক বড় ভাই রয়েছেন। তারা সেখানে প্রত্যেকেই আলাদাভাবে বসবাস করেন। আমেরিকা থেকে সুদর্শন ৬ ফুট উচ্চতার এক যুবক ভোগড়ায় এসে এক তরুণীকে বিয়ে করেছেন এমন খবরে গতকালও উৎসুক মানুষকে মোশারফ মাস্টারের বাড়িতে ভিড় জমাতে দেখা যায়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর