মঙ্গলবার, ৭ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা
সিটি নির্বাচন

কুমিল্লা ভোটে যত চ্যালেঞ্জ

ভোটারদের কেন্দ্রে আনা, ইভিএম নিয়ে শঙ্কা, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা ও প্রচারে সমান সুযোগ নিশ্চিত করা

গোলাম রাব্বানী ও মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা থেকে

কুমিল্লা সিটি নির্বাচন প্রচার-প্রচারণায় জমে উঠেছে। ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে গেছে নগরী। ‘খেলা হবে’ স্লোগান প্রায় সব প্রার্থীর প্রচার মাইকে শোনা যাচ্ছে। প্যারডি গানে মেতে আছেন মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা। উৎসবমুখর পরিবেশ অলি-গলিতে। প্রার্থীদের মুখে মুখে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য থাকলেও সংঘাত-সহিংসতা নেই। ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা থাকলেও চিন্তা ভোটের দিনের পরিবেশ নিয়ে। ভোটের দিন ভোট কেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে অনেকেই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। ইভিএমে ভোট দেওয়া নিয়ে অনেকের মধ্যে ভয়ভীতি কাজ করছে। তারা ভাবছেন- এক প্রতীকে ভোট দিলে অন্য প্রতীকে চলে যাবে। ভোটারদের মতোই একজন মেয়র প্রার্থীও ভোটারদের কেন্দ্রে আসা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কুমিল্লা সিটি ভোটে ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আনা, ইভিএম নিয়ে ভোটারদের মধ্যে শঙ্কা-ভয়ভীতি দূর করা এবং নির্বাচনের দিন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখাটাই হবে বড় চ্যালেঞ্জ। তারা বলছেন, ভোটাররা শঙ্কা প্রকাশ করছেন, ভোটের দিন ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবেন কি না? ভোট যদি সুষ্ঠু হয় আর ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যেতে না পারেন, তবে সেই সুষ্ঠু ভোট দিয়ে কি হবে? এ ছাড়া নির্বাচনী মাঠে সব প্রার্থীর প্রচারে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করা নির্বাচন কমিশনের কাজ, প্রচারণা নিয়ে নানা অভিযোগ উঠলেও কমিশন এখন বড় কোনো অ্যাকশন নেয়নি। 

নির্বাচনী চ্যালেঞ্জের বিষয় কুমিল্লার ইতিহাস গবেষক আহসানুল কবির গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দীর্ঘদিন ভোট না দেওয়া এবং ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে মানুষের মধ্যে। এ জন্য ভোট কেন্দ্রে ভোটার আনা, সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান, কালো টাকার প্রভাব ঠেকানো, ভোটারদের মধ্যে ইভিএম-ভীতি দূর করা এবং সব প্রার্থীকে নির্বাচনী প্রচারে সমান সুযোগ তৈরি করে দেওয়াটাই এ সিটি নির্বাচনের বড় চ্যালেঞ্জ।

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের কুমিল্লা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলী আহসান টিটু গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলেও কুমিল্লার বিগত দুই সিটি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়েছে। এ নির্বাচনও ইসি নিশ্চিয়ই অংশগ্রহণমূলক করবে। এখনো নির্বাচন বিনষ্ট করার মতো কিছু চোখে পড়েনি। ইভিএম নিয়ে মানুষের মধ্যে কিছুটা সন্দেহ রয়েছে। এটা দূর করার দায়িত্ব ইসির। ভোটের চ্যালেঞ্জের বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনে কালো টাকা, পেশিশক্তি যেন প্রভাব ফেলতে না পারে সেদিকে ইসিকে দৃষ্টি দিতে হবে।  কুমিল্লা মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অচিন্ত্য দাস টিটু বলেন, ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আনা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ইভিএমের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে বেশি বেশি প্রচার চালাতে হবে। এবারের নির্বাচনে মানুষ অনেকটাই চুপচাপ রয়েছে।

এদিকে গতকাল কুমিল্লার আদালত, দিগাম্বরীতলাসহ বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা করেন আওয়ায়ী লীগের মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত। বিকালে তিনি গুপ্ত জগন্নাথ মন্দির প্রাঙ্গণে পথসভা করেন। এ সময় তিনি বলেন, গত দুর্গাপূজায় নগরীর নানুয়াদিঘির পাড়ে যে দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে তার সঙ্গে তৎকালীন মেয়র মনিরুল হক সাক্কু ও তার পিএস জড়িত। তিনি যদি সরাসরি জড়িত না থাকতেন তাহলে ঘটনাটা এতদূর যেত না। ভোটের জন্য তিনি হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভাই-বোনদের পেছনে পেছনে ঘুরছেন। কিন্তু কুমিল্লার হিন্দু সম্প্রদায় মনিরুল হক সাক্কুর সেই দিনের কথা ভুলে যাননি।

এদিকে কুমিল্লা নগরীর ১ নম্বর ওয়ার্ডের ভাটপাড়া চৌমহনী থেকে গণসংযোগ শুরু করেছেন কুমিল্লা সিটির সাবেক মেয়র ও স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু। রিফাতের অভিযোগের বিষয়ে পরে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, রিফাত সাহেব দুর্গাপূজার ঘটনা নিয়ে আমাকে অভিযুক্ত করে কথা বলেন। তার জানার কথা দুর্গাপূজার ঘটনা নিয়ে তদন্ত চলছে। এখনো তদন্ত শেষ হয়নি। তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই তিনি বলে দিলেন আমি দায়ী। তিনি বলেন, আমার নেতা-কর্মী ও অনেক ভোটারকে মোবাইলে ভয়ভীতি দেওয়া হচ্ছে। অনেকেই ভোট কেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। কুমিল্লা নগরীর শাসনগাছাসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার। তিনি বলেন, দুর্গাপূজার ঘটনা ক্ষমতাসীন দলের নেতা হিসেবে রিফাত সাহেব এবং নগরের তৎকালীন মেয়র হিসেবে সাক্কু সাহেব কেউই দায় এড়াতে পারবে না। নিরপেক্ষ তদন্তেই সবকিছু বের হয়ে আসবে।

এমপি বাহারের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ সাক্কুর :  কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মো. মনিরুল হক সাক্কু। গতকাল রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরীর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি। অভিযোগে সাক্কু বলেছেন, নির্বাচনী এলাকায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অর্থাৎ বহিরাগতদের আনাগোনা ও চলাচল দিন দিন বেড়েই চলছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে মহানগর দলীয় কার্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মাদরাসার প্রতিনিধিদের একত্রিত করে কার্যক্রম চালাচ্ছেন। সভা ও আলাপ-আলোচনা করে বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র নিয়ে নির্দেশনা দিচ্ছেন। এতে সাধারণ মানুষ ও ভোটারদের মধ্যে আতঙ্কও সৃষ্টি করা হচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে স্থানীয় এমপির নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান এবং নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা বন্ধ করার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে রিটার্নিং অফিসারকে তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন।

৩০ লাখ টাকা জরিমানা : কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচন উপলক্ষে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ৩০ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এ ছাড়া সিটির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গতকাল থেকে মাঠে রয়েছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয় জানিয়েছেন কুমিল্লা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) এম তানভীর আহমেদ।

সর্বশেষ খবর