মঙ্গলবার, ৭ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

বাড়ছে ব্যাংক ঋণে নির্ভরতা

১ লাখ ১ হাজার কোটি টাকার টার্গেট

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বাড়ছে ব্যাংক ঋণে নির্ভরতা

চলতি অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ গ্রহণের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। সরকারের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এ খাত থেকে ঋণ গ্রহণের পরিমাণ বেড়ে গেছে। ফলে অভ্যন্তরীণ উৎসের এই অন্যতম খাত থেকে সংশোধিত বাজেটে ঋণের নতুন লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৮৭ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। অন্যদিকে নতুন যে বাজেট আসছে, সেখানে ব্যাংক ঋণের লক্ষ্য আরও বেড়ে লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই খাত থেকে ১ লাখ ১ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্য ধরা হতে পারে, যা চলতি অর্থবছরের ঘোষিত বাজেটের চেয়ে ২৫ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা বেশি। সরকারের ব্যয় সামাল দিতেই অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এই ঋণ গ্রহণের পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

শিল্পোদ্যোক্তারা বলছেন, ব্যাংকিং খাতে তারল্যের অভাব রয়েছে। এর ফলে বেসরকারি খাতের জন্য এমনিতেই ঋণপ্রাপ্তি কঠিন হয়ে যাবে। নতুন বাজেটে সরকারের ব্যাংক ঋণে নির্ভরতা বাড়লে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ আরও বাধাগ্রস্ত হবে। নিট তৈরি পোশাক খাতের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এমনিতেই ডলারের বিপরীতে টাকার মান ধরে রাখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে ডলার বিক্রি করে নগদ তারল্য তুলে নিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সরকার যদি ব্যাংক খাতে ঋণ গ্রহণের পরিমাণ বাড়ায় তবে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ আরও কমে যাবে। যেহেতু সামনের দিনগুলোতে রাজস্ব আদায় চ্যালেঞ্জ হবে, সে কারণে সরকারের উচিত ব্যায় সংকোচন নীতি গ্রহণ করা। ব্যাংক ঋণ না বাড়িয়ে বরং অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে আয়-ব্যয়ে ভারসাম্য আনা উচিত।

অভ্যন্তরীণ উৎসে ঋণ বাড়ছে : চলতি বাজেটে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ গ্রহণের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে ঋণ ধরা হয় ৩৭ হাজার কোটি টাকা প্রায়। নতুন বাজেটে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ গ্রহণের পরিমাণ ধরা হতে পারে ১ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে ঋণের টার্গেট হতে পারে ৪০ হাজার কোটি টাকা। প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নতুন বাজেটে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ গ্রহণের পরিমাণ বাড়ছে প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকেই অতিরিক্ত নেওয়া হবে ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি, বাকি ৩ হাজার কোটি টাকা আসবে ব্যাংকবহির্ভূত খাত সঞ্চয়পত্র ইত্যাদি থেকে। নতুন বাজেটে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ গ্রহণের হার জিডিপির ২ দশমিক ২ শতাংশ (চলতি বাজেটের প্রাক্কলন) থেকে বেড়ে ২ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, করোনা মহামারি সামাল দিতে বিভিন্ন খাতে প্রণোদনা ঋণ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অতিরিক্ত মূল্যে জ্বালানি, সার ও খাদ্য আমদানির কারণেও সরকারের ব্যয় বেড়েছে। অতিরিক্ত ব্যয় সামাল দিতে সরকার অভ্যন্তরীণ উৎসের দিকেই বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। কারণ ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় সামনের দিনগুলোতে বৈদেশিক খাত থেকে ঋণ গ্রহণ ব্যয়বহুল হয়ে উঠতে পারে।

বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণের হার কমছে : চলতি অর্থবছরে বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ গ্রহণের পরিমাণ ধরা হয়েছিল ১ লাখ ১ হাজার ২২৮ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এটি কমে ৮০ হাজার ২১২ কোটি টাকা হতে পারে। নতুন যে বাজেট আসছে সেখানে এই খাত থেকে ঋণ গ্রহণের পরিমাণ ধরা হতে পারে ১ লাখ ৩ হাজার ৪৬ কোটি টাকা। দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরে বৈদেশিক ঋণের প্রাক্কলন জিডিপির ২ দশমিক ৯ শতাংশ হলেও নতুন বাজেটে বৈদেশিক খাত থেকে ঋণ গ্রহণের হার কমে জিডিপির ২ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ মুহূর্তে বৈদেশিক উৎস থেকে বাজেট সহায়তার জন্য শর্তযুক্ত ঋণ গ্রহণ ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল হয়ে যেতে পারে। সে কারণেই অভ্যন্তরীণ উৎসের দিকে ঝুঁকছে সরকার। তবে অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে যেহেতু বেসরকারি খাতও ঋণ গ্রহণ করে থাকে, সে কারণে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণের পরিমাণ বাড়াতে পারে। এক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের যে একক সীমা রয়েছে সেটি পুনর্মূল্যায়ন করা যেতে পারে।

সর্বশেষ খবর