মঙ্গলবার, ৭ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

হাবিবের রোবট কাজ করবে রেস্টুরেন্টে

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

হাবিবের রোবট কাজ করবে রেস্টুরেন্টে

দুই বছর গবেষণা শেষে লালমনিরহাটের আহসান হাবিব তৈরি করেছেন রোবট। যেটি কাজ করবে রেস্টুরেন্টে। এটি সামনে ও পেছনে হাঁটতে পারে। বাংলা ও ইংরেজিতে প্রশ্ন করলে উত্তর দিতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দেশের অনেক মন্ত্রী-এমপির নাম বলতে পারে। ভারী জিনিসপত্র বহন করতে পারবে। করতে পারবে হ্যান্ডশেক। তরুণ গবেষক আহসান হাবিবের বাড়ি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের মানিক বাজার এলাকায়। ছোটবেলা থেকেই তার চিন্তা এমন কিছু বানাবেন, যা বিশ্বে নিজ দেশকে পরিচিত করে তুলবে। ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ভিডিও দেখে মাথায় আসে রোবট তৈরি করার।

হাবিব কালীগঞ্জ করিম উদ্দিন পাবলিক কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির মানবিক শাখায় পড়েন। তার বাবার নাম মজু মিয়া। পরিবারের দুই ভাই, দুই বোনের মধ্যে হাবিব ছোট। ২০১৮ সালে হাবিবের বাবা ইন্তেকাল করেন। হাবিব ও তার বড় ভাই খাইরুল ইসলামের ওপর আসে সংসারের দায়িত্ব। বাড়িতে বসে টিউশনি শুরু করেন হাবিব। যে টাকা আসত, তা দিয়ে বিভিন্ন সময় সার্কিটসহ রোবট তৈরির জিনিসপত্র কিনতেন। এসব দেখে প্রতিবেশীরা হাবিবকে অনেকটাই পাগল ভাবতেন। কিন্তু তিনি মানুষের কথা না শুনে গবেষণা চালিয়ে যান।

ইতোমধ্যে বিষয়টি জানাজানি হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ তার বাড়িতে ভিড় করছেন। নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান হয়েও রোবট তৈরি করেছেন, এ জন্য তাকে সবাই ধন্যবাদ দিচ্ছেন। যদিও আর্থিক সংকটের কারণে এখনো রোবটের পুরো কাজ শেষ হয়নি। টাকার সংস্থান হলে আগামী তিন মাসের মধ্যে উন্মুক্ত করতে পারবেন বলে জানান হাবিব।

জানা গেছে, হাবিব ছোট থেকেই মেধাবী। তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে পড়ে থাকতেন। তাকে নিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গর্ব করতেন। ২০১৭ সালের দিকে তুষভান্ডার আরএমএমপি সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ে পড়াকালীন বিদ্যালয় তহবিলের টাকায় কাঠ দিয়ে একটি রোবট তৈরি করেন হাবিব। ওই সময় লালমনিরহাট জেলা বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি মেলায় রোবটটি নিয়ে অংশ নিলে তিনি প্রথম হন। এরপরই তার আগ্রহ আরও বেড়ে যায়।

তরুণ গবেষক আহসান হাবিব বলেন, বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে পরিচিত করতেই আমার এই ক্ষুদ্র চেষ্টা। আমার এ কাজে সাহস জুগিয়েছেন আমার মা ও বড় ভাই। রোবটটি রেস্টুরেন্টে কাজ করার উপযোগী করে বানিয়েছি। মানুষের সঙ্গে কথা বলবে, ভারী খাবার বহন করবে। যে কোনো প্রশ্নের উত্তর দেবে। এখনো আমি রোবটটির পুরোপুরি কাজ শেষ করিনি। অর্থের কারণে কাজ বন্ধ রেখেছি।

তিনি আরও বলেন, যে টাকা আয় করি, সেটি দিয়ে কাজ চলমান রেখেছি। আশা করছি দ্রুত মানুষের কাছে রোবটি উন্মুক্ত করতে পারব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও লালমনিরহাট-২ (কালীগঞ্জ-আদিতমারী) আসনের সংসদ সদস্য সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদসহ দেশবাসীর কাছে আমি সহযোগিতা চাই।

আহসান হাবিবের মা খালেদা বেগম বলেন, হাবিবের বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের ভার তাদের দুই ভাইয়ের ওপর পড়ে। এরপরও সারা দিনের ক্লান্তি শেষে তার চিন্তাভাবনা তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে। সেই পরিশ্রমের পর আজ সে রোবট তৈরি করেছে। গ্রামের মানুষ তাকে নিয়ে এখন গর্ব করছে। বিষয়টি আমার খুব ভালো লেগেছে। দোয়া করি হাবিব অনেক বড় হোক।

প্রতিবেশীরা জানান, হাবিব যখন রোবট তৈরির কাজ শুরু করেন, তখন তারা ভেবেছিলেন মা-বাবার টাকা নষ্ট করছেন। কিন্তু এখন তার সফলতা দেখে তাদের ভুল ভেঙেছে। কালীগঞ্জ করিম উদ্দিন পাবলিক কলেজের শিক্ষক ইমান আলী জানান, হাবিব ছোটবেলা থেকেই মেধাবী। সব ধরনের পরীক্ষায় প্রথম হতো।

সর্বশেষ খবর