বুধবার, ৮ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

আমাকে আইন শেখাতে আসবেন না : আইনমন্ত্রী

আইন বাস্তবায়ন না হওয়ার অভিযোগ বিএনপির হারুনের

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘সুপ্রিম কোর্ট জাজেস বিল উত্থাপনের আগে বিএনপি সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদের আপত্তির জবাব দিতে গিয়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক  বলেন, ‘আমাকে আইন শেখাতে আসবেন না। মাননীয় স্পিকার, আমি আপনার মাধ্যমে বলতে চাই- উনি যে বিচারের কথা বললেন, আপনি কি ভুলে গেছেন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘটনার কথা। জাতির   পিতা বঙ্গবন্ধুসহ তাঁর পরিবারের ১৭ জন সদস্যকে হত্যার পরে কি বিচার হয়েছিল? তাদের বিচার করা দরকার ছিল কি না? উনারা এখন কী বলবেন আমি জানি না, হয়তো বা বলবেন ইনডেমনিটি অর্ডার করে বন্ধ করা হয়। বিচার পাওয়া বন্ধ করেছিলেন তারাই। আর এখন তাদের কাছ থেকে বিচার শিখতে হবে? এখন হয়তো তারা বলবেন এটা খন্দকার মোশতাক করেছিলেন। তারা ক্ষমতায় ছিলেন ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত। বারবার তারা (বিএনপি) ক্ষমতায় এসেছিলেন কিন্তু ইনডেমনিটি তোলেন নাই। আর এখন উনারা আইন শেখান। তার কাছ থেকে আমাকে আইন শিখতে হবে...?’

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল সংসদের ১৮তম (বাজেট) অধিবেশনের বৈঠকে ‘সুপ্রিম কোর্ট জাজেস বিল উত্থাপনের আগে আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এর আগে বিএনপি সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ আওয়ামী লীগ সরকারের ঘন ঘন আইন পাসের উল্লেখ করে বলেন, আমি ‘সুপ্রিম কোর্ট জাজেস বিল’-এর বিরোধিতা করছি না। তবে সরকার নিজেদের সুবিধার জন্য প্রায়শ সংসদে বিল পাস করে যাচ্ছে। কিন্তু যেসব আইন হচ্ছে তার বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আইনের ব্যত্যয় ঘটছে। আইনের বৈষম্য ঘটছে। এ সময় পবিত্র কোরআন থেকে ন্যায়বিচার সংক্রান্ত সুরা মায়েদার আয়াত উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, যারা নিজেরা খেয়ালখুশি মতো আইন করেন, কিন্তু আইনের বাস্তবায়ন হয় না। কিছুদিন আগে আমরা দেখলাম জাতীয় সংসদের সদস্য হাজী সেলিম দন্ডিত হওয়া সত্ত্বেও চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে গেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তিনি আইন মেনেই গেছেন। অথচ সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিদেশে চিকিৎসার জন্য বারবার আবেদন করেও কোনো লাভ হয়নি। আদালত বলেছে, এ ধরনের কোনো সুযোগ নেই। এখানে আইনের বৈষম্য করা হয়েছে। এ সময় হারুন আরও বলেন, আমরা দেখছি সরকারি দলের কর্মসূচি পুলিশের প্রহরায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে কিন্তু বিরোধী দলকে কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হচ্ছে না। এখানে আইনের শাসন বলে কিছু নেই, তাহলে এ আইন করে কী লাভ। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ঘটনা ঘটেছে একটি সভ্য রাষ্ট্রে এ ধরনের ঘটনা কীভাবে ঘটে। আমরা দেখেছি একজন ছাত্রীকে কীভাবে ছাত্রনামধারী গুন্ডারা নির্যাতন করেছে, তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সরকার যে আইন করছে এ আইন কার জন্য করছে? এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বিএনপির এই সংসদ সদস্যকে বারবার থামতে বলেন। স্পিকার বলেন, আপনার আপত্তিটা কোথায়? বিলটির বিষয়ে কোনো বক্তব্য থাকলে তা নিয়ে আলোচনা করেন। কিন্তু হারুন নিজের মতো বক্তব্য রাখতে থাকেন। এ সময় সংসদে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। এর মধ্যেও হারুন বলেন, এ বিলে বিচারকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হচ্ছে তাতে আমার আপত্তি নেই। তবে বিচারব্যবস্থাকে হরণ করা হচ্ছে এবং বিচারব্যবস্থার ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ আসছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

প্রতিউত্তরে সংসদে দাঁড়িয়ে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ যে কথা বললেন, তার কথা শুনে হাসব না কাঁদব এটা আমি বুঝতে পারছি না। তার কারণ, তিনি যে জ্ঞান দিলেন তাতে আমি বুঝে উঠতে পারছি না, আমি আইন সম্পর্কে কিছু বুঝি কি না? আইন সম্পর্কে বিএনপি আমলে যা হতো তাতে তার নিজেরই বোধোদয় হওয়া উচিত। আইনমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এখন বলতে পারি জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডের বিচার হয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হয়েছে, জেলহত্যার বিচার চলছে। বিচারপতিরা সাহস করে এই বিচার করায় আজ তাদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির আইন করা হচ্ছে। আর আপনারা আইন শেখাচ্ছেন। আমাকে বিএনপির কাছ থেকে আইন শিখতে হবে?’ এর পরে আইনমন্ত্রী সংসদে বিলটি উত্থাপন করেন।

সর্বশেষ খবর