বুধবার, ৮ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

মাঙ্কিপক্স সন্দেহে তুরস্কের নাগরিক ঢাকার হাসপাতালে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকায় আসা তুরস্কের এক নাগরিক মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তাকে রাজধানীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। তবে ওই ব্যক্তির এখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ হয়নি। দেশে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্তের কোনো রোগী নেই বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম প্রধান স্বাক্ষরিত এক বার্তায় বলা হয়েছে, ‘দেশে বিদেশি একজন নাগরিকের দেহে মাঙ্কিপক্সের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে’ সংক্রান্ত যে তথ্যটি প্রচার হচ্ছে তা সঠিক নয়। দেশে মাঙ্কিপক্সে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যক্তি আক্রান্ত হন নি। ভবিষ্যতে কোনো ব্যক্তির আক্রান্তের ঘটনা কখনো ঘটলে তা প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হবে। এই মুহূর্তে দেশে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি নেই।’ বিমানবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ব্যক্তি তার্কিশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে গতকাল দুপুর ২টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। তুরস্কের ওই নাগরিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে ইমিগ্রেশন পার হওয়ার সময় মাঙ্কিপক্স ভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে তাকে বিমানবন্দর হেলথ সেন্টারে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে পাঠানো হয় মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে।

সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, ‘মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত সন্দেহে ওই ব্যক্তিকে বিকাল ৩টার দিকে আমাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এরই মধ্যে আইইডিসিআর ওই ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করেছে। আমরা ১০ বেডের আইসোলেশন ওয়ার্ডে তাকে রেখেছি। পিসিআর পরীক্ষার রিপোর্ট পেলে জানা যাবে, ওই ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষেই মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত কি না।’ তবে কবে নাগাদ পরীক্ষার ফলাফল জানা যাবে তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন বলেন, ‘বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা একজন বিদেশ ফেরত ব্যক্তি মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত বলে সন্দেহ করেছেন। বিষয়টি আইইডিসিআরকে জানানো হয়েছে। আমরা এখন তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার অপেক্ষায় আছি।’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) গত ৪ জুনের হিসাব অনুযায়ী, নতুন করে প্রাদুর্ভাবের পর আফ্রিকার বাইরে বিশ্বের মোট ২৭টি দেশে এ পর্যন্ত মাঙ্কিপক্সের রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। রোগীর সংখ্যা ৭০০ ছাড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, অনেকটা গুটিবসন্তের মতো হলেও মাঙ্কিপক্সের উপসর্গ মৃদু। শুরুতে জ্বর, মাথাব্যথা, শরীরব্যথা, ক্লান্তি, অবসাদ ইত্যাদি দেখা দেয়। ফুলে যেতে পারে লসিকা গ্রন্থি। এক থেকে তিন দিনের মধ্যে সারা গায়ে ফুসকুড়ি ওঠে। মুখে শুরু হয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এই ফুসকুড়ি। বসন্তের মতোই প্রথমে লাল, তারপর ভিতরে জলপূর্ণ দানা, শেষে শুকিয়ে পড়ে যেতে থাকে। দুই থেকে চার সপ্তাহ স্থায়ী হয় এই রোগ। তারপর নিজে নিজেই সেরে যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তেমন বড় কোনো জটিলতা হয় না। ইউকে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস জানায়, মাঙ্কিপক্সে সংক্রমিত বেশির ভাগ রোগীই কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সেরে ওঠেন। তবে মাঙ্কিপক্স তেমন গুরুতর না হলেও হঠাৎ রোগটির প্রাদুর্ভাব বিজ্ঞানীদের উদ্বিগ্ন করেছে। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য নতুন নির্দেশনা দিয়েছেন। উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা সংক্রমিত ব্যক্তিদের তিন সপ্তাহ সঙ্গনিরোধে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

 

 

সর্বশেষ খবর