প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্বাচন হতে হবে স্বচ্ছ। ভোট নিয়ে কোনো কূটকৌশল সহ্য করা হবে না। তিনি বলেন, যদি (নির্বাচন) অংশগ্রহণমূলক না হয়, তাহলে প্রকৃত অর্থে সেটা নির্বাচন হয় না। ২০০টা বা ২৫০টা সিট যদি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হয়ে যায়, তাহলে হয়তো সরকার গঠন হবে, কিন্তু সেটার লেজিটিমেসি (বৈধতা) অনেক কমে যাবে। বিরোধী দলগুলোকে সাহস নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। দৃঢ়ভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে।
গতকাল নির্বাচন ভবনে পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে সংলাপ শেষে এ কথা বলেন তিনি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চলমান সংলাপের অংশ হিসেবে সকালে কমিশন নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংস্থার ২০ জন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেন।
পর্যবেক্ষকরা বলেছেন, নির্বাচনে বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্পৃক্ত করতে হবে। ভোটের মাঠে সহিংসতা ও অনিয়মের কারণে ভোট অংশগ্রহণমূলক হয় না। সহিংসতা কমাতে পারলে ভোটে নারীর অংশগ্রহণ বাড়তে পারে। এ ছাড়া ডিসিদের রিটার্নিং কর্মকর্তা না করার পরামর্শ দিয়েছেন অনেকেই। পর্যবেক্ষকদের উদ্দেশ্যে সিইসি বলন, আমাদের নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন অস্বচ্ছতার অভিযোগ আসছে, সে অস্বচ্ছতাকে দুরীভূত করতে আপনারা একটা গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ হতে পারেন। যার মাধ্যমে নির্বাচনে বিরাজমান অস্বচ্ছতায় আমরা আরও স্বচ্ছতা আনতে পারি। কাজেই অবজারভেশন হচ্ছে আরও প্রশিক্ষিত হতে হবে। এ সংলাপে মুভ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সাইফুল হক নির্বাচনের সময় নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ইন্টারনেট বন্ধ না করার পরামর্শ দেন। এ প্রসঙ্গ টেনে নির্বাচনকে অস্বচ্ছ করার জন্য যদি ইন্টারনেট ব্ল্যাক আউট করা হয় তাহলে তা সহ্য করা হবে না বলে মন্তব্য করেন সিইসি। নির্বাচনকে অস্বচ্ছ করার জন্য যদি ইন্টারনেট ব্ল্যাক আউট করা হয়, সে নির্বাচনকেও ব্ল্যাক আউট বা বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেন সিইসি।তিনি বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, নির্বাচন স্বচ্ছ হতে হবে। নির্বাচন নিয়ে কোনো কুটকৌশল করতে পারবেন না। যদি নির্বাচনকে আড়াল করার জন্য ইন্টারনেট ব্ল্যাক আউট করা হয় তাহলে আমাদের তরফ থেকে স্পষ্ট বক্তব্য থাকবে যে, সেটা টলারেট করা হবে না।
ভোটে ইভিএমের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে সিইসি জানান, ইভিএম খুবই সুবিধাজনক একটি জিনিস। সহিংস রূপ ধারণ করে ভোটের দিন ভোটের সময়। ভোট কেন্দ্রে যে সহিংসতা হয়, তা নিয়ন্ত্রণ করা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, ইভিএম মেশিন আমি এতদিন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিজেও বুঝেছি, যদি এটার স্বপক্ষে সমর্থন পাই, এর নেতিবাচক দিকগুলো সম্পর্কে সন্দেহ দূর করতে পারি, তাহলে এটার একটা যুক্তিসঙ্গত ব্যবহার করেও নির্বাচন কেন্দ্রগুলোকে সহিংস থেকে কিছুটা অহিংস করে তুলতে পারি।
পর্যবেক্ষকরা যা বললেন : দেশের ৩২ নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংস্থার প্রধানদের এ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হলেও এখানে ২০টি পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত হন। সংলাপ শেষে মানবাধিকার ও সমাজ উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যান গোলাম রহমান ভূঁইয়া বলেন, নির্বাচনে বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্পৃক্ত করতে হবে। ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশিদ বলেন, ভোটের মাঠে সহিংসতা ও অনিয়মের কারণে ভোট অংশগ্রহণমূলক হয় না। সহিংসতা কমাতে পারলে ভোটে নারীর অংশগ্রহণ বাড়তে পারে। জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, পর্যবেক্ষকদের মান বাড়াতে হবে।
তাদের মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। সংলাপে অংশ নেওয়া আবদুল আলীম বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য আপনারা প্রার্থিতা বাতিল করার যে উদ্যোগ নিয়েছেন সেটা চালু রাখতে হবে।