শুক্রবার, ১০ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

কুমিল্লায় কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা, ইভিএম প্রশিক্ষণে ব্যস্ততা

কুমিল্লা প্রতিনিধি

দেশে প্রথমবারের মতো নির্বাচন কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে ১০৫টি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা লাগানোর কাজ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ১২ জুনের মধ্যে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ শেষ হবে। এদিকে ইভিএমের প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন ২ সহস্রাধিক কর্মকর্তা। গতকাল এ প্রশিক্ষণ শুরু হয়।

কুসিক রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী বলেন, এবারই দেশে প্রথম কুমিল্লা সিটি নির্বাচনী ভোট কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা লাগানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করে নির্বাচন কমিশন। তা বাস্তবায়ন হবে শতভাগ। স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা জোরদারে সিসি ক্যামেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। জানা গেছে, এসব সিসি ক্যামেরার পর্যবেক্ষণে থাকবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য কমিশনাররা। এ ছাড়া সিসি ক্যামেরায় পুরো নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, ১২ জুনের মধ্যে সব কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা লাগানোর কাজ শেষ হবে। কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের ১০৫ কেন্দ্রের ৬৪০ বুথে ক্যামেরা লাগানো হবে। এ ছাড়া ক্যামেরায় ভোটারদের উপস্থিতিও পর্যবেক্ষণ করা হবে। তিনি জানান, কেন্দ্রে ও বুথে সিসি ক্যামেরা লাগানো হলেও ভোট দেওয়ার গোপন কক্ষ এ ক্যামেরার আওতামুক্ত থাকবে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এসব ক্যামেরা ভোটের আগের দিন রাত থেকে শুরু করে ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত চালু থাকবে। এ সময়ের মধ্যে কেন্দ্রের সব কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হবে। অন্যদিকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) হবে ভোট গ্রহণ। ভোট গ্রহণের আগে প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে কুসিক নির্বাচন কমিশন। গতকাল শুরু হওয়া প্রশিক্ষণ চলবে ১২ জুন পর্যন্ত। কুমিল্লা জিলা স্কুল ও ফয়জুন্নেছা বালিকা বিদ্যালয়ে সকাল ৯টায় প্রশিক্ষণ শুরু হয়। রিটার্নিং অফিসার মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী বলেন, ‘২ হাজার ১৬৫ জন অফিসার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন। ধাপে ধাপে এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যা করা দরকার আমরা সবই করছি।’

বৃষ্টি-জলাবদ্ধতায় চলছে গণসংযোগ, বাহাস : দিনের অধিকাংশ সময় জুড়ে ছিল বৃষ্টি। প্রচারণার আর মাত্র বাকি চার দিন। তাই বৃষ্টি আর জলাবদ্ধতা মাড়িয়েও চলছে প্রার্থীদের গণসংযোগ। সঙ্গে চলছে বাহাস।

গতকাল মহানগরীর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের তালতলা চৌমুহনীসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু। এ সময় তিনি বহিরাগতদের এনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে অভিযোগ এনে বলেন, ‘ভোটাররা কেন্দ্রে যাইতে না পারলে ভোট দিবে কেমনে। বাইরের ইউনিয়ন থেকে বহিরাগত লোক এনে কেন্দ্রের সামনে অরাজকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা করা হচ্ছে, যাতে ভোটাররা ভয়ে ভোট দিতে না আসেন।’

এদিকে ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাউবন্দসহ বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত। এ সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য ও মহানগরী আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকে দেওয়া নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন বাহার ভাইকে একটা নির্দেশনা দিয়েছে যে তিনি নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে জড়িত হতে পারবেন না। এ ছাড়া কুমিল্লায় থাকতে পারবেন না। এ আদেশের বিরুদ্ধে বাহার ভাই উচ্চ আদালতে রিট করেছেন। আদালত নির্বাচন কমিশনকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছেন। পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাহার ভাই নির্বাচনী মাঠে থাকবেন।’

অন্যদিকে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের তেলিকোনাসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার। এ সময় তিনি অন্য দুই মেয়র প্রার্থীকে উদ্দেশ করে বলেন, কুমিল্লার মানুষ পরিবর্তন চায়। সেজন্য মানুষ আমার সঙ্গে একত্র হয়েছে। আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা এত দিন মিলেমিশে কুমিল্লাটাকে লুটপাট করেছেন। তারা এখন নিজেরা পাতানো ম্যাচ খেলে মানুষকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন ভোটারদের আতঙ্কিত করার জন্য। তারা একজন আরেকজনকে চোর বলেন। তারা একজন আরেকজনকে স্টেডিয়ামে যাইতে বলেন। আমি বলি, আপনারা অজু করে মসজিদে এসে স্বীকার করুন কে বেশি চুরি করেছেন।’

কুসিক নির্বাচনে বিএনপি নেতা-কর্মীরা প্রচার-প্রচারণা চালালে বহিষ্কার : দল নির্বাচনে যাবে না, বিষয়টা আগে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। সেখানে দলের দুজন নেতা কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে লড়ছেন। তাঁদের দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য, সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু ও মহানগরী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার। এ নির্বাচনে তাঁদের পক্ষে কোনো নেতা-কর্মী প্রচার-প্রচারণা চালালে তাদের বিরুদ্ধেও দল ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। গতকাল কুমিল্লা প্রেস ক্লাবে স্বেচ্ছাসেবক দল আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভূঁইয়া এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, এ সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো ধরনের নির্বাচনে যাবে না। গত দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন পুরো বিশে^র কাছে প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। হুদা কমিশন তার উদাহরণ। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি জামির হোসেন, আবুল কালাম আজাদ, যুগ্মসম্পাদক জেড এম হাসান বিন জামিল সোহাগ, দফতর সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম, ক্রীড়া সম্পাদক এ বি এম মুকুল প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর