শুক্রবার, ১০ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

জাল নথিতে রিট তিনজনকে কোটি টাকা জরিমানা

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাল ডকুমেন্ট দিয়ে রিট করে আদালতের সময় নষ্ট করায় চাঁদপুরের আলোচিত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সেলিম খানসহ তিনজনকে কোটি টাকা জরিমানা করে রিট খারিজ করে দিয়েছেন হাই কোর্ট। গতকাল বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট এ আদেশ দেন। সেলিম খান ছাড়া বাকি দুই রিটকারী হলেন আবদুল কাদের খান ও জুয়েল। তিনজনের মধ্যে ইউপি চেয়ারম্যান সেলিমকে ৫০ লাখ এবং আবদুল কাদের ও জুয়েল নামে দুজনকে ২৫ লাখ টাকা করে জরিমানা গুনতে হবে। এর আগে মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলন কাণ্ডে আলোচিত হন ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম। চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে জমির মূল্য প্রাক্কলনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত বছর দুটি রিট করা হয়। ওই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত রুল জারি করেন। রুলের দীর্ঘ শুনানি শেষে গতকাল রিট খারিজ করে দেন হাই কোর্ট।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি, ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক ও মনিরুজ্জামান আসাদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাইনুল হাসান। পরে মাইনুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, আবেদনকারীরা কিছু জাল ডকুমেন্ট দিয়েছেন। আদালতের সময় নষ্ট করেছেন। এসব বিবেচনায় নিয়ে রুল খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে সেলিম খানকে ৫০ লাখ ও অন্য দুজনকে ২৫ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।

মামলার নথিসূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের খসড়া আইন মন্ত্রিসভা চূড়ান্তভাবে অনুমোদন করে। ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বিল পাস হয়। জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রশাসনিক অনুমোদন দেওয়া হয় ২০২১ সালের ৬ এপ্রিল। গত বছরের ৪ নভেম্বর চাঁদপুর জেলা প্রশাসন প্রস্তাবিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রায় ১৯৪ কোটি টাকার প্রাক্কলন প্রস্তুত করে অর্থ ছাড়ের জন্য উপাচার্য বরাবর চিঠি দেয়। একই বছরের ১৪ অক্টোবর জমির মূল্যহার পরীক্ষা ও সংগ্রহের জন্য ১৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন। কিন্তু জেলা প্রশাসনের প্রাক্কলন সংশোধন চেয়ে গত বছরের নভেম্বরে ভূমি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন মো. সেলিম খানসহ অন্যরা। পরে মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের কাছে ব্যাখ্যা জানতে চায়। চাঁদপুর জেলা প্রশাসন ব্যাখ্যা দিয়ে প্রতিবেদন পাঠায়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, মৌজা দর ধরে জমি অধিগ্রহণের দাম নির্ধারণ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাড়ে ৬২ একর জমির জন্য (মূল দামের তিন গুণ ধরে) সরকারের ব্যয় হবে প্রায় ১৯৪ কোটি টাকা। কিন্তু হঠাৎ উচ্চমূল্য দেখিয়ে যেসব দলিল করা হয়েছে, তা আমলে নিলে সরকারকে ৫৫৩ কোটি টাকা দিতে হবে। অর্থাৎ সরকারকে অতিরিক্ত দিতে হবে ৩৫৯ কোটি টাকা। এ অবস্থায় চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের ১৪ অক্টোবরের (মূল্যহার পরীক্ষায় কমিটি গঠন) এবং ৪ নভেম্বরের (১৯৪ কোটা টাকা প্রাক্কলন) স্মারকের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সেলিম খান ও আবদুল কাদের মিয়া রিট করেন। পাশাপাশি জুয়েলও রিট করেন। এক রিটে ৩০ নভেম্বর এবং আরেক রিটে ৬ ডিসেম্বর রুল জারি করেন হাই কোর্ট। গত ৩ মার্চ দুটি রিটে জারি করা রুলের ওপর একসঙ্গে শুনানি শেষ হয়।

 

 

সর্বশেষ খবর