২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি বারবার উঠে এলেও নিত্যপণ্যের বাজারে ‘আগুন’ জ্বলছেই। চাল, ডাল, আটা, তেল, সবজি, মাছ-মাংস, ডিম সবই বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। বাজেট পেশের এক দিনের মাথায় বাজারে পণ্যমূল্য খুব একটা হেরফের না হলেও ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা বলছেন, এক মাস ধরেই বাজারে বাজেটের প্রভাব রয়েছে। বাজেটে দাম বাড়তে পারে এমন ধারণায় গত ১৫ দিনেই অনেক পণ্যের দাম হু হু করে বেড়েছে। বোরো ধানের ভরা মৌসুমে চালের বাজারে আগুন জ্বলছে। গত ১০ দিনেই কেজিতে বেড়েছে ৪-৬ টাকা।
বাজেটে অর্থমন্ত্রী আটা, চিনি, মুড়িতে শুল্ক কমানোর ঘোষণা দিলেও বাজারে কমেনি দাম। গতকালও আগের দামে প্রতি কেজি চিনি ৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বোরো ধানের ভরা মৌসুমে পোকা ধরা সবচেয়ে খারাপ মানের মোটা আতপ চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৬-৪৮ টাকা কেজি। ভালো মানের প্রতি কেজি নাজিরশাইল চালের দাম উঠে গেছে ৮৫ টাকায়। খিলক্ষেতের খুচরা ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন, পাইকারি বাজারে দাম বেশি, অনেক সময় টাকা দিয়েও অনেক মাল পাওয়া যাচ্ছে না, তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। বাজেটে দাম বাড়তে পারে- এমন ধারণায় গত এক মাসে অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে। এক মাস আগে ২০০ গ্রাম বাটারের খুচরা দাম ছিল ২০০ টাকা। বর্তমানে ২৩০ টাকা। এখন দেখা গেল বাজেটে ঠিকই বাটারের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এদিকে যেসব পণ্যের দাম কমার কথা বলা হচ্ছে, পাইকারি বাজারে এখনো সেগুলোর দাম কমেনি। তাই বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।
গতকাল রাজধানীর খিলক্ষেত, কারওয়ানবাজার, বাড্ডা বাজার সরেজমিন ও কিছু অনলাইন শপ যাচাই করে দেখা গেছে, অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষের হাতের নাগালে নেই কোনো চাল। খুচরা দোকানে বিআর-২৮ চালের কেজি হয়েছে ৫৬-৫৭ টাকা। পাইজাম চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৫৬ টাকায়, মোটা আতপ চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৬-৪৮ টাকায়। চিকন মিনিকেট চাল ৭২-৭৪ টাকায়, মোট মিনিকেট ৬০-৬২ টাকায়, চিকন নাজিরশাইল ৮৩-৮৫ টাকায়, মোট নাজিরশাইল ৬৫-৬৬ টাকায়, ধরনভেদে আতপ চাল ৫৯-৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি। এদিকে গত ১৫ মে চালডাল ডটকম অনলাইন শপে প্রতি কেজি কাজল লতা চালের দাম ছিল ৫৮ টাকা কেজি। গতকাল বিক্রি হচ্ছিল ৬৪ টাকা কেজি। বাড্ডা এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, এত দামে জীবনে কখনো চাল কিনে খাইনি। এখন আর দোকানে গিয়ে চালের নাম বলি না। কোনটার দাম সবচেয়ে কম, সেটা জিজ্ঞাসা করি। বাড্ডা বাজারের চেয়ে আবার এলাকার মুদি দোকানে কেজিতে দাম ২-১ টাকা বেশি। একই এলাকার চায়ের দোকানদার রফিকুল বলেন, এক মাস আগে ৫০০ গ্রাম ড্রাইকেকের দাম ছিল ১২০ টাকা। এখন ১৬০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে এক প্যাকেট কেক কিনলে তাতে ১০ পিস থাকত। এখন ৮ পিস। তাই আমাকেও প্রতি পিসে ৩ টাকা বাড়িয়ে বেচতে হচ্ছে। স্বস্তি নেই মাছ-মাংসের বাজারেও। প্রতি কেজি হাড়সহ গরুর মাংস ৬৮০-৭০০ টাকা, হাড়ছাড়া ৮৫০ টাকা, খাসির মাংস ৯০০-৯৫০ টাকা, ছাগলের মাংস ৮০০-৮২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগির দামে পরিবর্তন আসেনি। ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫৫-১৬০ টাকায়। আর সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৯০-৩১০ টাকায়। ডিমের দাম বাড়ছে গত দুই মাস ধরেই। ফার্মের ডিম প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৪২-৪৫ টাকায়। প্রতি কেজি বড় রুই ৩৫০-৪০০ টাকা, মাঝারি রুই ৩০০-৩২০ টাকা, বোয়াল ৬০০-৬৫০ টাকা, বেলে ৪৫০-৬০০ টাকা, পাবদা ৪০০-৫৫০ টাকা, তেলাপিয়া ১৬০-১৭০ টাকায়, রূপচাঁদা ১১০০-১২০০ টাকায়, বড় পোয়া ৫৫০ টাকায়, লাল কোরাল ৬০০-৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সবজির মধ্যে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে গাজর, প্রতি কেজি ১৭০-১৮০ টাকা। গত সপ্তাহের মতো বরবটির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়, বেগুন ৪০-৫০ টাকায়, করলা ৫০-৬০ টাকায়, কাঁচা পেঁপে ৩৫-৪০ টাকায়, পটোল, ঢেঁড়স, ঝিঙে, চিচিঙ্গা প্রতি কেজি ৪০-৫০ টাকায়, কচুর লতি ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকানো আমদানি করা রসুনের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে কিছুটা কমে ১৫০-১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি রসুনের কেজি আগের মতো ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আলুর দাম সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকায়। আর পিঁয়াজ গত সপ্তাহের মতো ৩৫-৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ানবাজারের খুচরা মুদি ব্যবসায়ীরা বলেন, প্রতি বছরই বাজেট এলে খাদ্যদ্রব্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমে-বাড়ে। বাড়ার বিষয়টা এক মাস আগেই শুরু হয়ে যায়। বাজেটের সঙ্গে খুচরা ব্যবসায়ীদের সম্পর্ক নেই। পাইকারি বাজারে দাম বাড়লে আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। সুতরাং, দাম বাড়লে খুচরা ব্যবসায়ীদের কোনো লাভ নেই।